ভবিষ্যতের চাকরি কি মানুষের হাতে থাকবে, নাকি এআইয়ের

বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ২৭তম পর্ব।

প্রতিনিয়ত নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলাটা জরুরিছবি: এআই/বন্ধুসভা

আমরা যখন পড়াশোনা করেছি, বা যারা তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করেছে, তাদের আইডিয়া তখন এক রকম ছিল। কিন্তু এখন জিনিসটা এতটাই ছড়িয়ে গেছে যে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি যে শুধু এ–সংক্রান্ত পড়াশোনা যারা করবে তাদের কাছেই থাকবে, তা না। আপনি যে খাতেই কাজ করেন না কেন—সেটা এইচআর, ফাইন্যান্স, মার্কেটিং হোক; সব জায়গাতেই অটোমেশন, এআই, ডিজিটালাইজেশন, এমনকি ছোট ছোট প্রযুক্তি, হতে পারে গুগলের ছোট একটা ফরমের কাজ রয়েছে।

বর্তমানে অনেক কিছুই দেখতে হয় জানিয়ে দারাজ-আলিবাবা গ্রুপের এইচআর সিস্টেমস লিড ফাহাম কবির বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি এখন সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলছে। আগে আমরা অভিজ্ঞতা ও স্ট্র্যাটেজিক পয়েন্ট অব ভিউ থেকে সিদ্ধান্ত নিতাম। এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ডেটা, অতীত ইতিহাস, সম্ভাবনা ও ব্যবসার সুযোগ রয়েছে, এগুলো বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’

আরও পড়ুন

প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর ২৭তম পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন ফাহাম কবির। তাঁর আলোচনার বিষয় ছিল ‘টেক মিটস ট্যালেন্ট: হাউ ইনোভেশন ইজ শেপিং দ্য ফিউচার অব ওয়ার্ক’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ৫ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮টায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার জেন্ডার ও সমতাবিষয়ক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম।

ফাহাম কবির বলেন, ‘প্রযুক্তি আসার কারণে আমাদের যে প্রস্তুতি নেওয়ার কথা, সেগুলো এখন থেকেই নিতে হবে, সেটা আমরা যে পর্যায়ে থাকি না কেন। আমি ১৫ বছর ধরে চাকরি করছি, আমাকেও তৈরি হতে হবে—এআইয়ের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া থেকে শুরু করে নতুন কী কী সফটওয়্যার আসছে। ঠিক একইভাবে যারা মাত্রই পড়াশোনা শেষ করল, তাকেও তৈরি হতে হবে।’

প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে সব সময় নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে জানিয়ে এই করপোরেট কর্মকর্তা বলেন, ‘নতুন যে প্রযুক্তি আসবে, সেটা শেখার জন্যও মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ, দুই বছর আগেও আপনি চিন্তা করতে পারেননি যে কেউ এত দ্রুত সময়ের মধ্যে ই–মেইল লিখে দেবে, বা এআই আপনার হয়ে মেসেঞ্জারে রিপ্লে দিতে থাকবে। যেমন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে আমরা আগে দেখেছিলাম, যে বুস্ট ভালো করতে পারে, বা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের টার্গেট অডিয়েন্স ব্যাপারটা ভালো বোঝে, তার অনেক সুযোগ ছিল, চাহিদা ছিল। এখনো আছে মোটামুটি। কিন্তু চ্যালেঞ্জ হলো—এখন ফেসবুক আপডেট আনছে যে সে নিজেই তার অ্যালগরিদম ব্যবহার করে টার্গেট অডিয়েন্স খুঁজে নেবে। এআই নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে সে কার কাছে পৌঁছাবে। এখন এই কাজটা মানুষের থেকেও যদি এআই ভালো করতে পারে, তাহলে ফেসবুক সেই দায়িত্ব মানুষের কাছে দেবে না।’

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (২৭তম পর্ব)।

‘এখন এইচআরের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে যদি বলি, অনেক কষ্টের কিছু কাজ ছিল যেমন সিভি বাছাই; হাজার হাজার সিভি আমাদের দেখতে হতো। এখন অনেক সুন্দর সুন্দর এআই টুলস আসছে, এমনকি লিংকডইন কিংবা বিডিজবসও আপডেট হয়েছে বেশ কিছু ক্ষেত্রে। ইন্টারন্যাশনাল কিছু প্রযুক্তি আছে যেগুলোর মাধ্যমে চাইলেই আপনি ইন্টারভিউ শিডিউল করে দিতে পারবেন, এবং রোবট অটোমেটিক্যালি আপনার ইন্টারভিউ নেবে। রোবট আপনাকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে, আপনার জবাব শুনে সে বোঝার চেষ্টা করবে আপনি এই দক্ষতা কতটুকু জানেন। এই যে বিষয়টা, এটা কিন্তু তিন বছর আগেও ভাবিনি এত দ্রুত প্রযুক্তিটা চলে আসবে। ফলে যারা ইন্টারভিউ নেয়, বা সিভি বাছাই করে তারা নিজেদের চাকরি নিয়ে কিছুটা অনিরাপত্তায় ভুগতে পারে। আবার আমরা যারা স্যালারি নিয়ে কাজ করি, দেখা গেল আগে যে কাজটা করতে আমাদের তিনজনের তিন দিন লাগত, এখন ওই কাজটাই সফটওয়্যারের মাধ্যমে ঘণ্টাখানেক সময়ের মধ্যে একজন মানুষই করে ফেলতে পারতেছে,’ যোগ করেন ফাহাম কবির।

তাই বলব, প্রতিনিয়ত নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলাটা জরুরি। কারণ, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আমার স্কিলটা রোবট নিয়ে নিচ্ছে। আবার সব দক্ষতা কিন্তু রোবট নিতে পারবে না। একদিক দিয়ে বন্ধ হলে আরেক দিক দিয়ে সুযোগ এসে যায়।