যে কথা হয়নি বলা

যে কথা হয়নি বলা।
যে কথা হয়নি বলা।


প্রিয়তমা নাওমি,

আমার দৃঢ়বিশ্বাস, তুমি বেশ ভালো আছ। ভালো থাকাটাই খুব স্বাভাবিক। ভালো থাকবে বলেই খুব তাড়াহুড়ো করে চলে গিয়েছিলে। তোমার বিরহের আগুন বুকে নিয়ে আমিও বেশ ভালোই আছি।
আচ্ছা, আমার কথা কি কখনো মনে পড়ে? নাকি আমাকে গিয়েছ ভুলে? তবে তোমার কথা আমার ভীষণ মনে পড়ে। মনে পড়বেই না কেন, তুমি যে মিশে আছ আমার অস্তিত্বজুড়ে। প্রতি রাতে দূর আকাশপানে তাকিয়ে থাকি। চাঁদ-তারা-মেঘদের সঙ্গে প্রতিদিনই কথা হয়। কেউ দিতে পারে না তোমার খোঁজ। তবুও আমি তারার মেলায় তোমাকে খুঁজি রোজ। কোথায় তুমি, কোথায় হঠাৎ করে হারিয়ে গেলে? আমি যে বসে আছি তোমার অনন্ত অপেক্ষায়। যে কথাটি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে কখনো বলতে পারিনি, সেই কথাটি এখন রোজ রাতে তারার মেলায় অবলীলায় বলতে পারি। এখন আর ভয় নেই। মাঝেমধ্যে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলি, ‘অনন্যা, আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ তুমি কি কখনো আমার চিৎকার শুনতে পাও?

আচ্ছা, তুমি তো আমার ভালো বন্ধুও ছিলে। তুমি কি কখনো বোঝনি, আমি যে তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি? কত দিন কতভাবে চেষ্টা করেছি, কিন্তু সাহস করে সেটা কখনো বলতে পারিনি। তুমি তো আমার পাগলামির সবকিছুই নিজ চোখে দেখেছ। কখনো হেসেছ, আবার কখনো বিরক্ত হয়েছ। যখন তুমি আমার পাগলামি দেখে হাসতে, নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মনে হতো। আবার যখন বিরক্ত হতে, তখন ভীষণ ভয় পেতাম। সত্যি কথা বলতে, তুমি ভীষণ রাগী ছিলে। তাই ভয়ে আমার ভালোবাসার কথা কখনো বলার সাহস পাইনি। আরও ভয় পেতাম, যদি আমাদের সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যায়। তবে আমি মনে মনে বিশ্বাস করতাম, তুমি সবকিছুই বুঝতে। আমার না–বলা প্রতিটি কথাই উপলব্ধি করতে। কখনো মনে হতো, তুমিও বুঝি আমাকে আমারই মতো লুকিয়ে ভালোবাসতে।
তোমার কি মনে পড়ে, একদিন কলেজের ক্লাস রুমে আমি ছাড়া আর কেউ ছিল না। শুধু আমাকে একা ক্লাস রুমে বসা দেখে তুমি অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করেছিলে বাকিরা কোথায়? তোমার প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তোতলাতে শুরু করি। তখন তুমি বিরক্ত হয়ে বেশ জোরে এক ঝাড়ি মেরেছিলে। সেদিন পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্লাস রুমে তোমাকে একা পেয়েও ভালোবাসি কথাটি বলতে পারিনি। শেষ পর্যন্ত এক দৌড়ে পালিয়ে যাই। অনেক চেষ্টা করেও যখন বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলাম, তখন সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম, চিঠি লিখে আমার ভালোবাসার কথা তোমাকে জানাব। তাই একদিন জীবনের প্রথম প্রেমপত্র লিখে আমাদের আরেক বন্ধু সুমনের মাধ্যমে তোমার হাতে পৌঁছে দিলাম। সেই চিঠিটা তুমি পড়ার আগেই হঠাৎ করে দৌড়ে এসে তোমার হাত থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে পালিয়ে যাই।
প্রতিদিনই ভাবতাম, তোমাকে আমার ভালোবাসার কথা আজই বলব, কিন্তু কখনো কল্পনাও করিনি কথাটি বলার আগেই আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাবে। খুব বেশি দেরি করে ফেলে ছিলাম, যার মাশুল সারাটা জীবন ধরে দিচ্ছি আর অনুশোচনায় ভুগছি। তুমি আমার মুখের ওপর না বলে দিলেও এতটা কষ্ট পেতাম না, যতটা কষ্ট পেয়েছিলাম তোমার হারিয়ে যাওয়ার পর। যদি এই পৃথিবীর বুকে কোন এক প্রান্তেও তুমি থাকতে, তবুও মনটাকে কিছুটা হলেও সান্ত্বনা দিতে পারতাম। বিদায় না নিয়েই অকালে অজানায় হারিয়ে গেলে। জানি, আজও আমার চিঠি তোমার কাছে পৌঁছাবে না। যদি অদৃশ্য থেকেও আমার এই চিঠি তোমার চোখে পড়ে, তবে জেনে নিয়ো, ‘তোমাকে ভালোবাসি’—এই কথাটি বলতে না পারাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস ছিল।

জানি, এপারে না হোক, ওপারে আবার আমাদের দেখা হবে। তখন তোমার মুখের ওপর চটজলদি বলে দেব, ‘আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।’ তুমি স্বর্গ দুয়ারে আমার অপেক্ষায় থেকো।

ইতি
তোমার ভিতুর ডিম