নড়াইল মুক্ত দিবস

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি ছোট জেলা নড়াইল। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে নড়াইলের ইতিহাস প্রথম আমার বাবার মুখে শোনা। বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি দেশের জন্য অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন। তখন বাবা ছিলেন স্কুলছাত্র। দেশ স্বাধীন করে ভর্তি হয়েছিলেন নড়াইলের সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে। বাবার মুখে শুনি মুক্তিযুদ্ধের নানা কথা। যুদ্ধের সময় নড়াইল জেলা ছিল ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন ওসমান চৌধুরী এবং পরে মনজুর আহমেদ। চিত্রার পাড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে নানা পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী ও পাকিস্তানি বাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর মিলিশিয়া গ্রুপের অবস্থান ছিল নড়াইলে, যাদের আশ্রয়স্থল ছিল পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায়। আশ্রম রোড, লঞ্চঘাট ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে মুক্তিবাহিনী অবস্থান নিত।
সাইদ্দুর রহমানের মতো অনেক মানুষ তখন মুক্তিবাহিনীর শুভাকাঙ্ক্ষী ছিলেন বলেই মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় ও সহযোগিতা পেতেন নানাভাবে। সাফল্য অর্জন করতেন নানা অপারেশনে।
নয় মাস ব্যাপী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে। চিত্রার পানি রক্তে লাল হয়ে যায়। সারি সারি লাশ ভেসে যায় মোহনার দিকে। ডিসেম্বরের ৯ ও ১০ তারিখ দুই পর্যায়ে যুদ্ধ সংগঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেনের নেতৃত্বে লঞ্চঘাট থেকে পুলিশ ফাঁড়ির দিকে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর আক্রমণ চলায় মুক্তিবাহিনী। অপর দিকে আশ্রম রোডে মুক্তিযোদ্ধা রানা ও সেলিমের নেতৃত্বে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে মুচিরপোল এলাকায় এসে মুক্তিবাহিনীর গুলি ফুরিয়ে যায়। তখন মুক্তিবাহিনীর লোকেরা সাইদ্দুর রহমানের কাছে আসেন।

মুক্তিবাহিনীর সব কথা শোনার পর সাইদ্দুর রহমান তাঁদের জানান, পুলিশ ফাঁড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার পথে তার পুকুরে প্রায় তিন বাক্স গুলি ফেলে যায় পাকিস্তানি বাহিনী। তবে ওই গুলিতে কাজ হবে কি না, সন্দেহ থেকে যায়।
পুকুর থেকে গুলি তুলে পরীক্ষা করে নেয় মুক্তিবাহিনী। শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। পাকিস্তানি বাহিনী আর তাদের দোসরদের হাতে নিহত হন অনেকে। অগণিত মুক্তিযোদ্ধার রক্ত এবং অনেক অত্যাচারিত, লাঞ্ছিত মা-বোনের অশ্রু ও সংগ্রামের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর নড়াইল জেলা হানাদারমুক্ত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধে নড়াইল জেলার অবদান রয়েছে বিশেষভাবে। মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সর্বোচ্চসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধার অংশগ্রহণ নড়াইল থেকে। ইতিহাসের পাতায় তা এখনো উজ্জ্বল। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুক্তিযোদ্ধা-অধ্যুষিত জেলা বলা হয় নড়াইলকে। সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের একজন ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ। যিনি নড়াইলের কৃতী সন্তান। তিনি আমাদের গর্ব। স্বাধীন ভূখণ্ডের বিশেষ অংশীদার নড়াইল এবং আমি এই জেলার একজন মানুষ হয়ে গর্ববোধ করি।

—ঢাকা মহানগর বন্ধুসভা।