টেক শো
ফ্যাক্ট বনাম ফেক: তথ্যের সত্যতা খোঁজার কৌশল
বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় ১২তম পর্ব।
‘চিল কান নিয়ে দৌড় দিছে’—কথাটি শুনেই চিলের পেছনে দৌড় দিলে হবে না। আগে কানে হাত দিয়ে দেখতে হবে, আসলেই কান নিয়ে গেছে কি না। তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু শেয়ার করার আগে ভাবতে হবে, এই তথ্য আসলে কতটুকু সত্য। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে, ছবি বা তথ্যে কোনো অসামঞ্জস্যতা আছে কি না। অসামঞ্জস্যতা থাকলে সেগুলো কী কী এবং প্রতিটা জিনিস দ্বিতীয়বার ক্রসচেক করতে হবে।
প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর ১২তম পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত হয়ে কথাগুলো বলেন ডিএএডি বৃত্তিপ্রাপ্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক ও তথ্য যাচাইকারী দিল আফরোজ জাহান। তাঁর আলোচনার বিষয় ছিল ‘ফ্যাক্ট ভার্সেস ফেক: স্ট্র্যাটেজিস ফর ট্রুথ ভেরিফিকেশন ইন দ্য ডিজিটাল এরা’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ২৩ জুলাই রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সম্রাট।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া তথ্য মূলত কারা ছড়ায় এবং কী উদ্দেশ্যে ছড়ায়, এমন প্রশ্নের জবাবে আফরোজ জাহান বলেন, ‘ধরুন, একটা পানির বোতল ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই তথ্য ভাইরাল হবে। অনেক মানুষ এখানে ক্লিক করবে। একটা পেজের রিচ বাড়বে। সাধারণত যারা এ ধরনের তথ্যগুলো প্রচার করে, তারা চায় যে রিচ বাড়ানো, ফলোয়ার বাড়ানো, একটা পেজের ট্রাফিক বাড়ানো। এটাই মূলত লক্ষ্য থাকে। আর বাণিজ্যিক পেজ হলে আয়েরও একটা সম্ভাবনা থাকে। এই তথ্যগুলো সরাসরি কোনো ক্ষতি করে না। তবে এমন কিছু তথ্য আছে, যেগুলো ক্ষতি করে। মানুষ আতঙ্কিত হয়, বিচলিত হয়, প্যানিক তৈরি হতে পারে। রাজনৈতিক বা অন্য কারণে এমনটা করে থাকে।’
‘এ ধরনের পেজ বা প্রোফাইল চেক করার জন্য কিছু ওয়েবসাইট আছে, যারা ওপেন রিসোর্স থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। তখন দেখা যায়, এই পেজ থেকে মাসে এতগুলো পোস্ট হচ্ছে এবং সব কটিই ভুয়া খবর কিংবা তার কাজই হচ্ছে এ ধরনের পোস্ট করা,’ যোগ করেন দিল আফরোজ।
তথ্য যাচাইয়ে ক্ষেত্রে এআইয়ের ভূমিকা নিয়ে দিল আফরোজ বলেন, ‘ডিপফেক আইডেন্টিফাই করার জন্য কিছু এআই অডিও টুলস রয়েছে। এসব টুলস যেকোনো তথ্য, ছবি, অডিও বা ভিডিও বিভিন্ন লেয়ারে ভাগ করে দেখায়। তখন কোনো ধরনের ম্যানিপুলেশন থাকলে সেটা বোঝা যায়। বেসিকের মধ্যে গুগলের রিভার্স ইমেজ সার্চ রয়েছে। এটির মাধ্যমে বের করা সম্ভব, এই ছবি আগেও কোথাও পাবলিশ হয়েছিল কি না, কখন বা কবে পাবলিশ হয়েছিল।’ এ ছাড়া আরও অনেক এআই টুলস রয়েছে।
অ্যালগরিদমের যে বায়ার্সনেস, সেটার কারণে এআই একধরনের তথ্য দেয়। যেমন মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ছবি ছড়িয়ে পড়ল। বিমান ধ্বংস বা আগুন জ্বলছে, এমন বেশির ভাগ ছবিই এআই দিয়ে তৈরি করা। বিভিন্ন এঙ্গেলের এসব ছবি। এখন এআইয়ের কাছে আগে থেকেই তথ্য আছে, একটা ভবনে বিমান বিধ্বস্ত হলে এমন হতে পারে। সেখান থেকে এ ধরনের একটা ছবি সে তৈরি করে দেয়। এটাকে বলে বায়ার্স অ্যালগরিদম। মানুষ এই ছবিগুলো প্রচুর শেয়ার করেছে। শেয়ার করার তালিকায় দুই ধরনের মানুষ আছে। একদল জানে যে এটা এআই দিয়ে তৈরি। আরেকদল জানেই না, তারা ভাবে, সত্যি সত্যিই এমন হয়েছে।
এই বিষয়গুলো বুঝতে হলে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে বলে পরামর্শ দেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষক ও তথ্য যাচাইকারী দিল আফরোজ জাহান। তিনি বলেন, ‘ছবিটা আসলে কেমন, জুম করে দেখতে হবে, কোনো অসামঞ্জস্যতা আছে কি না। অসামঞ্জস্যতা থাকলে সেগুলো কী কী এবং প্রতিটা জিনিস দ্বিতীয়বার ক্রসচেক করতে হবে। ফেক নিউজ চেক করার জন্য ইনভিড নামের একটা টুলস আছে। ফ্যাক্টচেকের জন্য এটা অন্যতম সেরা টুলস। টুলসটি ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেয়, ফ্রেম বের করে দেয়, ছবিটা কোথায় আছে, ছবিটা পুরোনো কি না। এ ধরনের ঘটনায় অনেক সময় পুরোনো ছবিও ভাইরাল হয়। এই তথ্যগুলো মানুষকে বিভ্রান্ত করে।’
ভুয়া তথ্য ছড়ানো বন্ধ করতে নিজ থেকেই সচেতন হতে হবে বলে মনে করেন এই ফ্যাক্টচেকার।