টেক শো
শুধু আইডিয়া নয়, সফল স্টার্টআপের জন্য দরকার যেসব প্রস্তুতি
বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৩ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ১৮তম পর্ব।
বাংলাদেশে টেক স্টার্টআপ শুরু করার ক্ষেত্রে সবাই মূলত আইডিয়ায় বেশি মনোযোগ দেয়। চ্যালেঞ্জ থেকে যায় তথ্যগত দিক দিয়ে। অর্থাৎ টার্গেট অডিয়েন্স বা কাদের জন্য এই উদ্যোগ, কতজন মানুষকে সেবা দেওয়া যাবে এবং পণ্যের বাজার কত বড়। অনেকে এই তথ্যগত দিকটি নিয়ে গবেষণা না করেই কাজ শুরু করে। ফলে অনেক সময় আইডিয়া ভালো হলেও ব্যর্থ হতে হয়।
এ বিষয়ে টেক প্রতিষ্ঠান সফটেকোর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও কাউসার আহমেদ বলেন, ‘সবাই মূলত আইডিয়ায় বেশি ফোকাস করে। সমস্যা থেকে যায় তথ্যগত গ্যাপ। তথ্যভিত্তিক চিন্তা করার ক্ষমতাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর ১৮তম পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত হয়ে তিনি কথাগুলো বলেন।
বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনার বিষয় ছিল—‘ফ্রম আইডিয়া টু টেক স্টার্টআপ: বিল্ড সামথিং ফ্রম স্ক্রেচ’। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি রুবাইয়াত সাইমুম চৌধুরী।
টাকাপয়সা বা রিসোর্স কম থাকলেও কীভাবে স্টার্টআপ শুরু করব
কাউসার আহমেদ বলেন, ‘ধরুন, আমার একটা সুন্দর আইডিয়া আছে। আমি জানি, আইডিয়াটা বড় কোনো ইন্ডাস্ট্রির সমস্যা সমাধান করতে পারবে। আইডিয়া ভালো হলে তহবিল পাওয়াটা এখন আগের মতো আর কঠিন না। তারপরও বলব, রিসোর্স কম থাকলে সহপ্রতিষ্ঠাতা এমন নির্বাচন করতে হবে, যাতে তথ্যগত দিকটা তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায়। অর্থাৎ এমন সহপ্রতিষ্ঠাতা নেওয়া, যিনি তথ্যপ্রযুক্তি ভালো বোঝেন, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ভালো বোঝেন। সুতরাং টিম এমনভাবে গঠন করতে হবে, যাতে রিসোর্স কম থাকলেও আইডিয়াটা একটা পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়। আর কারও যদি তহবিল থাকে, সে ক্ষেত্রে সে এই অংশটা নিজেই করে পরবর্তী ধাপে যেতে পারবে।’
রিসোর্স কম থাকলে প্রথমেই নির্দিষ্ট খরচের হিসাবের পরিকল্পনা করে বড় অফিস নেওয়া—এই ব্যাপারটা না করাই ভালো বলে মনে করেন এই টেকবিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘শুরুতে নিজের বাসার মধ্যেই কাজের পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে কাজ শুরু করা যেতে পারে। আমিও আমার উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেছিলাম বেডরুম থেকে। তারপর একটা পর্যায়ে গিয়ে ছোট অফিস নিই, দুজন কর্মী নিই। এভাবে ধীরে ধীরে উদ্যোগটা বড় হলো। তাই বলব, এটা কোনো বড় সমস্যা না।’
স্টার্টআপ শুরুর সময় বড় মার্কেটিং বাজেট কি রাখা দরকার?
যদি রিসোর্স কম থাকে তাহলে প্রথম থেকে একটা মার্কেটিং বাজেট নিয়ে নামা ঠিক হবে না। এখানে পারসোনাল ব্র্যান্ডিংটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকটিভ থাকা, বিভিন্ন লাইভ ইভেন্টে যাওয়া, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা, বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়ে নিজের পণ্যকে তুলে ধরা।
কাউসার আহমেদ বলেন, ‘যেহেতু উদ্যোগটা নতুন, আসলেই এটা মার্কেটে ভ্যালু পাচ্ছে কি না, মানুষ এটাকে কীভাবে দেখছে—এটা বোঝার জন্য প্রথমেই মার্কেটে বিনিয়োগ না করে; এখানে পারসোনাল ব্র্যান্ডিংটা খুব প্রয়োজনীয়। নিজস্ব নেটওয়ার্কটাকে কাজে লাগাতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব মানুষ আছে, তাদের মধ্যেই কিন্তু ক্রেতা থাকে। এখন এই ক্রেতারা যদি আপনার পণ্য না কেনে, তাহলে অন্য মানুষ কেন কিনবে? যদি দেখেন ক্রেতা পাচ্ছেন এবং লভ্যাংশ আসছে, তখন ধীরে ধীরে একটা মার্কেটিং টিম গঠন করা যেতে পারে।’
স্টার্টআপ শুরু করতে মানসিক প্রস্তুতি
উদ্যোক্তা জীবনটা সম্পূর্ণ একা একটা সফর বলে মনে করেন কাউসার আহমেদ। তিনি বলেন, অন্য উদ্যোক্তারাও হয়তো আপনাকে সমর্থন না–ও করতে পারে। এই বিষয়টা মেনে নিয়েই এগোতে হবে। সফলতা আসতে সময় লাগবে।
উদ্যোক্তা কী, ব্যবসা কী—এটা বুঝতেই নবীনদের দুই-তিন বছর লেগে যায়। পুরো ব্যাপারটা একটা মেশিনের মতো, অনেকগুলো উপাদান থাকে। যেমন মার্কেটিং, সেলস, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, টেকনিক্যাল টিম, কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট আছে। এই সব উপাদান সম্পর্কে আপনার জানাশোনা করতে হবে। আপনি হয়তো টেকনিক্যাল ব্যাপারগুলো ভালো বুঝবেন না, কিন্তু এই টিমের সদস্যদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখতে হবে। অন্য বিভাগগুলোর ক্ষেত্রেও একই। তারা আপনার প্রতিষ্ঠানকে কি সঠিক পথে নিয়ে যাচ্ছে, নাকি ভুল পথে? তা বুঝতে হবে।
এই সফরে নিজেকে সব সময় অনুপ্রাণিত রাখতে, নিজেকে ভবিষ্যতের কোনো একটি জায়গায় দেখতে হবে। তারপর নিজেকে বলতে হবে, আমি যদি লেগে থাকি, তাহলে এত বছর পর ওই জায়গায় আমি থাকতে পারব। অথবা চিন্তা করতে পারে, এই পণ্যের কারণে মানুষ আমাকে চিনবে।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট
আমাদের দেশে উদ্যোক্তাদের বেশি স্ট্রাগল করতে হয়। সমাজে এখনো মানুষ বিষয়টাকে সেভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। কোনো একটা ব্যবসা শুরু করলে দেখবেন অনেকেই কটু কথা শোনাচ্ছে। পরিবার থেকেও একধরনের বাধা আসে। অন্যদিকে চাকরিতে ঢুকলে সবাই অভিনন্দন জানাবে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। তবে ধীরে ধীরে এ অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।