ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট সেক্টরে কীভাবে তৈরি করবেন গ্লোবাল পোর্টফোলিও

বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৫ জুন অনুষ্ঠিত হয় অষ্টম পর্ব।

ছবি: এআই/বন্ধুসভা

এখন এআই আসছে। নতুন নতুন সফটওয়্যার/টুলস আসছে। জীবনকে সহজ করার পাশাপাশি এসব অনেক চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে। এখন যাঁরা অ্যানিমেশন খাতে কাজ করার জন্য নিজেকে তৈরি করছেন, ভবিষ্যতে তাঁরা কি রিলেভেন্ট থাকবেন?

এ বিষয়ে ন্যাশনাল ফিল্ম বোর্ড অব প্রোডাকশন কানাডার রাইটার-ডিরেক্টর ওয়াহিদ ইবনে রেজা বলেন, ‘বর্তমানে বিভিন্ন এআই প্ল্যাটফর্মে যেসব ভিডিও বানানো হচ্ছে, সেটা হয়তো আমাদের ১০ জনের একটা টিমের ৬ মাস লাগছে বানাতে; সেটা এখন এআই ২ মিনিটেই করে দিচ্ছে। এটা একটা শঙ্কার কারণ। তবে এখনো এআই বড় দৈর্ঘ্যের ভিডিও বানাতে পারে না। আর্ট ডিরেকশন করতে পারে না। ধরুন আপনি একটা ভিডিও করলেন। সেটার একটা আর্ট ডিরেকশন দিতে হবে—এটা না, ওইটা করো, এমন করো। এটা আবার পেছনে গিয়ে করা যাচ্ছে না। এটা এআইয়ের সীমাবদ্ধতা।’

‘তবে আমার কাছে মনে হয়, সৃজনশীল বিশ্বের জন্য এআই একটা চমৎকার টুলস হবে। যেটা একধরনের শূন্য ক্যানভাস হিসেবে আসবে। সেই ক্যানভাসে আমি আমার তথ্যগুলো দেব। সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এআই একটা সমাধান দেবে। তারপর নিজেকে ডেভেলপ করতে পারব,’ যোগ করেন ওয়াহিদ ইবনে রেজা।

ছবি: ফ্রিপিক

প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর অষ্টম পর্বে আলোচক হিসেবে ছিলেন হলিউডের ‘অ্যাভেঞ্জারস’, ‘স্পাইডারম্যান’, ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ’, ‘গার্ডিয়ান অব দ্য গ্যালাক্সি ভলিউম-২’সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্রের অ্যানিমেশন প্রোডাকশন সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করা ওয়াহিদ ইবনে রেজা। আলোচনার বিষয় ছিল ‘হাউ টু বিল্ড আ পোর্টফোলিও দ্যাট গেটস ইউ হায়ারড গ্লোবালি’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ২৫ জুন রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী।

ওয়াহিদ ইবনে রেজা বলেন, ‘এখন যাঁরা ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট-অ্যানিমেশন খাতে ক্যারিয়ার শুরু করছেন, তাঁদের কয়েকটা জিনিস অবশ্যই শিখতে হবে। “জেনারেলিস্ট” নামে একটা টার্ম আছে। জেনারেলিস্ট এমন একজন শিল্পী, যিনি মডেল বানানো থেকে শুরু করে সেটা রিক করে, অ্যানিমেশন করে, লাইট করে একদম সম্পূর্ণ দৃশ্যটা করার ক্ষমতা রাখেন। এটা ২০ বছর আগে অনেক জনপ্রিয় ছিল। এখন ও রকম নেই। এখন অধিকাংশই বলে আপনাকে নির্দিষ্ট একটাতে ফোকাস করতে হবে। সম্ভবত আমরা আবার ধীরে ধীরে জেনারেলিস্টের দিকে যাচ্ছি। যে যত বেশি দক্ষ হবে, তার তত বেশি ডিমান্ড হবে। তারপরও যেটা সবচেয়ে ভালো পারেন, সেটাতে বেশি ফোকাস করতে হবে।’

আরও পড়ুন

ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট-অ্যানিমেশন খাতে পোর্টফোলিও তৈরি
অনেকে এখন বিদেশে পড়তে আসছেন। পড়তে এসে দক্ষতা উন্নয়ন করছেন। আপনার হয়তো একটা দক্ষতা আছে, পড়তে গিয়ে সেই দক্ষতাকে আরও বাড়ালেন। পাশাপাশি একটা নেটওয়ার্কিং হয়। যেমন আপনার শিক্ষক কোনো একটা স্টুডিওতে কাজ করেন। তাঁর মাধ্যমে ওই স্টুডিওতে ইন্টার্নশিপ করার একটা সুযোগ তৈরি হতে পারে। অথবা এখানকার ফিল্ম স্কুলগুলোয় যে ক্যারিয়ার মেলা হয়, সেগুলোর মাধ্যমে প্রথম চাকরি পেতে পারবেন। এ উপায়টা মোটামুটি সহজ। কারণ, এখানে পড়তে এসে আপনার দক্ষতা আরও বাড়ালেন এবং একটা ভালো পোর্টফোলিও তৈরি করলেন। আপনি চাকরি পেয়ে যাবেন সহজেই।

আরেকটা উপায় হচ্ছে, বাংলাদেশেই বসেই নিজের পোর্টফোলিও ডেভেলপ করা। যদি আপনার পোর্টফোলিও অনেক শক্তিশালী হয়, তখন বাইরের অনেক স্টুডিও আপনাকে নিয়ে নিতে পারে। এটা সম্ভব। ওয়াহিদ ইবনে রেজা বলেন, ‘গত পাঁচ-দশ বছরে দেখেছি, বাংলাদেশ থেকে বসে অনেকেই ভালো কাজ করছে। পোর্টফোলিওতে বৈশ্বিক মানের কাজ রাখতে হবে। এটা নির্ভর করে আপনি কোন ধরনের শিল্পী হতে চাচ্ছেন। আপনি কি কনসেপ্ট আর্টিস্ট, ক্যারেক্টার ডিজাইনার, মডেলার, অ্যানিমেটার, লাইটিং, কম্পোজিটিং আর্টিস্ট, ইফেক্টস আর্টিস্ট হতে চাচ্ছেন?’

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (অষ্টম পর্ব)।

ওয়াহিদ ইবনে রেজা আরও বলেন, ‘এখন আপনি যে ধরনের আর্টিস্ট হতে চান, সেই খাতে যাঁরা বিশ্বের সেরাদের সেরা, তাঁদের অনলাইন প্রোফাইল ও কাজ দেখতে হবে। এ ক্ষেত্রে যেটা হবে, আপনি তাঁদের কাজের মানের সঙ্গে আপনার কাজের মানের একটা তুলনা করতে পারবেন। সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে হলে আপনাকে আর কী কী করতে হবে, একটা ধারণা পাবেন।’

ধরুন আপনি এনভায়রনমেন্ট ডিজাইনার হবেন। আপনি একটা অফিসের এনভায়রনমেন্ট সেট ডিজাইন করবেন। এ ক্ষেত্রে
পোর্টফোলিওতে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে অফিসের এনভায়রনমেন্ট দেখানো।
একটা ৩৬০ ডিগ্রি ভিউ। যাতে পুরো থ্রি সিক্সটি কেমন লাগবে দেখতে, এটা বোঝানো।
বিভিন্ন আলোতে/লাইট কন্ডিশনে এনভায়রনমেন্ট কেমন দেখাচ্ছে। সকালের আলোয় কেমন হবে, বিকেলের আলোয় কেমন হবে, রাতের আলোয় কেমন হবে।

এ বিষয়গুলো পোর্টফোলিওতে রাখলে আপনি কর্তৃপক্ষকে বলতে পারবেন, যদি আপনারা আমাকে নেন, তাহলে আমি এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন নিয়ে এ কাজগুলো করে দেখাতে পারব।

ছবি: ফ্রিপিক

বাংলাদেশে বসে পড়াশোনার পাশাপাশি ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট-অ্যানিমেশন কাজ শেখা সম্ভব বলে জানিয়ে ওয়াহিদ ইবনে রেজা বলেন, ‘প্রতিদিন নিয়ম করে, সময় করে শেখার চর্চা করতে হবে। একটা টার্গেট রাখতে হবে। টার্গেটের প্রতি লেগে থাকতে হবে। যে কাজটাই শিখবেন, সেটার প্রতি ভালোবাসা–ভালো লাগা থাকতে হবে।’

বাংলাদেশে ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট-অ্যানিমেশন খাতের ভবিষ্যৎ
এই খাতের জন্য বাংলাদেশে ভিশনারি বিনিয়োগকারী নেই বলে কিছুটা আক্ষেপ করেন ওয়াহিদ ইবনে রেজা। তিনি বলেন, ‘সরকারি কিংবা বেসরকারি হোক—আমাদের এমন কিছু বিনিয়োগকারী লাগবে, যাঁরা ২০-৩০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করবেন। আমাদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা স্বল্প সময়ের মধ্যে লাভ করতে চাই। যেমন একটা বিনিয়োগ করলাম; দুই-তিন বছরে রিটার্ন আসবে। কিন্তু এটা আসলে দুই-তিন বছরের ইন্ডাস্ট্রি নয়। আমাদের প্রতিবেশী ভারতে এখন এই খাতে বিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি। ভিজ্যুয়াল ইফেক্টে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারীদের অন্যতম শাহরুখ খান। এখন ভারতে পৃথিবীর যত বড় বড় ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট অ্যানিমেশন স্টুডিও আছে, তাদের একটা করে অফিস আছে। এটা কিন্তু হঠাৎ করে হয়নি। এ ভিশনটাই আমাদের লাগবে।’