ব্যক্তিগত সহকারী হয়ে উঠছে এআই, তবে ভুল ব্যবহারে বিপদ!

বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম পর্ব।

ছবি: ফ্রিপিক

যত বেশি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, আবিষ্কার আসবে, নতুন নতুন টুলস আসবে, তত বেশি সমাধান আসবে। একদিক থেকে সব সময়ই এটার একটা ভালো দিক থাকে। আবার ভুল ব্যবহার করলে খারাপ দিক অটোমেটিক চলে আসবে। এআইকে পজিটিভ বলব। এটি আসায় আমাদের জীবন আরও সহজ হয়ে গেছে। অসংখ্য বিষয় বা কাজে সময়ের যে ব্যাপারটা ছিল, সেটা কমে এসেছে। এআই সমস্যা সমাধানে জীবনকে আরও দ্রুততর করে তুলছে। আবার এটার ভুল ব্যবহার করলে, সেটা কিন্তু রোধ করাও সম্ভব। তাই বলব পজিটিভ দিকটাই বেশি।

প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর সপ্তম পর্বে যুক্ত হয়ে কথাগুলো বলেন কাকতারুয়া ডট ওআরজির ফাউন্ডার আব্দুল্লাহ আল ইমরান। আলোচনার বিষয় ছিল ‘দ্য ডার্ক সাইড অব এআই: হয়েন ইনোভেশন মিটস এথিক্যাল ডিলেম্মা’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ১৮ জুন সন্ধ্যা ৭টায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সম্রাট।

আব্দুল্লাহ আল ইমরানের আলোচনায় উঠে আসে, মানুষের জীবনে এআইয়ের প্রভাব; এআই যখন পক্ষপাতদুষ্ট হয়, এর দায়টা আসলে কার? প্রযুক্তি নাকি প্রোগ্রামারের? এআইয়ের কারণে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কি হুমকির মুখে পড়ছে? এথিক্যাল এআই কী? অনলাইনে স্ক্যাম, হ্যাকিং থেকে কীভাবে দূরে থাকা যাবেসহ বিভিন্ন বিষয়।

এআইয়ের পক্ষপাতদুষ্টতা ও দায়
এআইয়ের পক্ষপাতদুষ্টতা নিয়ে টেক এনথুজিয়াস্ট আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যখন ব্যবহার করি, এটা যদি নেশা হয়ে যায়, তখন আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দ্বারা পরিচালিত হওয়া শুরু করি। একই রকম এআইয়ের ক্ষেত্রে। এআই দ্বারা যদি পরিচালিত হওয়া শুরু করি, তখন ব্যাপারটা নেগেটিভ দিকে বেশি যাবে। তাই বলব, সম্পূর্ণ দায়টা যে ব্যবহার করছে তার। একজন ব্যক্তি এআইকে কীভাবে ব্যবহার করছে।’

কেউ একজন সিদ্ধান্ত নিল উদ্যোক্তা হবে। তখন তার একটা ম্যান্টরশিপের দরকার হয়, গাইডলাইন দরকার হয়। সে হয়তো কারও কাছে পৌঁছাতে পারছে না, নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারছে না। অথবা সে ঠিক বুঝতে পারছে না কোন দিকে যাবে। ওই জায়গাটাতে সে এখন একটা ব্যক্তিগত সহকারী পেয়ে গেছে। চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করতে পারছে। মনের যত প্রশ্ন আছে, চাইলেই এআইকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারছে। এর মধ্য দিয়ে সংশয় ২০-৩০ শতাংশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। একটা দিকনির্দেশনা পাচ্ছে। আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘এখানে এআইয়ের কিন্তু কোনো দোষ দিতে পারবেন না।’

অনার-বন্ধুসভার ধারাবাহিক লাইভ টেক শো (সপ্তম পর্ব)।

এই সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘গ্রাফিকস ডিজাইনের ক্ষেত্রে এআই অনেক সুন্দর সুন্দর ডিজাইন করে দিচ্ছে, নতুন নতুন আইডিয়া দিচ্ছে। আর যখন আপনি একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেই ডিজাইনটাতে নতুন নতুন ইনগ্রেডিয়েন্ট যোগ করবেন, বিষয়টা আরও সুন্দর হয়ে উঠবে। তার মানে পুরো নিয়ন্ত্রণটাই আপনার হাতে থাকছে। আর নিয়ন্ত্রণটা আপনার হাত থেকে তখনই চলে যাবে, যদি আপনার কর্মদক্ষতা না থাকে বা আপনার মনে হতে পারে যে এআই তো সব করে দিচ্ছে, আমি কেন করব! নিজের ভেতর থেকে যখন কোনো কিছু করার স্পৃহা, দক্ষতা হারিয়ে যাবে, তখন নিয়ন্ত্রণটা সম্পূর্ণ এআইয়ের হাতে চলে যাবে।’

এআইয়ের কারণে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা কি হুমকির মুখে পড়ছে?
আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘সত্যটা হচ্ছে, যেদিন থেকে আপনি অনলাইনে যুক্ত হয়ে গেলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুসারে আপনার ব্যক্তিগত বলে আর কিছু থাকছে না। পুরো জিনিসটাই নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ধরুন, আপনি কোনো একটা সফটওয়্যার বা অ্যাপস ইন্সট্রল করবেন, ধরে নিচ্ছি এটা হোয়াটসঅ্যাপ। আমরা জানি হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজগুলো ইনক্রিপটেড, কেউ দেখতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে যুদ্ধ চলছে। এই প্রেক্ষাপটে ইরান যদি সিদ্ধান্ত নেয় মেটার সব পণ্য তারা নিষিদ্ধ করে দেবে। কারণ, ওরা ভাবছে ওদের তথ্যগুলো হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে লিক হচ্ছে।’

‘একইভাবে এআইয়ের ক্ষেত্রে আমাদের ডেটা বা তথ্য দিতে হচ্ছে। যদি নিজেদের সম্পর্কে জানতে চাই, তাহলে নিজেদের ডেটা আগে এআইকে দিতে হবে। গুগল সার্চ ইঞ্জিনেও একই রকম। এই জায়গাটায় তথ্যের ব্যাপারটা মানুষ খুব সহজেই অ্যাকসেস করতে পারবে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যখন আপনি কোনো একটা অ্যাপস বা সফটওয়্যার ইন্সট্রল করবেন, তখন তারা আপনার কাছে ক্যামেরা, মাইক্রোফোনসহ বিভিন্ন কিছুর অ্যাকসেস চায়। তখন আপনি কিন্তু সেই অ্যাকসেস দেন। কথার কথা আপনি অ্যাকসেস দিলেন না। তার মানে কিন্তু এই না যে তারা অ্যাকসেস পাচ্ছে না! এটা কেবল ফরমালিটিস। একটা উদাহরণ দিই, আপনার অনলাইন সংযোগ দেওয়া আছে। এমন সময় জুতা নিয়ে হয়তো কারও সঙ্গে কথা বললেন। দেখবেন কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার নিউজ ফিডে জুতার বিভিন্ন বিজ্ঞাপন চলে আসছে। অর্থাৎ আপনি প্রতিমুহূর্ত অনলাইন ট্র্যাকিংয়ের মধ্যে আছেন। আর নিরাপদ থাকতে চাইলে ট্র্যাকিংয়ের বাইরে থাকতে হবে।’

তবে এই জায়গাটাতে দেশভিত্তিক বিভিন্ন নিয়মনীতি আছে বলে জানান আব্দুল্লাহ আল ইমরান। তিনি বলেন, ‘এটা পজিটিভ দিক। এ ছাড়া টেক কোম্পানিগুলোর নিজস্ব নিয়মনীতি থাকে, ল অ্যান্ড ইনফোর্সমেন্ট এজেন্সির একটা ব্যাপার থাকে। এআই চাইলেও আপনার তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারবে না। এই দিক দিয়ে ধরে নেওয়া যায় আপনি নিরাপদ।’

এথিক্যাল ও নন-এথিক্যাল এআই
মানুষ হোক কিংবা প্রযুক্তি—সবকিছুরই পজিটিভ-নেগেটিভ দুই দিকই থাকে। আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ‘একইভাবে আপনি এআইকে এথিক্যালভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। আবার নন-এথিক্যালভাবে ব্যবহার করারও অসংখ্য উপায় আছে। কাজে গতি বাড়ানো, কাজে আরও নতুনত্ব আনা, দক্ষতা বাড়ানো— এই ধরনের পজিটিভ কাজের জন্য এআইকে ব্যবহার করলে এটাকে এথিক্যাল এআই হিসেবে ধরা হয়।’

‘নন-এথিক্যাল এআই হিসেবে মানুষ যেগুলোকে মনে করে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডিপফেক। মানুষ মনে করে ডিপফেক মানেই নেগেটিভ। অথচ আপনি চাইলেই কিন্তু ডিপফেককে পজিটিভ কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। যেমন সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কোনো কাজ হতে পারে। অন্যদিকে চ্যাটজিপিটি দিয়ে আপনি চাইলেও নন-এথিক্যাল কোনো কিছু করতে পারবেন না। তাদের নিজস্ব নিয়মনীতি রয়েছে।’

উল্লেখ্য, লাইভ শোটির প্রতিটি পর্বে রয়েছে অনারের বিভিন্ন প্রোডাক্ট কিংবা প্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ টেক কুইজ। প্রতি পর্বে কুইজে অংশগ্রহণকারী ভাগ্যবান একজন বিজয়ী জেতার সুযোগ পাচ্ছেন অনার এক্সসেভেন লাইট ইয়ারবাডস। ১১ জুন অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ পর্বে কুইজ বিজয়ী হয়েছেন ফারজানা আক্তার।