টেক শো
লোকাল থেকে বৈশ্বিক: ডিজিটাল মার্কেটে বাংলাদেশি তরুণদের সম্ভাবনা
বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ২০তম পর্ব।
ফ্রিল্যান্সিং পেশাটাই একধরনের উদ্যোক্তা। একজন মানুষ যখন নির্দিষ্ট একটা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হন, তখন ধারাবাহিকভাবে তাঁর গ্রাহক বাড়তে থাকে। যাঁরাই এখন এই ক্ষেত্রগুলোতে প্রতিষ্ঠিত, তাঁরা যখন নির্দিষ্ট একটা দক্ষতা শিখে ফ্রিল্যান্স কাজ শুরু করেন, তখন কিন্তু তাঁরা ভাবেননি যে একদিন উদ্যোক্তা হবেন। এই মার্কেটে সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো আপনি যদি বৈশ্বিক মার্কেটিং ভালো বুঝে থাকেন, ভালো কমিউনিকেটর হয়ে থাকেন—বাংলাদেশের মার্কেটের জন্য অনেক সুযোগ আছে।
ধরুন, আপনি ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ পারেন। এক বছর ফ্রিল্যান্স মার্কেটে কাজ করে মনে হলো আপনার এখন দৈনিক যে পরিমাণ কাজ আসছে, তা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করেও শেষ করতে পারছেন না; তখন আপনাকে আরও এক-দুইজন ভিডিও এডিটর নিয়োগ দিতে হচ্ছে। আবার হঠাৎ করে কাস্টমার বলল, ‘দেখো, তুমি তো ভিডিও এডিটিং করো; আমাদের কিন্তু মোশন গ্রাফিকসের কাজও আছে। তুমি কি করতে চাও?’ তখন বললেন, ‘অবশ্যই করতে চাই। আমার দলে আরও সদস্য আছে।’ এভাবেই কিন্তু উদ্যোক্তার পথে আপনার যাত্রা শুরু হয়ে যায়।
প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর ২০তম পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন ক্রিয়েটিভ বিজনেস গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) জিয়া উদ্দিন মাহমুদ। আলোচনার বিষয় ছিল—‘ক্রিয়েটিভিটি টু কমার্স: অপরচুনিটিস ইন দ্য ডিজিটাল ইরা’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ১৭ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সম্রাট।
যাঁরা ডিজিটাল খাতে উদ্যোক্তা হতে চান তাঁদের উদ্দেশে জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমার পরামর্শ থাকবে উদ্যোক্তা হওয়ার আগে নিজের শৃঙ্খলা, সাংগঠনিক ব্যবহার, যোগাযোগ পদ্ধতি—এসব বোঝার জন্য একবার হলেও কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা উচিত। যখন বুঝবেন নিজে ভালো স্কিলড হয়ে পণ্যকে ডেলিভার করতে পারছেন, কাস্টমারের সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারছেন, পাশাপাশি কাস্টমার থেকে আরও বেশি পরিমাণ কাজ নিয়ে সেগুলো ভালোভাবে ডিস্ট্রিবিউট করে গোছালোভাবে ডেলিভার দেওয়ার মতো দক্ষতা তৈরি হয়েছে, তখনই কেউ উদ্যোক্তা হতে পারবেন।’
‘আপনি ব্যক্তি অনেক ভালো ডিজাইনার হতে পারেন, অনেকগুলো ভালো কাজ করতে পারেন; কিন্তু যখন আপনার কাছে কাজের অর্ডার বাড়বে, তখন আপনাকে আরও তিনজন মানুষ সঙ্গে নিয়ে কাজটা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আপনাকে টিমওয়ার্ক জানতে হবে, সময়মতো ডেলিভারি কীভাবে করতে হয় তা জানতে হবে, জানতে হবে কীভাবে কাজগুলো ডিস্ট্রিবিউট করতে হয়, অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে, টিম মেম্বার নিয়োগের জন্য এইচআর পলিসি জানতে হবে’, যোগ করেন জিয়া উদ্দিন মাহমুদ।
নিজের ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি বলেন, ‘ক্যারিয়ারের শুরুতে আমাকে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে যোগাযোগদক্ষতা। এটা এখনো সহায়তা করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। কীভাবে আপনি অন্য মানুষের সঙ্গে কমিউনেট করছেন, আপনার মানবিকতা ও বিনয়ী স্বভাব এবং নেটওয়ার্কিং। বর্তমানে সবারই এই দক্ষতাটা দরকার।’
লোকাল মার্কেট ও বৈশ্বিক মার্কেটের মধ্যে ভিন্নতা
জিয়া উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এই যুগে তরুণদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো লোকাল মার্কেটে বসে গ্লোবাল ভিলেজের অংশ হওয়া। এই দুই মার্কেটের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য আছে বলে মনে করি না। এটা সম্পূর্ণই ব্যক্তির ওপর নির্ভর করে। আপনার যদি দক্ষতা থাকে, সেটা দিয়ে যদি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন, হোক লোকাল কিংবা বৈশ্বিক মার্কেট—আপনি অবশ্যই ভালো করবেন।
আর শুধু ডিজিটাল দক্ষতার কথা বললে সেখানে বৈশ্বিক মার্কেটের সুযোগ বেশি। পাশাপাশি বৈশ্বিকভাবে কাজ করে লোকাল মার্কেটে অনেকের কর্মসংস্থান করে দেওয়া যায়। তাই বলব, বাংলাদেশি তরুণদের জন্য দুই মার্কেটেই ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।
আগামীতে ডিজিটাল শিল্পে যে পরিবর্তন আসবে
সবচেয়ে বড় বিপ্লব হবে এআই। আপনাকে এআই ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ হতে হবে। এআই দিয়ে পণ্যের উন্নয়ন করা জানতে হবে। অর্থাৎ এআই জানার পাশাপাশি এটা দিয়ে সমস্যার সমাধান করা, পণ্য তৈরি করা জানতে হবে। পাশাপাশি ইউআই-ইউএক্স ডিজাইন শিল্প। বর্তমানে মার্কেটে এটির চাহিদা অনেক। ডিজিটাল মার্কেটিং ও কনটেন্ট তৈরি প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকবে। ওয়েব ডেভেলপমেন্টের মার্কেটও অনেক বড় হবে। সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত কাজের ক্ষেত্রও বাড়বে।