বেগুন মোটেও গুণহীন নয়


পবিত্র রমজান মাসে ইফতারে বেগুন পরিচিত একটি সবজি। ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু ও বেগুনি বাংলাদেশের ইফতারের ভীষণ জনপ্রিয় খাবার।
বেগুণ আমাদের দেশে সহজলভ্য একটি সবজি। প্রায় সারা বছরই এই সবজি পাওয়া যায়।
তবে আমাদের দেশে বেগুন শীতকালীন সবজি হওয়ার জন্য শীতকালেই এই সবজি টাটকা থাকে বেশি।
বেগুনে খারাপ ধরনের কোনো কোলেস্টেরল নেই।
কোলেস্টেরল হলো চর্বিজাতীয় উপাদান, যা রক্তে জমে। যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, তারা কোনো রকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই খেতে পারে বেগুন। কারণ, বেগুনে কোনো চর্বি নেই।
পাকস্থলী, কোলন, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্ত্রের (এগুলো পেটের ভেতরের অঙ্গ) ক্যানসারকে প্রতিরোধ করে। যেকোনো ক্ষতস্থান শুকাতে সাহায্য করে বেগুন।
কারণ বেগুনে রয়েছে ভিটামিন ‘সি’।
দেহের কোথাও কাটা, ছেঁড়া, ঘা শুকাতে সাহায্য করে ভিটামিন ‘সি’।
বেগুনে আয়রণও রয়েছে, যা রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে। তাই রক্তশূন্যতার রোগীরাও খেতে পারে এই সবজি। এতে চিনির পরিমাণ খুবই সামান্য। ডায়াবেটিসের রোগী, হৃদরোগী ও অধিক ওজনসম্পন্ন ব্যক্তিরা নিঃসংকোচে খেতে পরে বেগুন।
বেগুনে রয়েছে রিবোফ্ল্যাভিন নামক উপাদান। এই উপাদান জ্বর হওয়ার পরে মুখ ও ঠোঁটের কোণের ঘা, জিহ্বার ঘা প্রতিরোধ করে। দূর করে জ্বর জ্বর ভাব।
বেগুন ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ‘ই’ এবং ‘কে’সমৃদ্ধ সবজি। ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, চোখের যাবতীয় রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
আর ভিটামিন ‘সি’ ত্বক, চুল, নখকে করে মজবুত। দেহে রক্ত জমাট বাঁধার বিরুদ্ধে কাজ করে ভিটামিন ‘ই’ ও ‘কে’। এই ভিটামিন চারটি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে বহুগুণে কার্যকর।
প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ রয়েছে এই সবজিতে, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এর ভূমিকা অনেক।
আশজাতীয় খাবার দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভরে রাখতে সাহায্য করে; যা ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ভীষণ উপকারী। আশজাতীয় খাবার রক্তে চিনির মাত্রা কমায়।
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম দাঁত, হাড় ও নখ শক্ত করে। বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, যা দাঁতকে করে মজবুত, দাঁতের মাড়িকে করে শক্তিশালী। ভঙ্গুরতা রোধ করে নখের।
তবে অ্যালার্জির সমস্যা থাকলে বেগুন পরিহার করা উচিত। বেগুন অধিকাংশ মানুষের অ্যালার্জি বাড়িয়ে দেয়। অনেকেই বেগুন হজম করতে পারে না।
জিঙ্কের ঘাটতি পূরণ করার জন্য ডায়রিয়া চলাকালীন বেগুনের তরকারি খাওয়া অনুচিত। ডায়রিয়া ভালো হয়ে যাওয়ার পরে বেগুনের তরকারি খাবেন।
ডায়রিয়া হওয়ার পর দেহে জিঙ্কের ঘাটতি হয়। এই ঘাটতি পূরণ করে বেগুন। জিঙ্কের ঘাটতি বেশি হয় মূলত শিশুদের।
বেগুন কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। তাই ডায়রিয়া চলাকালীন বেগুন না খাওয়াই ভালো। বেগুন তাড়াতাড়ি পচে যায়। তাই টাটকা খাওয়াই উত্তম।