একশনএইড-প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় বিতর্ক উৎসব

বেলুন উড়িয়ে ‘একশনএইড-প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় বিতর্ক উৎসব ২০১৯’- সিলেট অঞ্চলের উদ্বোধন করা হয়। ছবি: শাকিব হাসান
বেলুন উড়িয়ে ‘একশনএইড-প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় বিতর্ক উৎসব ২০১৯’- সিলেট অঞ্চলের উদ্বোধন করা হয়। ছবি: শাকিব হাসান


চূড়ান্ত পর্বে বিতর্কের বিষয় ছিল ‘গৃহস্থালি কাজের পুনর্বণ্টনে শুধু নারীই নয়, পুরুষই প্রধান ভূমিকা পালন করবে’। সরকারি দলে ছিল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আর বিরোধী দলে ছিল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তি-তর্কে একে অপরকে ঘায়েল করে দুই দল। শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দল। এর আগে ১০টি দল দিনব্যাপী যুক্তি উপস্থাপন আর খণ্ডনের চেষ্টা ও আনন্দে কাটিয়েছে। সবমিলিয়ে গত শনিবার প্রাণবন্ত একটি দিন কেটেছে সিলেট শহরতলির কামালবাজার এলাকার লিডিং ইউনিভার্সিটিতে।
‘একশনএইড-প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় বিতর্ক উৎসব’ ঘিরে ছিল এ আয়োজন। গতকাল সকাল সাড়ে নয়টায় বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী। আর এ আয়োজনেই মুখর ছিলেন সিলেটের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিতার্কিকেরা। ‘গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন, আনবে সমতা করবে উন্নয়ন’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত উৎসবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিতর্কে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। ছবি: শাকিব হাসান
বিতর্কে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা। ছবি: শাকিব হাসান


উদ্বোধন শেষে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা পর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে উদ্বোধকের বক্তব্য দেন উপাচার্য মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘সমাজকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য যুক্তি হচ্ছে মূল মাধ্যম। তাই এই বিতর্ক সমাজের জন্য খুবই কাজে আসবে। চর্চার মাধ্যমে যুক্তিনির্ভর সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে এ আয়োজন অবশ্যই একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। উন্নত বিশ্বে নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজ করেন। কিন্তু বাংলাদেশে তা হচ্ছে না। সামাজিক এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। নারীকে তাঁর যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে।’
উদ্বোধনী পর্বে প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি দন্ত্যস রওশন, একশনএইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কর্মকর্তা নূরে জান্নাত ও লালমনিরহাটের শিউলি নারী দলের সদস্য অজিফা বেগম বক্তব্য দেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের হাতে আয়োজকদের পক্ষ থেকে স্মারক-ক্রেস্ট ও উপহারসামগ্রী তুলে দেন প্রথম আলোর সিলেট প্রতিনিধি সুমনকুমার দাশ। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভা সিলেটের অনুষ্ঠান সম্পাদক তামান্না ইসলাম।
দন্ত্যস রওশন বক্তৃতায় বলেন, ‘নারী-পুরুষ সমানে সমান। কাজগুলোকে আমরা ভাগাভাগি করে সম্মিলিত প্রয়াসে দেশটাকে এগিয়ে নিতে চাই। নারী-পুরুষ সমানতালে হাতে হাত রেখে বাংলাদেশের উন্নয়নে অংশ নিক, এটা আমরা চাই।’ নূরে জান্নাত বলেন, ‘নারীর গৃহস্থালির কাজকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন না হওয়ার কারণে নারীরা প্রতিনিয়ত বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।’

সারা দিন যুক্তি, পাল্টাযুক্তি ও বাহাসের যুদ্ধে অবশেষে বিজয়ী হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দলটি। আর রানারআপ হয় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দলটি। সিলেট, ২৩ নভেম্বর। ছবি: আনিস মাহমুদ
সারা দিন যুক্তি, পাল্টাযুক্তি ও বাহাসের যুদ্ধে অবশেষে বিজয়ী হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দলটি। আর রানারআপ হয় সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দলটি। সিলেট, ২৩ নভেম্বর। ছবি: আনিস মাহমুদ


উদ্বোধনী পর্ব শেষে বেলা সোয়া ১১টা থেকে সিলেট অঞ্চলের বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এতে সিলেটের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের বিতর্ক দল অংশ নেয়। এগুলো হচ্ছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, পার্কভিউ মেডিকেল কলেজ, সিলেট এমসি কলেজ, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিলেট সরকারি কলেজ।
বেলা তিনটায় নারী-পুরুষের সমতা নিয়ে বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরী। তিনি বক্তৃতায় বলেন, নারী ও পুরুষের মধ্যে সমতার জন্য তরুণসমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণেরা উদ্যোগী হলেই বাংলাদেশ সমতাভিত্তিক দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। এরপর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিতর্কের ওপর একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এটি পরিচালনা করেন বিতার্কিক নূর ই আলম।
সমাপনী পর্বে সন্ধ্যা সোয়া সাতটায় বিজয়ী ও রানার্সআপ দলের সদস্যদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ লোকসংগীতশিল্পী সুষমা দাশ। এ সময় লিডিং ইউনিভার্সিটির সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলমগীর হোসাইন, একশনএইড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কর্মকর্তা নূরে জান্নাত, জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ভূঞা, জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা অসিত বরণ দাশগুপ্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেরা বক্তার পুরস্কার অর্জন করেন বিরোধী দলের সাংসদ নাহিদ হাসান নাইম।
বিতর্ক প্রতিযোগিতার বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বিতার্কিক কাজী মো. জাহিদ হাসান, নূর ই আলম, ধ্রুব রঞ্জন রায়, মো. হাসনাত ইবনে রেজা, শামীম আল আজিজ লেলিন, তানভীর রেজা খান, মো. শেরফ্-উল-আলম ও রানা মজুমদার, সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশু, নাট্যব্যক্তিত্ব মু. আনোয়ার হোসেন রনি, জাফর সাদেক শাকিল ও হুমায়ুন কবির জুয়েল, জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ভূঞা, জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা অসিত বরণ দাশ গুপ্ত, আবৃত্তিকার নাজমা পারভীন প্রমুখ।