আমি পুরুষ

পুরুষ হয়ে জন্ম নিলে নিজের অজান্তে হুট করে সব দায়িত্ব কাঁধে চলে আসে। আলসেমি করে কিংবা খামখেয়ালিতে তখন তা উপেক্ষা করা যায় না। চেয়ারের হাতলের ওপর মাথা রেখে সমশের কিছু সময় চিন্তা করে দেখল, এ দায়িত্ব থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো পথ নেই। যে জিনিস থেকে মানুষ চায় দূরে থাকতে, একসময় সেই জিনিস তার শরীরের সঙ্গে মিশে যায়। এই তো, ভালোবেসে বিয়ে করেছে শিল্পাকে। বিয়ের হয়নি এক বছর, এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে পরিবারের টানাটানি।

দুজন মানুষের সংসার চালাতে পারছে না সমশের। মাস শেষে যা সামান্য বেতন পায়, তা চলে যায় বাসাভাড়া আর ঋণের টাকা পরিশোধ করতে। শিল্পা বড়লোকের মেয়ে। বাবা–মায়ের অমতে বিয়ে করেছে সমরেশকে। বারবার সমরেশ চেয়েছে দূরে যেতে, কিন্তু পারেনি। ভালোবাসা নামক এক শব্দে আটকে সব যেন গোলমাল হয়ে গেছে। ওর মধ্যবিত্ত জীবনের সঙ্গে এখনো শিল্পা তাল মেলাতে পারেনি।
কয়েক দিন ধরে তো বাসায় ভালো কোনো খাবার রান্না হয় না। তার মধ্যে কালকে চাল শেষ হয়ে গেছে। আজকে কি তাহলে না খেয়ে থাকতে হবে? সমরেশের কপাল থেকে টপটপ করে ঘাম পড়ছে মাটিতে, সে অবাক হয়ে তা দেখছে! তার খুব খারাপ লাগছে। হঠাৎ মুঠোফোনে কল এল, ঘোর কেটে গেল। শিল্পার কল। কল ধরতে অন্য পাশ থেকে শোনা গেল, শুনছো, বাবা আমাদের বাসায় এসেছেন বাজার নিয়ে। ছোটবড় অনেক মাছ আর দেশি মুরগি এনেছেন। তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো, বাজার করা লাগবে না।

সমরেশের শরীর রাগে টগবগ করছে, সে জানে এটা তার বউয়ের কাজ। ঘরে বাজার নেই বলে বাবাকে ফোন করে বাজার আনিয়েছে। সংসার বড় কঠিন জিনিস। এখানে যে স্ত্রী স্বামীর সম্মান ধরে রাখতে পারে না, সে একদিন স্বামীছাড়া হয়ে যায়। কোনো উত্তর না দিয়ে সমরেশ ফোন কেটে দিল। সে জানে, এ সময়ে তার সাহায্য দরকার, কিন্তু তাই বলে শ্বশুরের সাহায্য, ঠিক এই ভাবে! আত্মসম্মান সব হারিয়ে? নাহ্‌ এ হয় না। অফিসের পাশে একটি পার্কে বসে সে ভাবছে, না জানি কতটা নিচে নামিয়েছে শিল্পা আজ তাকে শ্বশুরের সামনে। বউকে খাওয়াতে না পেরে শেষমেশ শ্বশুরের সাহায্য নিতে হলো! এ মানা যায় না। সে যে–ই না চোখ বন্ধ করল, খেয়াল করল কেউ একজন তাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। কে সে? শিল্পা?

হ্যাঁ, গায়ের গন্ধ তো তাই বলছে। এত রাতে সে এখানে কেন?
এমন সময় কান্নার আওয়াজ এল তার কানে, ফুঁপিয়ে কেউ কান্না করে বলছে, আমি বুঝতে পারিনি। এতে তোমার এত লাগবে, তুমি এত নিচে নামবে। আমাকে ক্ষমা করো। ঘরে চলো, তোমাকে আমি তিন ঘণ্টা ধরে খুঁজে তবে পেয়েছি, মুঠোফোনও বন্ধ করে রেখেছ। আমাকে মাফ করো, ঘরে চলো। তোমাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ। আর কোনো দিন এমন হবে না। না খেয়ে থাকব, তবু তোমার সম্মান নষ্ট করব না কথা দিলাম।
সমরেশ চোখ না খুলে মনে মনে হাসছে আর বলছে, আমি পুরুষ, এত সহজে গলে গেলে চলবে না।