সিঙ্গাপুরের পরান থেকে-০১

নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম আমার। ছোটবেলা থেকেই সেই পরিবারের আদবকায়দায় বড় হয়েছি।
মা-বাবার কড়া শাসন ছিল সব সময়। ছাত্র হিসেবে ভালো না হলেও পড়ালেখায় নিয়মিত ছিলাম। ছোট-বড় অনেক স্বপ্ন দেখতাম, কখনো কোনো কোনো স্বপ্ন পূরণ হতো, আবার কোনোটা ভুলে যেতাম। ইচ্ছা ছিল বড় কিছু হব, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ব। সেভাবেই চলছিল সবকিছু। এর মধ্যে মা-বাবা আমাকে দেশের বাইরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তাঁদের স্বপ্ন ছিল আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে।
তাই চোখ বুজে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে উড়াল দিলাম সিঙ্গাপুরে। ২০১৭ সালের জুলাই মাস, ঢাকায় এয়ারপোর্টে যখন প্রিয়জনেরা বিদায় দিল, তারপরই বুঝে নিয়েছিলাম আমার জীবন নতুন কোনো মোড় নিতে যাচ্ছে। সিঙ্গাপুরে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টে অ্যাসিস্ট্যান্ট টেকনিশিয়ান পদে অ্যাপয়েন্টমেন্ট হলো। এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় চাঙ্গি বিমানবন্দরে নেমে দুচোখ ভরে দেখছিলাম সবকিছু। ঠিক সেই মুহূর্তে মনে হয়েছিল আমার মতো হাজারো স্বপ্নবাজ তরুণ ঠিক এই এয়ারপোর্টে নেমে এখন এ দেশের জন্য কাজ করছে, তাদের প্রথম দিনের অনুভূতি কি আমার মতোই ছিল!
নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলাম!
চাঙ্গি বিমানবন্দর ঘুরে দেখছিলাম। শপিং মল, খাবার দোকান, ব্যাংক, টেলকো শপ থেকে শুরু করে কী নেই এই বিমানবন্দরের ভেতরে। একজন সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ৪ ঘণ্টা পর আমাকে রিসিভ করতে এলেন।
শুরু হলো যাত্রা।
চার লেন আর ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে, রাস্তার পাশ দিয়ে সবুজ গাছ আর গাছ, কোথাও কোথাও ছোট জঙ্গলের ভেতর দিয়ে রাস্তা। বিশ্বসেরা সব বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ, ফেরারি, অডি আর রোলস রয়েজ খুব স্পিডে ছুটে চলছে। মনে হচ্ছে স্বপ্নই দেখছি।
আমাদের যাত্রা অফিসের দিকে, হঠাৎ মাটির নিচের অন্ধকার টানেলের মধ্যে ঢুকে পড়ল গাড়ি, ভেতরে সোডিয়াম বাল্বের আলো যেন আমায় আলিঙ্গন করে চলেছে। গাড়িতে ফুল ভলিউমে বেজেই চলছে রেডিও।
লি ইউ লিয়াং ড্রাইভ করছে, পাশের সিটে আমি বসা। সে আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করছিল, আমি অনর্গল ইংরেজি না বলতে পারলেও তখন ছোট ছোট করে উত্তর দিলাম। পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে ছবিও তুলছি মাঝেমধ্যে।
দুপুর ১২টা। অফিসে পৌঁছে কাগজপত্রের কাজ করে দায়িত্ব বুঝে নিলাম। ততক্ষণে মাথা ঘুরছিল। প্রায় আট ঘণ্টা না খেয়ে। অফিসের নিচে কুক হাউসে দুপুরের খাবার খেলাম। সাদা ভাত আর চায়নিজ কারি চিকেন।
সেখান থেকে রওনা দিলাম মেডিকেল সেন্টারে, সেখান থেকে সোজা ডর্মে।
১৬টি ব্লকে প্রায় ২০ হাজার মানুষ থাকেন এই লজে।
বাঙালি, চীনা, তামিল, থাই, বার্মিজ মানুষ দিয়ে ভরা।
কত প্রজাতির মানুষ!