এক কাপ চা হাতে

প্রায় মাস পাঁচেক ধরে ঘরবন্দী। কেটে গেছে অনেকগুলো প্রহর ঘরের চার কোণে। হঠাৎ করেই যেন বদলে গেছে জীবনের ছক। জীবনের ধরাবাঁধা সময়সূচি থেকে অনেকটা ভিন্নভাবেই কেটে যাচ্ছে মহামারির এই কঠিন সময়টা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত জীবনজুড়ে ক্লাস, টিউশন, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন, বিভিন্ন সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ। আবার এর ফাঁকে ফাঁকেই বন্ধুদের সঙ্গে চায়ের আড্ডা, ঘোরাঘুরি, বইপড়া, হলের সংসারটা গুছিয়ে রাখা! যেন দম ফেলার ফুরসত নেই! অনেক অনেক শখ সময়স্বল্পতায় হারিয়েই যাচ্ছিল জীবন থেকে।

বাঁধাধরা জীবনে জীবনটা কেমন একঘেয়ে হয়ে উঠছিল। ক্লান্তিময় মন, শরীর ও জীবন।

হঠাৎ করেই মহামারির এ সময়ে যেন থমকে গেছে ব্যস্ত জীবনের কাঁটা। যেখানে সময়ের অভাবে অনেক কাজ দৈনন্দিন কর্মতালিকা থেকে বাদ দিতে হতো, সেখানে আজ যেন যোগ করার মতো কাজের খুব অভাব। এখন যেন অফুরন্ত অবসর! অবসরেরও একটা ক্লান্তি এসে গেছে।

জীবন থেমে থাকার নয়। থাকবেও না। নতুন করে এ সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে আরেকটু এগিয়ে রাখতে চেষ্টা করছি। নতুন নতুন অনেক কিছুই শেখা হচ্ছে। দক্ষতা বাড়াতে অনেক কাজের চর্চায় রাখছি নিজেকে। টুকটাক লেখালেখির অভ্যাসটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি। অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও কর্মশালায় যোগ দিচ্ছি। বইপড়া, বাগান করা, রান্না করার মতো নিজের প্রায় হারিয়ে যাওয়া শখগুলোকে নতুন করে সময় দিতে পারছি।

লকডাউনের এই সময়ে অনেক বই পড়া হয়েছে। নতুন নতুন রেসিপি চেষ্টা করে রান্নার হাতটা ঝালিয়ে নিতে পারছি। পছন্দের ছাদবাগানটাতে প্রাণ ফিরিয়েছি। ছাদবাগান থেকে এখন সতেজ ফল, সবজি পাচ্ছি।

সময়ের অভাবে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগই ছিল না! এখন ভার্চ্যুয়াল আলাপে সম্পর্কগুলো যেন নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে।

লম্বা একটি সময় পরিবারের সবার সান্নিধ্যে থাকতে পারাটাও একটি ভালো লাগা। পরিবারকে সময় ও যত্ন দিতে চেষ্টা করছি। একসঙ্গে ভালো সময় কাটাচ্ছি। এ ছাড়া করোনা থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক জীবনযাপনে উৎসাহ দিচ্ছি।

প্রায়ই প্রিয় ক্যাম্পাসের কথা মনে পড়ে। বন্ধুদের সঙ্গে হইহুল্লোড়, সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া, গল্প করা, গ্রুপ স্টাডি করা, মনে পড়ে সেসব ব্যস্ততম দিনগুলো। আশপাশে অসংখ্য বন্ধু শুভাকাঙ্ক্ষীর সাহচর্য! প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রতিটি অলিগলির স্মৃতি চোখে ভাসে এখন।

কেমন আছে প্রিয় ক্যাম্পাস? সেও কি আমার অপেক্ষায়? আবার কবে সব ঠিক হবে! কবে সেই প্রিয় আঙিনায় সবুজ ঘাসে পা ফেলব!

আমাদের দুরন্তপনা, হাসি-আড্ডার সেই দিনগুলোর অপেক্ষায় প্রহর গুনছি প্রতিনিয়ত।

পৃথিবীর অসুস্থতা সেরে গেলে আবার আমরা একসঙ্গে ফিরব! আবারও সবার সঙ্গে আড্ডা হবে টিএসসিতে, এক কাপ চা হাতে!

শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।