নোয়াখালী বন্ধুসভার কুয়াশা উৎসব

কুয়াশা গ্রামবাংলার ঐতিহ্য। ষড়্‌ঋতুর দেশ বাংলাদেশে শীতকাল এলেই দেখা যায় বাংলার নতুন রূপ। শীতের সকালে কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয় চারপাশ। আজকাল শহুরে জীবনে মানুষের মধ্যে কুয়াশার আমেজ খুব একটা দেখা যায় না।

শীতের সঙ্গে কুয়াশার এ আমেজ আরও একটু বাড়িয়ে দিতে ১৯ জানুয়ারি নোয়াখালী বন্ধুসভা আয়োজন করে কুয়াশা উৎসব। এদিন সকাল সাতটায় তীব্র শীত উপেক্ষা করে নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা হাজির হন নোয়াখালী সরকারি আবাসিক এলাকাসংলগ্ন দিঘির পাড়ে। কুয়াশাঢাকা এ সকালে শুরুতে বন্ধুরা শুকনা খড়কুটো, লাকড়ি সংগ্রহ করে আগুন ধরিয়ে সবাই মিলে আগুন পোহাতে বসেন। কুয়াশায় মোড়ানো সকাল, কিন্তু খেজুরের রসের কোনো আয়োজন নেই, তা কি কখনো হয়! কুয়াশা উপভোগের পাশাপাশি নোয়াখালী বন্ধুসভা আয়োজন করে রস উৎসবেরও। রসের তৈরি পায়েস ও বিভিন্ন পিঠা খাওয়ার আয়োজন করা হয়। নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা গোল হয়ে বসে আগুন পোহাতে পোহাতে পায়েস এবং শীতকালীন পিঠা খাওয়া উপভোগ করেন।

সঙ্গে ছিল গরম চায়ের ব্যবস্থাও। পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রমজীবী মানুষ, পথচারী, পথশিশুদের সঙ্গেও পিঠা ভাগাভাগি করে নেন নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা। শীত ও কুয়াশা নিয়ে বন্ধুদের মুখে ওঠে আসে দারুণ স্মৃতিচারণা। উৎসবকে আরও জমিয়ে তুলতে নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা সংগীত পরিবেশন করেন।

এদিন অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বন্ধুসভার উপদেষ্টা ও নোয়াখালী সরকারি কলেজের শিক্ষক মো. মাহফুজুর রহমান, উপদেষ্টা ও নোয়াখালী জিলা স্কুলের সাবেক সহকারী প্রধান শিক্ষক মাহফুজের রহমান, উপদেষ্টা ও নোয়াখালী বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি কামাল হোসেন। তাঁরা কুয়াশার আবহে একটি সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুদের প্রশংসা করেন। উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন রাতুল। এ ছাড়া নোয়াখালী বন্ধুসভার আমন্ত্রণে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় হরিনারায়ণপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন নোয়াখালী বন্ধুসভার স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া সম্পাদক মেহেদী হাসান। তার সঙ্গে বন্ধুরাও তাল মিলিয়ে গান ধরেন। এ ছাড়া হরিনারায়ণপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রোকসানা সুমি চমৎকার একটি সংগীত পরিবেশন করেন।

শেষের দিকে কুয়াশা উৎসবের সমন্বয়ক নোয়াখালী বন্ধুসভার দুর্যোগ ও ত্রাণ সম্পাদক সুমাইয়া সামান্তা নিজের কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এ ছাড়া নোয়াখালী বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসিফ আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রাকিব, প্রচার সম্পাদক জ্যানিসা আফরোজ, পাঠাগার ও পাঠচক্র সম্পাদক মরিয়ম বিনতে মনির তানিয়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নিথিন রায়, লিঙ্গসমতা–বিষয়ক সম্পাদক উম্মে রুম্মান, ম্যাগাজিন সম্পাদক মারজিহাতুন স্বর্ণা, কার্যনির্বাহী সদস্য সাফিদ নোমান সংগীতসহ অন্য বন্ধুরা স্মৃতিচারণা ও কুয়াশা উৎসবের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন।

সবশেষে বন্ধুদের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন নোয়াখালী বন্ধুসভার সদ্য সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন রাতুল। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নোয়াখালী বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক মো. মাছুম বিল্ল্যাহ সিফাত। বেলা বাড়তে বাড়তে ঠিক যখন মাথার ওপর সূর্য আসে, শীতের মিষ্টি রোদ একটু একটু উঁকি দিচ্ছে, তখন নোয়াখালী বন্ধুসভার বন্ধুরা আনন্দমুখর পরিবেশে যাঁর যাঁর বাড়ির পথ ধরেন।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, নোয়াখালী বন্ধুসভা