ফলোয়ার নয়, দক্ষতাই মূলধন: কনটেন্ট ক্রিয়েশনের ভিতর-বাহির

বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় নবম পর্ব।

ছবি: এআই/বন্ধুসভা
ব্র্যান্ডিং করে নিজের নামটাকে পরিচিত করতে পারলে তখন এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া যায়। এতে হবে কি, মানুষ আপনার এক কনটেন্ট দেখে পরবর্তী কনটেন্ট দেখার জন্য আগ্রহী হবে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে হলে বা এখান থেকে আয় করতে চাইলে প্রথমেই এ কাজের প্রতি আপনার ভালোলাগা থাকতে হবে। পৃথিবীর অন্য সব কাজের ক্ষেত্রেও একই জিনিস থাকতে হবে। তবে কিছু কাজ আছে, যেগুলো ভালো না লাগলেও অনেকে করে থাকেন এবং সফলও হন। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে হলে এ কাজ আপনার ভালো লাগতেই হবে। অন্যথায় সফল হতে পারবেন না। ভালো না লাগলে আপনি ক্যামেরার সামনে এসে বসতে পারবেন না, হাসি দিয়ে কথা বলতে পারবেন না। প্রতিদিন একটি করে কনটেন্ট তৈরি করতে হবে; সে জন্য গবেষণা করতে হবে। এর চেয়ে বড় কথা, এ জায়গা যদি আপনার ভালোই না লাগে, তখন ক্যামেরার সামনে কী বলবেন, সেটাই খুঁজে পাবেন না।

এ বিষয়ে টেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর সোহাগ মিয়া বলেন, ‘কাজটি ভালোলাগার পর আপনার যা আছে, সেটা দিয়েই শুরু করতে হবে। আমাদের একটা সমস্যা আছে। আমরা মনে করি, একটা দামি ক্যামেরা কিনতে হবে, একটা দামি মাইক্রোফোন লাগবে, স্টুডিও লাগবে, বড় একটা লাইট লাগবে, নয়তো শুরু করা যাবে না। এসব এক্সকিউজ। আমি শুরু করেছিলাম ভাঙা একটা ল্যাপটপ দিয়ে। বর্তমানে সবার হাতেই স্মার্টফোন আছে। স্মার্টফোন দিয়েই শুরু করা যায়।’

প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর নবম পর্বে আলোচক হিসেবে ছিলেন টেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর সোহাগ মিয়া। আলোচনার বিষয় ছিল ‘ফলোয়ারস টু ফিউচার: ম্যাকিং সোশ্যাল মিডিয়া ইউর ক্যারিয়ার’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ২ জুলাই রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সম্রাট।

যাঁরা কনটেন্ট ক্রিয়েশনকে পেশা হিসেবে নিতে চান, তাঁদের উদ্দেশে সোহাগ মিয়া বলেন, ‘ক্যারিয়ার হিসেবে যদি আপনি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো নিতে চান, অন্ততপক্ষে দুই বছর সময় দিতে হবে। দুই বছর পর একটা পর্যায়ে পৌঁছালে তারপর আপনি এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন। প্রথম দিন থেকে নিতে পারবেন না। কারণ, আপনার আয় ছয় মাসেও হতে পারে, এক বছরেও হতে পারে, দুই বছরেও হতে পারে, এমনকি পাঁচ বছর পরও হতে পারে। আমার প্রথম আয় হয়েছিল দুই বছর পর গিয়ে। সেটাও খুবই সামান্য।’

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (নবম পর্ব)।

‘প্রচুর সময় দিতে হবে। অনেক ধৈর্য নিয়ে কাজ করতে হবে। ধৈর্য ধরে লেগে থাকলে তারপরই আপনি এটাকে একটা সময় ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারবেন। তার আগপর্যন্ত এটাকে শখ হিসেবে নিয়ে পাশাপাশি আরেকটা কাজ করে যেতে হবে। যখন থেকে ভালো আয় শুরু হবে, তখন এটাতে ফুলটাইম হিসেবে নিতে পারেন,’ যোগ করেন সোহাগ মিয়া।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফলোয়ার বাড়ানো এবং এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়ার মধ্যে পার্থক্য
বর্তমানে আমাদের দেশে মিলিয়ন ফলোয়ারের অসংখ্য ফেসবুক পেজ আছে। সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আপনি হয়তো পেজটির নামও জীবনে শোনেন নাই, তার কনটেন্টও আপনার সামনে কখনো আসে নাই। হঠাৎ করে কেউ একদিন বলল আপনাকে, তারপর আপনি ঢুকে দেখলেন, তার মিলিয়ন ফলোয়ার। এখানে সব ফলোয়ার কিন্তু স্থায়ী ফলোয়ার হয় না।’

আরও পড়ুন

‘এখানে একটা বড় ব্যাপার থাকে ব্র্যান্ডিংয়ের। ধরেন, আপনি একটা পেজ খুললেন, রেনডম কনটেন্ট দিচ্ছেন, ভাইরাল কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বললেন; সেটা দিয়ে আপনার ফলোয়ার বেড়ে গেল। এভাবে মিক্সড কনটেন্ট দিয়ে আপনি একটা বিশাল ফলোয়ার বানিয়ে ফেললেন। তখন পারসোনাল ব্র্যান্ডিংটা আর থাকে না। ব্র্যান্ডিং তৈরি করতে হলে নির্দিষ্ট একটা বিষয়তেই কনটেন্ট দিতে হবে। সেটা এআই হতে পারে, টেক হতে পারে, ফুড রিভিউ হতে পারে, মুভি রিভিউ হতে পারে, ভ্রমণবিষয়ক হতে পারে, ডেইলি লাইফ হতে পারে। ব্র্যান্ডিং করে নিজের নামটাকে পরিচিত করতে পারলে তখন এটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া যায়। এতে হবে কি, মানুষ আপনার এক কনটেন্ট দেখে পরবর্তী কনটেন্ট দেখার জন্য আগ্রহী হবে। আর রেনডমলি ফলোয়ার হয়ে গেলে আপনি সেটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারবেন না। ক্যারিয়ার হিসেবে নিলেও সেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।’

ভবিষ্যতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্যারিয়ার কেমন
সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আমার মনে হয়, আগামী কয়েক বছরে কিছু প্ল্যাটফর্ম আছে, হারিয়ে যেতে পারে। কিছু প্ল্যাটফর্ম নতুন করে জাগ্রত হবে, আবার কিছু প্ল্যাটফর্ম এখন যেমন আছে, তেমনি থাকবে। বিশেষ করে ফেসবুক নিয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ফেসবুক কখনোই ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ছিল না। আয়ের মধ্যে বেশির ভাগ আয় কিন্তু ভিডিও থেকেই আসে। তবে ইউটিউব এখন যেমন আছে, তেমন আরও অনেক বছর থাকবে। ইনস্ট্রাগ্রামে ভালো সুযোগ তৈরি হতে পারে। টিকটকে একটা সম্ভাবনা হতে পারে।’

তারপরও প্রযুক্তি ব্যাপারটা নিয়ে আগে থেকেই কিছু বলা যায় না বলে মনে করেন এই টেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তিনি বলেন, ‘এটার জন্য চ্যাটজিপিটি বড় উদাহরণ হতে পারে। বিশাল একটি উদ্ভাবন। তবে এ খাতে ক্যারিয়ার দীর্ঘদিন থাকবে। হয়তো ধরনটা কিছু পরিবর্তন হতে পারে।’

নতুনদের উদ্দেশে সোহাগ মিয়া বলেন, ‘দক্ষতা বাড়াতে হবে। এটা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। কনটেন্ট তৈরির জন্য যা যা প্রয়োজন, বিশেষ করে ক্যামেরার সামনে কথা বলা, ভিডিও এডিটিং শিখতে হবে। ধীরে ধীরে এই দক্ষতা বাড়াতে হবে। ইউটিউব দেখে ফ্রিতে অনেক কিছু শেখা যায়। ভিডিও বানিয়ে পরিচিতদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।’