হাতকড়া

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

আমি সেই পুলিশ ইন্সপেক্টর হোসনেয়ারা হাসু। বলেছিলাম না পুলিশ হওয়ার গল্প আর একদিন বলব? আজ বলছি শুনুন।

ইন্টারে পড়ার সময় দুই–তিনজন প্রপোজ করেছিল, এমন দৌড়ানি দিয়েছি আর কেউ প্রপোজ করার সাহস পায়নি। ইন্টার পাস করে আর্মিতে ঢোকার অনেক চেষ্টা করেও সুবিধা করতে পারিনি।

অনার্সে ভর্তি হলাম কিন্তু হাল ছাড়িনি। যখন তৃতীয় বর্ষে পড়ি, তখন আমাদের ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন সদ্য বিসিএস ক্যাডারের তরুণ লেকচারার হাসিম রেজা। যেমনই স্মার্ট, তেমনই সুদর্শন। পড়ানও বেশ চমৎকার। কিছুদিন যেতে না যেতেই আমার সম্পর্কে ওনার একটা ধারণা হয়ে গেছে।

অনার্স পরীক্ষার রেজাল্ট তখনো হয়নি। পুলিশে নারী সাব–ইন্সপেক্টর নেওয়া হবে। আমি অনার্স অ্যাপিয়ার্ড দেখিয়ে টেস্টে অংশ নিলাম। প্রাথমিক বাছাই ও লিখিত পরীক্ষায় টিকে গেলাম।

দুই দিন পরে ভাইভা পরীক্ষা। খুবই টেনশনে ছিলাম। আনমনা হয়ে ফাইল হাতে বের হয়ে আসছি। হঠাৎ একজনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ফাইল নিচে পড়ে যায়। আমি চেহারা না দেখেই বললাম, স্যরি! তাকিয়ে দেখি রেজা স্যার।

আরে হাসু, তুমি এখানে?

স্যার, পুলিশের সাব–ইন্সপেক্টরের টেস্ট দিয়েছিলাম।

রেজাল্ট কী?

স্যার রিটেনে টিকেছি, দুই দিন পরে ভাইভা।

তুমি আসো আমার সঙ্গে, বলে ভেতরে নিয়ে গেলেন। স্যার তাঁর মামার সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিলেন। মামা নাম–রোল টুকে রাখলেন।

বিদায় নিয়ে ফেরার পথে হাঁটতে হাঁটতে স্যার বলছিলেন, ‘মামা বড় অফিসার, তুমি রিটেনে টিকে গেছ, ধরে নাও তোমার চাকরি হয়ে গেছে, তুমি এখন পুলিশ অফিসার।’

আমি মৃদু হেসে বললাম, ‘স্যার আমি যদি পুলিশ অফিসার হয়েই যাই, তবে আপনাকেই প্রথম গ্রেপ্তার করব।’ স্যার বললেন, ‘যাবজ্জীবন হলেও আপত্তি নেই।’

সেই যে হাতকড়া পরিয়েছি, আর কখনো ছাড়া পাবে বলে মনে হয় না।