ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ে এআই: সাহায্য নাকি চ্যালেঞ্জ

বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ২৮তম পর্ব।

ছবি: এআই/বন্ধুসভা

বর্তমানে আমরা জানি যে আমাদের অধিকাংশ অডিয়েন্সই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বেসিক উপাদান কী? সেটা হলো ফটোগ্রাফি ও ভিডিও। অবশ্য ফেসবুকে এখনো টেক্সট বিশাল জায়গা দখল করে আছে। ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং হলো ফটোগ্রাফার, ভিডিওগ্রাফার, ডিজাইনার—তাঁরা একটা ইমেজ বা ভিডিও দিয়ে কীভাবে গল্পটা বলছেন। নিজেদের পয়েন্ট অব ভিউটা তাঁরা কীভাবে তুলে ধরছেন। আর অডিয়েন্সের দিক থেকে ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং যদি দেখি, দেখবেন আপনি যেকোনো ছবি বা ভিডিও ১০০ মানুষকে দেখান, প্রত্যেকে আলাদাভাবে এটাকে গ্রহণ করবেন। কারও সঙ্গে কাউকে মেলাতে পারবেন না। তার মানে ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ে আপনার মস্তিষ্কে একটা আইডিয়া দিয়ে দেয়।

প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর ২৮তম পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত হয়ে কথাগুলো বলেন চেকমেট ইভেন্টসের প্রতিষ্ঠাতা অ্যান্ড সিইও এম আমিনুর রহমান। তাঁর আলোচনার বিষয় ছিল ‘বিওয়াইন্ড দ্য লেন্স: দ্য রাইজ অব এআই ইন ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ১২ নভেম্বর রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সহসাংগঠনিক সম্পাদক আশফাকুর রহমান।

মানুষের ওপর ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ের প্রভাবের উদাহরণ দিয়ে আমিনুর রহমান বলেন, ‘শীতকালে ফুলকপি সবারই পছন্দের সবজি। এই ফুলকপি আপনি নভেম্বরের শেষ বা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দেখলে যে রকম পুলকিত বোধ করবেন, একই সাইজের একটা ফুলকপির ছবি বা ভিডিও যদি আপনি এপ্রিল মাসে দেখেন তখন অডিয়েন্স খুবই অবাক হবেন এবং খেতে চাইবেন। এটাই ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ের শক্তি। একটা ছবি, ভিডিও বা একটা ডিজাইনের মাধ্যমে আপনি একজন মানুষের মস্তিষ্কে ঢুকে যেতে পারছেন। যেটা দিয়ে আপনার সৃজনশীলতা, খুবই সাধারণ একটা টুলস ব্যবহার করে আপনি একটা গল্প সাজিয়ে নিতে পারছেন। একটা ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে আপনি অন্যের চিন্তায় প্রভাব ফেলতে পারছেন, এটাই ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ের সৌন্দর্য।’

এআই ও ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং
এআই আমাদের সামনে একটা সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে। আমার কাছে এআই হচ্ছে রাফখাতার মতো। আমিনুর রহমান বলেন, ‘মনে করেন আমি একটা শুটের পরিকল্পনা করব। এমন জায়গায় করতে চাই যেখানে আগে কখনো শুট হয়নি। বাংলাদেশে এমন অনেক জায়গা আছে যেসব জায়গাতে পোর্ট্রেট শুট বা কাপল শুট বা অফিসের একটা বিজ্ঞাপন চিন্তা করেন; এখন আপনি এআইকে প্রম্পট দিয়ে, ওই জায়গাটার একটা ছবি দিয়ে কিন্তু কাস্টম মডেল বসিয়ে নিতে পারছেন। যেটা হয়তো আগে আপনার করতে কষ্ট হতো। এ জায়গাটায় এখন এআই আর্ট ডিরেক্টর নামে নতুন একটি প্রফেশনের জন্ম হচ্ছে। প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ার তো অবশ্যই আমাদের মধ্যে আছে।

আরও পড়ুন

‘ধরুন, আপনি মুন্সিগঞ্জের ইদ্রাকপুর ক্যাসেলে একটা শুট করতে যাবেন। সেখানে এর আগে যাননি। কিন্তু আপনি গুগল করেই ইদ্রাকপুর ক্যাসেলের দশটা ছবি বের করেছেন। এখন যে এআই টুলসগুলো আছে—টালি, চ্যাটজিপিটি, জেমিনা এআই; সেখানে আপনি প্রম্পট দিয়ে ১০-১৫টা ফ্রেম বের করতে পারছেন। ফলে আপনি আগে থেকেই কীভাবে শুট করবেন, পরিকল্পনা করতে পারছেন। আগে কিন্তু স্থানে সশরীর গিয়ে পরিদর্শন করতে হতো, ছবি তুলে বোঝার চেষ্টা করা হতো। এখন এআইয়ের কারণে সেই সময়টা বেঁচে যাচ্ছে।’

আমিনুর রহমান বলেন, ‘আপনি যদি এআইকে সঠিক প্রম্পট দিতে পারেন, আপনার যদি আর্ট ডিরেকশনের বেসিক জানা থাকে, ডিজাইনার অ্যাঙ্গেল থেকে বলেন, ফটোগ্রাফার, ভিডিও শুট, কিংবা এডিটর অ্যাঙ্গেল থেকে বলেন, আপনি ‘সোরা’ টুলস দিয়ে একটা বেসিক ভিডিও বানিয়ে নিতে পারছেন যে আসলে ইদ্রাকপুর ক্যাসেলে ১০ সেকেন্ডের একটি রিলস কেমন হবে।’

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (২৮তম পর্ব)।

এআই কি আমাদের চিন্তাশক্তিকে সীমাবদ্ধ করছে?
আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমি খুবই সহজ একটি পদ্ধতি ব্যবহার করি। পদ্ধতিটি ব্যবহার করলে দেখবেন আপনার ক্রিটিক্যাল চিন্তাভাবনা, লজিক্যাল রিজওনিং ভালো হচ্ছে। সেটা হচ্ছে, খুবই অ্যানালগ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করবেন। সেটা হতে পারে বই পড়ার মাধ্যমে। ফিলোসফির বই পড়বেন, অন্য একটা মানুষ কী চিন্তা করছে, সে ধরনের বই পড়বেন। গান শুনবেন, সিনেমা দেখবেন এবং এক বসায় পুরোটা দেখবেন। এই তথ্য সংগ্রহ করাটা কিন্তু আপনার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে সম্পর্কিত। আপনি নিজের সম্পর্কে কতটা সচেতন, কতটা সেল্ফ ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন, কতটা রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট করতে পারেন; এই জিনিসটাতে যখন ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স ইনটেক করছেন, আপনি এআইয়ের দিক থেকে পরিপূর্ণ। তাহলেই আপনি সঠিকভাবে এআইকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।’

‘মনে রাখতে হবে, আমাদের পাঁচটা সেন্স—দেখতে পারি, শুনতে পারি, ঘ্রাণ শুঁকতে পারি, স্বাদ গ্রহণ করতে পারি এবং স্পর্শ করতে পারি। অন্যদিকে এআই কেবল দেখতে ও শুনতে পারে। সুতরাং টেকনিক্যালি একজন মানুষের থেকে এআই ৬০ শতাংশ সব সময় পেছনে থাকবে। এখন আপনি তথ্য সংগ্রহ করবেন মানুষের মতো, প্রসেস করবেন মানুষের মতো, এআইকে নির্দেশনা দেবেন মানুষের মতো, তারপর এআই আপনাকে যে আউটপুট দেবে সেটাকে মানুষের মতো আপনি উপস্থাপন করবেন। অর্থাৎ কাজের পুরো প্রক্রিয়াতে ৮০ শতাংশ মানুষের সংস্পর্শে হচ্ছে। মাত্র ২০ শতাংশ এআই করছে। সুতরাং এআই আপনার জায়গা দখল করবে না। এখন আমাদের দেখতে হবে আপনি কতটা সফলভাবে এআইকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন,’ যোগ করেন এই এআই–বিশেষজ্ঞ।