এআই যুগে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং—সবকিছু কি বদলে যাচ্ছে

বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় ২৬তম পর্ব।

আগে যে জিনিসটা করতে পাঁচজন লাগত, এখন সেটাই করতে একজন লাগছে এবং কম সময়েছবি: এআই/বন্ধুসভা

আমরা যাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকেন্দ্রিক কাজ করি, আমরা প্রতিদিন শিখি। নতুন নতুন ট্রেন্ড আসে, নতুন ফিচার আসে, সংযোজন আসে; সেটার সঙ্গে নিজেকে অ্যাডাপ্ট ও শেখার চেষ্টা করি। বর্তমানে যে এআই রেভল্যুশন আমরা পার করছি, সেখানে এ–সম্পর্কিত খাত বা কাজের আপডেট ভার্সনগুলোর সঙ্গে যুক্ত না হলে কোনোভাবেই এগোনো সম্ভব হবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন অনেক কিছু বদলেছে উল্লেখ করে সমকালের ডিজিটাল সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং লিড রিয়াজ হোসাইন বলেন, ‘যদি পাঁচ বছর আগের কথা বলি, তখন শুধু একজন ডিজিটাল মার্কেটার দিয়ে কাজ হতো না; গ্রাফিক ডিজাইনের জন্য আলাদা লোক নিতে হতো, ফেসবুক মেইনটেইনের জন্য লোক লাগত, বিজ্ঞাপন চালানোর জন্য লোক নিতে হতো, কনটেন্ট বানানো বা কনটেন্ট স্ট্র্যাটেজি ডেভেলপ করার জন্য আলাদা লোক নিতে হতো। কিন্তু এখন কেউ যদি চায় একাই সবকিছু দেখবে, তাহলে সে সহজেই তা করতে পারবে। আগে যে জিনিসটা করতে পাঁচজন লাগত, এখন সেটাই করতে একজন লাগছে এবং কম সময়ে।’

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (২৬তম পর্ব)।

প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর ২৬তম পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন রিয়াজ হোসাইন। তাঁর আলোচনার বিষয় ছিল ‘দ্য ফিউচার অব সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং: বিয়ন্ড রিলস অ্যান্ড ট্রেন্ডস’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ২৯ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সম্রাট।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিলস, শর্ট ভিডিও বা ট্রেন্ডসের প্রভাব কেমন? এগুলো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে সাসটেইনেবল কি না?
রিয়াজ হোসাইন বলেন, বর্তমানে ব্র্যান্ড ভ্যালুর পেজের চাহিদা একরকম আর যাঁরা ইনফ্লুয়েন্সার আছেন, তাঁদের ক্ষেত্রটা একেক রকম। সমস্যা আছে, তবে সম্ভাবনা অনেক বেশি। মানুষ এখন শর্ট ভিডিও দেখতে পছন্দ করেন। অডিয়েন্সকে ধরে রাখার জন্য একটা ভিডিওর প্রথম ৮-১০ সেকেন্ড অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অডিয়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী রিলস বা কনটেন্ট বানালে সে ক্ষেত্রে এটা ফলপ্রসূ।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে, এখন ব্র্যান্ডগুলো ইনফ্লুয়েন্সার বেসিসে কাজ করছে। এ জন্য ইনফ্লুয়েন্সারদের রিলস বা ভিডিও কনটেন্টের ওপর ব্র্যান্ডগুলোর মনোযোগ আছে। তবে এই ট্রেন্ডও এখন পরিবর্তিত হচ্ছে। মানুষ এখন শুধু ইনফ্লুয়েন্সারদের ওপর ভরসা করছেন না; এখন মানুষ এমন ব্র্যান্ডদেরই পছন্দ করছেন, যারা আসলেই মানুষের জন্য কিছু ভাবে বা মানুষ নিয়ে কাজ করছে।

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (২৬তম পর্ব)।

পারসোনালাইজিংয়ের ক্ষেত্রে নিশ টার্গেটিং কতটা গুরুত্বপূর্ণ
রিয়াজ হোসাইন বলেন, ‘আমরা নিজেদের প্রোফাইলে সহজেই যেকোনো কিছু পোস্ট করতে পারি। এখন সেটা যদি ফেসবুক অ্যালগরিদমের সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে অটোমেটিক রিচ বেড়ে যায়। দেখবেন, যখন ফেসবুক স্ক্রল করেন, অনেককেই চেনেন না বা আপনার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই, কিন্তু তাঁর পোস্ট আপনার কাছে চলে আসছে। তাই বলব, রিচ হওয়াটা এখন আসলে সহজ। মূল কথা হলো, আপনি আপনার কনটেন্ট দিয়ে মানুষের কাছে কতটা সম্পর্কিত হতে পারছেন! এই জায়গাটা তৈরি করতে পারলে রিচ অনেক ভালো হবে।’

‘সামনে আরও বেশি এআই–ভিত্তিক পারসোনালাইজেশন হবে। আমি ব্যক্তি মানুষটি কী চাই, সেটার ওপর ভিত্তি করে আমাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় টার্গেটিং করা হবে। যারা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নিয়ে কাজ করে বা করতে চায়, তাদের অডিয়েন্সের এই চাহিদা বুঝতে পারাটা জরুরি।’

আরও পড়ুন

ডিজিটাল মার্কেটারদের সৃজনশীল ও অ্যানালিটিক্যাল হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ
দুটো গুণই লাগবে জানিয়ে রিয়াজ হোসাইন বলেন, ‘এর একটি না থাকলে মার্কেটে টিকে থাকাটা খুবই কঠিন। এখন প্রতিনিয়ত মানুষের চাহিদা পরিবর্তিত হচ্ছে। এআই দিয়ে চাইলেই যেকোনো কিছু করা সম্ভব। এখন কোনো একটা ঘটনা ঘটছে বা আলোচনা হচ্ছে; দেখবেন যে ব্র্যান্ডের পেজগুলো ওই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে কনটেন্ট বানিয়ে আপলোড করছে। ওই সৃজনশীল চিন্তাটা না থাকলে কিন্তু মানুষকে যুক্ত করতে পারবেন না।’

আরেকটা বিষয় এখন বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে। প্রতিটি ব্র্যান্ড তার ব্র্যান্ডের জন্য, এমনকি পণ্যের জন্য একজন করে ডিজিটাল মার্কেটার নিয়োগ দিচ্ছে। এই মার্কেটার যাতে আগামী দিনে এআইয়ের সাহায্য নিয়ে একটাই পেজ চালাতে পারে, সে রকম একটা প্রস্তুতি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। যিনি নির্দিষ্ট ওই ব্র্যান্ড বা পণ্যের ডিজিটাল মার্কেটার হবেন, তাঁকে অনেক বেশি অ্যানালিটিক্যাল হতে হবে, মানুষের কথা বুঝতে হবে, মানুষ কী চায় সেটা বুঝতে হবে। অনেক বেশি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির কনটেন্টও এখন প্রয়োজন হচ্ছে। এ জায়গাতেও নজর রাখতে হচ্ছে।