উপকারী ফল ডাব

ডাব খুব উপকারী একটি ফল। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে সারা বছর ডাব পাওয়া যায়।
রমজান মাসে ইফতারে পানীয় হিসেবে ডাব বয়ে আনবে সুফল।
পানীয় ও রূপচর্চা দুটোর জন্যই ডাব যথেষ্ট পুষ্টি সমৃদ্ধ একটি ফল। রূপচর্চার প্রাকৃতিক উপকরণ হিসেবে ডাব সেই পুরোনোকাল থেকেই পরিচিত।
মানুষের সৌন্দর্য বিকশিত হয় দুভাবে—বাহ্যিক আর অভ্যন্তরীণ। বাইরে থেকে পুরো শরীরের যতই যত্ন নিই না কেন, দেহের ভেতরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ না করলে ত্বকে দেখা দেবে নানা ধরনের সমস্যা।
ডাবে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘এ’। এই ভিটামিন দুটো ত্বক ও চুল মজবুত করে। নখকে ভঙ্গুরতা থেকে রক্ষা করে। নখে আনে ঔজ্জ্বল্য।
চোখের নিচে দাগ পড়া ও চোখের মাংসপেশির দুর্বলতা, রাতকানা রোগ দূর করে ভিটামিন ‘এ’।
অনেকেরই চোখের পাপড়িতে অ্যালার্জি থাকে। পাপড়িতে সাদা সাদা জমাট বাঁধা ছোট দানা বা আঠালো ভাব থাকে। ভিটামিন ‘এ’ এসব সমস্যা দূর করে।
যারা নিয়মিত ডাবের পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলেন, তাঁদের এই সমস্যাগুলো হয় তুলনামূলকভাবে কম।
কারণ, ডাবের পানির বিশেষ উপাদান ত্বকের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাককে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
আমাদের দেহের জন্য প্রতিদিন ভিটামিন ‘সি’ দরকার হয়। ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’, যা রোগ জীবাণুর সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
তবে ডাবের পানি করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, এই তথ্য এখনো কোন গবেষণায় প্রমাণিত হয়নি।
অতিরিক্ত গরম, রোদের তাপ, কর্মব্যস্ততা, মানসিক চাপের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ত্বক ও চুলের ওপর। চেহারায় ফুটে ওঠে বয়সের ছাপ। এ অবস্থায় ডাবের পানি আপনাকে দেবে সতেজতা। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, ক্লোরাইড ও পটাশিয়াম, যা শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে ক্লান্তি মুছে চেহারায় আনে উজ্জ্বল ভাব।
ডায়রিয়া হলে আমাদের দেহ থেকে লবণ–পানি বের হয়ে যায়। ডাবের পানিতে উচ্চ মাত্রায় সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম রয়েছে, যা ডায়রিয়ার রোগীর জন্য অপরিহার্য।
পুরো শরীরে সঠিকভাবে রক্ত চলাচলের জন্য এই ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এতে দেহের অঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।
ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে রাখে শক্তিশালী। স্নায়ু বা নার্ভ কর্মতৎপর হলে ত্বক, চুল ও দাঁতের মাড়ি সুস্থ থাকে।
মানুষের মাথায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শিরা, উপশিরা ও স্নায়ু। শিরা-উপশিরা দিয়ে সঠিকভাবে রক্ত চললে আর স্নায়ু সতেজ থাকলে প্রতিটি চুলের গোড়া হবে মজবুত।
দেহে ভিটামিন ‘বি’ কমপ্লেক্স ও সোডিয়াম ক্লোরাইডের ঘাটতি দেখা দিলে অনেকেরই ঠোঁটের চামড়া উঠে যায়। গ্রীষ্মেও শীতকালের মতো ঠোঁটের চামড়া ফেটে যায়। ঠোঁটে আসে ফ্যাকাশে সাদা ভাব।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য ডাবের পানি ভীষণ উপকারী। উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা প্রেশার না মেপে ওরস্যালাইন বা ডাবের পানি খাবেন না। কারণ, খাওয়ার স্যালাইন ও ডাবের পানি দ্রুত রক্তচাপ বাড়ায়।
আয়রনও রয়েছে ডাবের পানিতে যথেষ্ট পরিমাণে। রক্ত তৈরি করার জন্য আয়রন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত তৈরি হলে প্রতিটি অঙ্গ হবে বেশি শক্তিশালী, ফলে কর্মশক্তিও বাড়বে। দেহে আয়রনের পরিমাণ ঠিক থাকলে ত্বক হবে উজ্জ্বল ও মসৃণ।
ডাবের পানিতে খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাসের উপস্থিতিও উচ্চমাত্রায়।
এসব খনিজ লবণ দাঁতের ঔজ্জ্বল্য বাড়ায়। দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত। অনেকের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে। মাড়ি কালচে লাল হয়ে যায়। হাসি বা কথা বলার সময় তা দেখা যায়।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেবে খনিজ লবণ। পাশাপাশি হাড় মজবুত থাকলে হাঁটাচলাও হয় আত্মবিশ্বাসী ধরনের।
ডাবের পানির খনিজ লবণ ত্বকের বলিরেখা, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, হাড়ের দুর্বলতা দূর করে।
এই গরমে ছোট-বড় সবারই দেহের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে ত্বকে ফুটে ওঠে লালচে কালো ভাব।
সারা দিন রোজা রাখার পরে এই ফল আপনার জন্য হবে পুষ্টিকর পানীয়।
বাজারের রং দেওয়া কোনো পানীয় পান করার পরিবর্তে ডাবের পানি বেশি উপকারী।
ডাবের পানি দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা কমিয়ে শরীরকে রাখে ঠান্ডা। তারুণ্য ধরে রাখতে এর অবদান অপরিহার্য। কারণ, ডাবের মধ্যে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট নামে একধরনের উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের বলিরেখা, কুঁচকে যাওয়া ভাব দূর করে। এতে ত্বক হয়ে ওঠে আরও তারুণ্যময়।
ডাবের পানিতে আয়রনও রয়েছে, যা রক্ত তৈরিতে অবদান রাখে। রক্ত ত্বকসহ পুরো শরীরের জন্য যথেষ্ট উপকারী।
ডাবের পানি যেকোনো কোমল পানীয় থেকে অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ। এটি চর্বিবিহীন পানীয়।
ডাবের পানি মিষ্টি হওয়া সত্ত্বেও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য উপকারী। কারণ, এই পানি রক্ত পরিষ্কার রাখে।
তবে কিডনির সমস্যায় ডাবের পানি খাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কারণ, ডাবের পানিতে রয়েছে উচ্চ মাত্রার পটাশিয়াম, যা সব ধরনের কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত রোগীদের খাওয়া অনুচিত।