হাল ছেড়ো না বন্ধু

২০১৬ সালে বরিশাল বন্ধুসভার আনন্দ আয়োজন।          (ফাইল ছবি)
২০১৬ সালে বরিশাল বন্ধুসভার আনন্দ আয়োজন। (ফাইল ছবি)

আপনিও কি দৌড়াচ্ছেন!

নতুন কিছু করে পৃথিবীকে চমকে দেওয়ার জন্য?

সত্যি করে ভেবে বলুন তো, প্রতিদিন এত কিছু করার, এত কিছু ভাবার উদ্দেশ্য কী?

স্বপ্নের বাস্তবায়ন? সফলতা অর্জন?

হ্যাঁ বন্ধুরা। একদম তা–ই হয়তো। আমরা সবাই সফলতার পেছনে দৌড়াই—কেউ সফলতার মানে বুঝে, আবার কেউবা না বুঝে। সফলতা—বিষয়টি ভালোভাবে না বুঝে যদি আমরা দৌড়াতে থাকি, তাহলে এই প্রতিযোগিতায় ক্লান্তি ও হতাশা ঠিকই আসবে, কিন্তু সফলতাকে ছোঁয়া হয়তো হবে না কোনো দিন। সফলতা—এটি কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো গন্তব্য নয়, বরং এটি একটি অর্জনের যাত্রা। সহজ ও স্পষ্ট করে বলা যায় যে জীবনে চলার পথে প্রতিক্ষণে, প্রতিনিয়ত ছোট-বড় অর্জনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, তবেই সফল হওয়ার স্বাদ পাওয়া যাবে।

সফলতার গোপন সেই সূত্র: সফলতা = ব্যর্থতা + হাল না ছাড়া।

আমরা সবাই জানি, ‘ব্যর্থতা’ সফলতার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ‘ব্যর্থতাই’ সফলতার সোপান। কিন্তু শুধু ব্যর্থতা দিয়ে যদি জীবন ভরিয়ে ফেলি, তাহলে কী হবে? তাই সূত্র অনুযায়ী, ‘হাল না ছাড়া’ বা সফলতা অর্জনের আগে পর্যন্ত ‘লেগে থাকার প্রচেষ্টা’ চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা তৈরি করতে হবে।

সফলতা অর্জনের জন্য চেষ্টায় মগ্ন স্বপ্নবান তরুণেরা ভুলেই যান সেই সব সফল মানুষের হাল না ছাড়ার গল্পগুলো। টমাস আলভা এডিসনের বাল্ব আবিষ্কার করতে গিয়ে হাজারবার ব্যর্থ হওয়ার গল্পটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে খেয়াল করে হয়তো দেখিনি, তাঁর হাল না ছাড়ার প্রতিজ্ঞা। চিন্তা করে বলুন তো, এডিসন যদি ৯৯৯তম ব্যর্থ চেষ্টা করার পর হতাশ হয়ে ‘হাল ছেড়ে দিতেন’, তাহলে কোনো দিনও কি তিনি জানতে পারতেন সফলতার ঠিক কতটা কাছাকাছি এসে তিনি থামিয়ে দিলেন নিজেকে? এই ভুলই আমরা করি। ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’—উক্তিটি পুঁথিপাঠের মতো পড়ি, কিন্তু একবারের পর দুইবার বা সর্বোচ্চ তিনবার চেষ্টা করার পর যদি ব্যর্থ হই, তাহলে ‘হাল ছেড়ে দিই’। নিজকে নিজেই থামিয়ে দেওয়ার এই প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তাই হেরে গেলে হাল ছাড়া যাবে না। চেষ্টা করার পদ্ধতি বা পরিকল্পনা পরিবর্তন করা যেতে পারে। একই কাজ ভিন্ন উপায়ে করার নকশা করা যেতে পারে, কিন্তু হাল ছেড়ে দেওয়ার মতো ভুল করা যাবে না।

চলুন আরও একটা সূত্র জেনে নিই—অর্জন = বুদ্ধি ‍+ প্রচেষ্টা।

আমাদের জীবনে অনেক ‘অর্জন’ই কিন্তু সফলতার স্বাদ দেয়। জীবনে চলার পথে ‘অর্জন’ থেমে গেলে কিন্তু একজন সফল মানুষকে আমরা ব্যর্থ বলি । আর এই অর্জন নির্ভর করে বুদ্ধিমত্তা ও প্রচেষ্টার ওপরে।

ধরুন, আপনার একজন বন্ধুর মেধা অনেক, অঙ্কের পরিমাপে ১০,০০০। আর সেই বন্ধুর প্রচেষ্টার পরিমাণ শূন্য। তাহলে তাঁর অর্জন কত? শূন্য (অর্জন ০ = বুদ্ধি ১০,০০০ X ০ প্রচেষ্টা) । আবার আপনার আরেক বন্ধুর মেধা খুব বেশি নয়। ধরুন মাত্র ১। আর তাঁর প্রচেষ্টা ১০,০০০ পরিমাণ । তাহলে তাঁর অর্জন কতগুলো? ১০,০০০ পরিমাণ (অর্জন ১০,০০০ = বুদ্ধি ১ X ১০,০০০ প্রচেষ্টা)। তাহলে লক্ষ করে দেখুন তো অর্জন বা সফলতা কার ওপর নির্ভর করে—চেষ্টার ওপর, মেধার ওপর নয়। চেষ্টা মানেই বারবার ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও হাল না ছেড়ে সফলতা অর্জনের জন্য এগিয়ে যাওয়া ।

সম্পূর্ণ পড়ার পর কোন বিষয়টি মগজে সঞ্চয় করবেন:

স্বপ্ন দেখুন > অনেক বড় স্বপ্ন, যা আপনাকে ঘুমাতে দেয় না > চেষ্টা শুরু করুন অর্জনের > ব্যর্থ হতে পারেন > হাল না ছেড়ে বারবার চেষ্টা করুন > অর্জন হবে > আর চলমান শত শত অর্জনই আপনাকে সফলতার স্বাদ দেবে।

লেখক: শিক্ষক, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক, প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ।