দন্ত্যস রওশনের যারা ভালোবেসেছিল ছড়িয়েছে ভালোবাসার মুগ্ধতা
পাঁচ বছর ধরে মুদ্রিত বই পড়ার দলগত আসর ‘পাঠচক্র’ হয়ে এলেও ভৈরবসভার বন্ধুদের পাঠক্ষুধা না কমে, দিন দিন বেড়েই চলেছে। বই পড়াটা কীভাবে আরও অভ্যাসে পরিণত করা যায়, এ নিয়েই যত ভাবনা। শেষে ভৈরবসভা টানা ১৫ দিনের বইপড়া কর্মসূচি হাতে নেয়। কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘পড়ি বই, সুন্দর হই’। সূচনা আয়োজনটি হয় বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অণুকাব্যের জনক দন্ত্যস রওশনের যারা ভালোবেসেছিল বইটি দিয়ে। সূচনা আয়োজনটি হয় গত মঙ্গলবার বিকেলে প্রথম আলোর ভৈরব কার্যালয়ে।
বরাবরের মতো জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়। আসরে অন্তত ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন। মূল আলোচনায় অংশ নেন বন্ধু প্রিয়াংকা, নাহিদ ও রিফাত। তাঁরা যখন বইটির কিছু অংশের লাইন ধরে পড়ছিলেন, তখন কেউ কেউ হেসে শেষ। আবার কেউ কেউ অন্যজনের সঙ্গে চোখাচোখিতে কী যেন বলার চেষ্টা করছিলেন।
বিশেষ করে গ্রন্থের কেন্দ্রীয় চরিত্র আবিরকে নিয়ে যত আলোচনা, তর্ক আর সমালোচনা। তাতেই পাঠচক্র প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
গ্রন্থের আবির অস্থির প্রকৃতির। তার দেহ–মন ভালোবাসায় ভরপুর। বিশেষ করে যাকে দেখে, তাকেই সে ভালোবাসতে চায়। এরই মধ্যে তুতু, মায়াবী, টুনি, সাদিয়া ও টুসি নামের পাঁচ তরুণীকে ভালোবাসার জালে আবদ্ধ করে রাখে আবির। বইয়ের শুরু ও মধ্যভাগ যুক্তিনির্ভর রসাল হলেও শেষটা ছিল বেদনাবিধুর। গ্রন্থের শেষে আবিরের পাঁচ প্রেমিকার একজন টুনি গ্যাং রেপের শিকার হয়। এতে আবির দায় অনুভব করে এবং টুনিকে বিয়ে করে দায়মুক্তির চেষ্টা করে। এভাবেই যারা ভালোবেসেছিল বইটি একদিকে যেমন ভালোবাসার মুগ্ধতা ছড়িয়েছে, অন্যদিকে অনুতপ্তের দায়ে আচ্ছন্ন করে রেখেছে গ্রন্থের বহু ভালোবাসার নায়ক আবিরকে।
এই আচ্ছন্নতা পেয়ে বসেছিল আসরে উপস্থিত বন্ধুদেরও। পাঠচক্র চলমান অবস্থায় প্রথম আলোর ভৈরব অফিসের নিজস্ব প্রতিবেদক সুমন মোল্লা বলেন, দন্ত্যস রওশনের বই মানে রসের সঙ্গে থাকবে নিরেট বাস্তবতা। ডরভয় ছাড়া বাস্তবতা এত স্পষ্ট করে পাঠকের সামনে নিয়ে আসা লেখকের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে।
সাধারণ সম্পাদক আল আমিন তুষারের মন্তব্য ছিল, গ্রন্থের কিছু অংশের সঙ্গে বর্তমান প্রজন্মের বেশির ভাগ তরুণ-তরুণীর চরিত্র ও ভাবনাগত মিল রয়েছে। সে কারণে বইটি জীবন্ত মনে হচ্ছে। সভাপতি আসাদুজ্জামান সোহেলের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এল আবেগপ্রবণ কণ্ঠ। তিনি বলেন, ১৫ দিনে ৭টি বই পড়ব। ৭টি বই, ৭টি স্বপ্ন। যারা ভালোবেসেছিল বইটি পড়া শেষ মানে একটি স্বপ্ন কমে গেল। প্রতিটি পাঠচক্রে বন্ধুদের উপস্থিতি কামনা করেন তিনি।
পাঠচক্রে উপস্থিত ছিলেন সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম সেকুল। তিনি বলেন, এই সময়ে এত সুন্দর পরিবেশে মনোযোগ ঠিক রেখে বই পড়ার আসর স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এ এক অসাধারণ উদ্যোগ।
উপদেষ্টা মো. আলাল উদ্দিন জানান, ভৈরবসভাকে উচ্চপর্যায়ে নিয়ে গেছে বইপড়া আন্দোলন। পাঠচক্র শেষে গ্রন্থটির ওপর কুইজ প্রতিযোগিতা হয়। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অর্ণব গণি, ফ্রমি, মিশু ও রাসেল রাজ বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ থেকে প্রকাশিত তারুণ্য বিজয়ী হয়।
পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক