দক্ষতাই ভবিষ্যৎ: বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাতে তরুণদের সুযোগ

বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় ১১তম পর্ব।

ছবি: এআই/বন্ধুসভা

তথ্যপ্রযুক্তি বা এআইয়ের এই যুগে পেশাগত জীবনে ভালো অবস্থানে থাকতে হলে তরুণদের দক্ষতা বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। আপনি কোন দক্ষতা বাড়াচ্ছেন, সেটার চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো দক্ষতাটা সঠিকভাবে আয়ত্ত করছেন কি না। যতটুকু আপনি জানেন, সেটা সঠিকভাবে জানেন কি না। দক্ষতা জানা এবং সেটির ব্যবহার করতে পারতে হবে।

এ বিষয়ে অরেঞ্জ সলিউশনস লিমিটেডের সিইও ও টেক–বিশেষজ্ঞ এস শারাফী বলেন, ‘আপনি যে দক্ষতাটা শিখলেন বা যে সফটওয়্যার বানালেন, সেটা যদি বিক্রি করতে না পারেন, তাহলে ওই দক্ষতাটা আসলে কোনো মূল্য তৈরি করে না। এ জন্য বিক্রির দক্ষতা জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা, নেটওয়ার্কিং করা—মোটকথা বিক্রি করতে পারতে হবে।’

প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর ১১তম পর্বে আলোচক হিসেবে ছিলেন অরেঞ্জ সলিউশনস লিমিটেডের সিইও ও টেক–বিশেষজ্ঞ এস শারাফী। আলোচনার বিষয় ছিল ‘দ্য ফিউচার অব টেক ইন বাংলাদেশ: দ্য অপরচুনিটিস ফর ইয়ুথ’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ১৬ জুলাই রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভা জাতীয় পর্ষদের সহসভাপতি রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী।

দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ে এস শারাফী আরও বলেন, ‘এআই নিয়ে পড়াশোনা করছে সবাই, করবে। রোবোটিকসটাকে সম্ভাবনাময় মনে হচ্ছে। পাশাপাশি কোডিংয়ের ক্ষেত্রে, আসলে এআই শিখলে এর সঙ্গে যে ল্যাঙ্গুয়েজ বা কোডিংগুলো লাগে, সেটা আপনাকে করতেই হবে। আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, কোডিং একটা টুলস। আপনাকে আগে সমস্যাটা বুঝতে হবে। সমস্যাটা বুঝে যদি সেটা সমাধান করতে পারেন, আপনি যে কোডেই দক্ষ হোন না কেন, সেটা দিয়েই সমাধান করতে পারবেন।’

আরও পড়ুন

তরুণদের দ্বারা আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশের প্রযুক্তি খাত কীভাবে বদলে যেতে পারে—এমন প্রশ্নে এই টেক–বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘১০ বছর অনেক সময়। এই সময়ের মধ্যে প্রযুক্তির অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে যায়। এখন যে প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করছি, সেগুলোর কিছু কিছু না–ও থাকতে পারে। আবার দেখা গেল, হয়তো এ প্রযুক্তিই নতুনভাবে সামনে আসছে।’

আগামী ১০ বছরে প্রযুক্তির পরিবর্তনে এআই অনেক বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি। এস শারাফী বলেন, ‘মেশিন লার্নিং বা ব্লক চেঞ্জ, রোবোটিকস—এ জিনিসগুলো বড় ভূমিকা রাখবে। তরুণদের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। এর জন্য সঠিক প্রশিক্ষণ লাগবে, জ্ঞান লাগবে, দক্ষতা বাড়াতে হবে। এগুলো যদি আমরা সঠিকভাবে আয়ত্ত করতে পারি, তাহলে প্রযুক্তি যেটাই আসুক না কেন, কোনো সমস্যা হবে না। তরুণরা সেটা করতে পারবে।’

প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপ শুরু করার ক্ষেত্রেও তরুণদের পরামর্শ দিয়েছেন এস শারাফী। তিনি বলেন, ‘যে বিষয়টা নিয়েই আপনি স্টার্টআপ শুরু করেন না কেন, সেটা দ্রুত সময়ের মধ্যে মার্কেটে আনতে হবে। তারপর যত বেশি মানুষের কাছে এই স্টার্টআপের ব্যবহার বা এর সম্পর্কে জানাতে পারবেন, তত বেশি এটির সাফল্য বাড়তে থাকবে।’

‘এ ক্ষেত্রে একটি উদাহরণ দিতে পারি। আমি একটা প্রতিষ্ঠানকে জানি, তাদের শুরুর মূলধন ছিল মাত্র দুই লাখ টাকা। যেটা এখনকার বাজারে কিছুই না। এ রকম একটা মূলধন নিয়ে কোম্পানিটি বাসা খোঁজার ব্যাপারটাকে টার্গেট করে মার্কেটে কাজ শুরু করল। দেখা যাচ্ছে, এই বাসা খুঁজতে গিয়ে তারা যে ম্যাপিং বা জিওগ্রাফিক্যাল একটা ম্যাপ বানিয়ে ফেলল একটা নির্দিষ্ট এলাকার বা ঢাকা শহরের যেকোনো জায়গার, এখন কিন্তু তারা শুধু এই অ্যাড্রেসটাকে বিক্রি করছে। খুব ছোট একটা সমস্যা, খুব ছোট বিনিয়োগ, কিন্তু এটার প্রভাব অনেক বড়। আইডিয়ার পাশাপাশি তা প্রয়োগের ব্যাপারটা অবশ্যই থাকতে হবে। তাহলেই সফল হওয়া সম্ভব,’ যোগ করেন এস শারাফী।

বাংলাদেশ থেকে এখনো সেভাবে কোনো বৈশ্বিক টেক কোম্পানি তৈরি হয়নি। তবে সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না এই টেক–বিশেষজ্ঞ। এস শারাফী বলেন, ‘সম্ভাবনা আছে। তবে কিছুটা সময় লাগবে। আমাদের যে কাজের মান এবং প্রতিশ্রুতির জায়গাগুলো আছে, এগুলোতে আরও কাজ করতে হবে। এগুলোকে বৈশ্বিক মানের করতে হলে উন্নয়নের আরও সুযোগ আছে। বড় বড় বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে এলে এ জায়গাটাকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এ ক্ষেত্রে দক্ষতা, প্ল্যাটফর্ম, অর্থ—কোনোটারই অভাব হবে না। কেবল দরকার ইচ্ছা এবং সঠিক পরিকল্পনার।’

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (১১তম পর্ব)।

এআইসহ নতুন যেসব প্রযুক্তি আসছে, সেগুলোর কারণে চাকরির বাজারে কি বেকারত্ব বেড়ে যাবে? এমন প্রশ্নে বেকারত্ব বেড়ে যাবে বলে মনে করেন না এস শারাফী। তিনি বলেন, ‘এআইয়ের কারণে কিছু চাকরি অবশ্যই কমবে। যেমন একটা সময় টাইপরাইটার ছিল। তারপর যখন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এলো, তাদের সেটা শিখতে হয়েছে। আর যারা শেখেনি, তারা অন্য পেশায় চলে গেছে। সে কিন্তু বেকার বসে নেই। থাকলেও বেকারত্বের সংখ্যাটা খুবই কম।’

ঠিক এভাবেই এআই নিয়ে কাজ করাতে হলেও লোকবল লাগবে জানিয়ে এই টেক–বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এআই কিন্তু নিজেই সবকিছু করবে না। ওদের আবেগ-অনুভূতি নেই। ওই জায়গায় মানুষের কাজটা সব সময় থেকে যাচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ার বা প্রোগ্রামারের চাকরি যাবে না। এই মডেলগুলোকে শেখানোর জন্য মানুষ লাগবেই। আপনি হয়তো চ্যাটজিপিটি নামে একটা এআই চেনেন। এটা একটা মডেল। এমন হাজার হাজার মডেল থাকতে পারে। প্রতিটি মডেলকে শেখানোর জন্য পেছনে কোটি কোটি লোকের কাজ করতে হবে। তাই বলব, কখনোই চাকরি কমবে না।’