টেক শো
ডিজিটাল মিডিয়ায় চাকরির সুযোগ, তরুণেরা কোথায় পিছিয়ে
বন্ধুসভার বন্ধুদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে এবং প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানাতে প্রথম আলো বন্ধুসভা প্রথমবারের মতো আয়োজন করেছে ধারাবাহিক টেক শো। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মোবাইলের সৌজন্যে প্রতি সপ্তাহের বুধবার রাত ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা পর্যন্ত এই টেক শো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় ১৭তম পর্ব।
আগামী দু–এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম সারির ৫০টি মিডিয়া যদি ডিজিটালে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেয়, তাহলে ৩-৪ হাজার কর্মী দিয়ে হবে না। আরও বেশি লাগবে। একটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালাতে গেলে কিন্তু শুধু কনটেন্ট ক্রিয়েটর, ক্যামেরাম্যান, বা ভিডিও এডিটর লাগে না। এখানে আরও কিছু পদবি রয়েছে। যে কেউ এই জায়গাটায় আসতে পারে বলে মনে করেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন সেলিম।
প্রথম আলো বন্ধুসভার ভার্চ্যুয়াল টেক শোর ১৭তম পর্বে আলোচক হিসেবে যুক্ত ছিলেন সময় টেলিভিশনের হেড অব ব্রডকাস্ট অ্যান্ড আইটি সালাউদ্দিন সেলিম। আলোচনার বিষয় ছিল—‘অপরচুনিটিস ফর ইয়ুথ ইন ডিজিটাল মিডিয়া’। বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড অনার মুঠোফোনের সৌজন্যে ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে আটটায় এটি অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি বন্ধুসভার ফেসবুক পেজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সঞ্চালনা করেন ঢাকা মহানগর বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ সম্রাট।
ডিজিটাল মিডিয়ায় তরুণদের দক্ষতা ও সুযোগ
• ডিজিটাল কনটেন্ট এক্সিকিউটিভ: প্রতিটি প্ল্যাটফর্মেই একজন ডিজিটাল কনটেন্ট এক্সিকিউটিভ থাকেন। তাঁদের কাজ হচ্ছে যেকোনো তৈরি কনটেন্টকে ডিজিটাল ফ্রেন্ডলি করে ডিজিটাল বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া। এখানে এসইউর একটা অংশ আছে, আপলোডিং আছে, কনটেন্টের ট্রেন্ড বুঝে আপলোড করার ব্যাপার আছে।
• সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পলিসি: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন আপনি একটা কনটেন্ট দিলেন। কিন্তু পলিসিগত ইস্যুর কারণে প্ল্যাটফর্মে কিছু ভায়োলেশন পলিসি এসে আটকে থাকে, যেটা হয়তো চ্যানেলের জন্য আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিকর না। তবে বাস্তবে ক্ষতিকর। যেমন সেটা সিপিএম ওয়েট কমিয়ে দেয়, আয় কমে যায়। তাই এই জায়গাগুলোতে কাজ করার জন্য ডিজিটাল আইন বোঝে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পলিসি বোঝে, এমন ছেলেমেয়ে দরকার। এমন ছেলেমেয়ে খুঁজে পাওয়া যায় না।
• এআই: এআই দিয়ে একটা কনটেন্ট দ্রুত তৈরি করা যায়। এআই প্রম্পট দিয়ে কনটেন্টের অ্যানিমেশন তৈরি করা থেকে শুরু করে ইনফোগ্রাফিকস করা যায় খুব স্বল্প সময়ে। এখানে নির্ভরতা কমে আসতেছে। কেউ যদি এআই নিয়ে ভালো বিশেষজ্ঞ হতে পারে, তাঁর জন্য বিশাল একটা সুযোগ আছে।
• ডিজিটাল মার্কেটিং: ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে অনেকেই মনে করে শুধু ফেসবুকে বুস্ট করা। এটা হাস্যকর ব্যাপার। এখানে কলাবোরেশন টেকনিক জানাটা জরুরি। একটা কনটেন্ট থেকে কীভাবে বিভিন্ন উপায়ে আয় করবেন। দিন শেষে আয়টা মুখ্য। সে জন্য ডিজিটাল ও অ্যানালগ উভয় মার্কেট সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকতে হবে। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি কোম্পানিরই এখন ডিজিটাল বিভাগ রয়েছে।
• মোজো বা মোবাইল সাংবাদিকতা: একটা কনটেন্ট স্পট থেকে নিজেই স্ক্রিপ্ট করবেন, নিজেই এডিট করবেন, নিজেই পাবলিশ করবেন। কেউ যদি মনে করে, সে এভাবে মোবাইল দিয়ে কনটেন্ট তৈরি করতে পারবে, তাহলে তাঁর জন্য বড় একটা সুযোগ রয়েছে।
• গ্রাফিকস: ডিজিটাল গ্রাফিকস ও অ্যানালগ গ্রাফিকসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ডিজিটাল গ্রাফিকস নিয়ে ভালো কাজ জানা লোক এখনো কম। এই জায়গায় প্রচুর লোক দরকার।
প্রতিষ্ঠান বলছে লোক খুঁজে পাচ্ছে না, তরুণেরা বলছে সুযোগ পাচ্ছে না
সালাউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘ধরেন একটা চাকরির বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো। ৫০ জন লোক সিভি পাঠাল। এর মধ্যে ওই নির্দিষ্ট পদের জন্য ৫ জন যোগ্য লোকও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কেন? তাঁদের জিজ্ঞেস করা হলো, কখনো মোবাইলে ভিডিও এডিটিং করছেন, করেনি; কখনো পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন তৈরি করেছেন, করেনি। এমন গ্যাপ কিন্তু থেকে যাচ্ছে।’
ডিজিটাল মিডিয়ায় আসার জন্য কেউ যদি অন্তত তিন মাস কষ্ট করে, তাহলেই শেখা হয়ে যায় বলে মনে করেন সালাউদ্দিন সেলিম। বলেন, কী কী শিখতে হবে? বেসিক ভিডিও এডিটিং, বেসিক গ্রাফিকস ডিজাইন, ফেসবুক-ইউটিউবের ভালো কনটেন্ট অবজার্ভ করা। এই ক্ষুধাটা থাকতে হবে। তিনি বলেন, ‘আগে আমরা কনটেন্ট দেখার জন্য মানুষ খুঁজতাম। আর এখন মানুষের চাহিদামাফিক কনটেন্ট নির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে অটোমেটিক চলে যাচ্ছে। এআইয়ের মাধ্যমে এই রিকমেন্ডেশন তৈরি হয়ে যাচ্ছে।’
‘কনটেন্টের এসইউ নিয়ে এত বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। কনটেন্ট কীভাবে আপলোড দেয়, একটা সুন্দর শিরোনাম, থাম্বলেইন বানানোর জন্য জানতে হবে গ্রাফিকস’, যোগ করেন ডিজিটাল মিডিয়ায় তথ্যপ্রযুক্তির এই বিশেষজ্ঞ।