হাকালুকির নীলে একদিন

হাকালুকির নীলে একদিন।
ছবি: সংগৃহীত

সিলেটে আছি প্রায় এক যুগ ধরে। ভ্রমণের জন্য আকর্ষণীয় হওয়ায় পরিচিতজন কমবেশি প্রায়ই এখানে আসেন ঘুরতে। ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি নিজেও। দীর্ঘ ভ্রমণে নেই কোনো ক্লান্তি। দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে অবিরাম ছুটে চলছি কখনো ঘুরে বেড়ানোর বাতিক থেকে, আবার কখনো–বা অন্যদের প্রয়োজনে তাদের সঙ্গে সঙ্গ দিতে। এমনও হয়েছে, একই জায়গায় একাধিকবার ভ্রমণ করেছি। কিন্তু কখনোই বিরক্ত হইনি। বরং প্রতিবারই পরিচিত জায়গাকে নতুন মনে হয়েছে। বিশেষ করে সিলেটের বিভিন্ন ট্যুরিস্ট স্পটগুলো।

বিছনাকান্দির কথাই ধরা যাক, এখন পর্যন্ত দশের অধিকবার যাওয়া হয়েছে। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাতের বিছনাকান্দির সঙ্গে হয়েছে আমার নিবিড় সখ্য। বন্ধুরা বলত, আমি নাকি নারীর প্রেমে না পড়ে বিছনাকান্দির প্রেমে পড়েছি! এক অর্থে সত্যও বটে। এ প্রেমেও বিরহ আছে; তাই উনিশের পর থেকে বিছনাকান্দির সঙ্গে বিচ্ছেদের পর্ব চলছে। কেননা, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত আর যাওয়া হলো না। হয়তো বিছনাকান্দি তার জৌলুশ হারিয়ে তার প্রেমিককে ধরে রাখতে পারেনি; মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি বোধ হয় সে কারণেই। প্রকৃতি কোনো কিছুই শূন্য রাখে না বেশি দিন। আমার শূন্যতা পূরণে নবরূপে সেজে এগিয়ে এল সাদা পাথর, রাতারগুল, হাকালুকির মতো প্রকৃতিকন্যারা। আবার তাদের প্রেমে মজে গেলাম।
হাকালুকি হাওরে যেতে ভালো লাগে, এখন পর্যন্ত চার–চারবার গিয়েছি। সর্বশেষ গেলাম ১৮ অক্টোবর ২০২০। কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠে শিফা আপু এলেন গাজীপুর থেকে। ওনাকে নিয়েই সর্বশেষ যাওয়া। আগের মতো এবারও নতুন রূপে সেজেছিল হাকালুকি আমাদের জন্য তার সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে।

সকালে নাশতা সেরে সোজা চলে গেলাম হাকালুকি হাওর। হাকালুকি পৌঁছে জিরোপয়েন্ট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চেপে বসলাম ওয়াচ টাওয়ারের উদ্দেশে। আকাশের নীল হাকালুকির বুকে ধারণ করে এক অদ্ভুত নীলের আস্তরণ। তা দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। শিফা আপুকে দেখলাম প্রতি মুহূর্তে হাকালুকির সৌন্দর্যে পুলকিত ও তার মনোরম দৃশ্য দেখে উচ্ছ্বসিত হতে। আমার মনে পড়ে যায়, শাহেদ আলীর ‘ঐ যে নীল আকাশ’ গল্পের নঈমা ভাবির কথা।

কথাসাহিত্যিক শাহেদ আলীর বাড়িও টাঙ্গুয়ার হাওর পারে। তিনিও বুঝি হাওরের নীলের মুগ্ধতার বেড়াজালে আটকা পড়ে নঈমা ভাবিকে নীলে মুড়িয়ে দিয়ে শেষ পর্যন্ত নীলে নীলাম্বর করে আত্মাহুতি করালেন। আর সিদুকেও জাহাজের ক্যাপ্টেনের চাকরি জুটিয়ে দিয়ে নীলে নস্টালজিক করে ছেড়ে দিলেন। টানা এক মাস বিছানায় পড়া লোককে এভাবে উচ্ছ্বসিত হতে দেখে অনুভব করলাম, সেই উচ্ছ্বাসের ফোয়ারা আমার মধ্যেও সঞ্চারিত। সেবার হাকালুকির সৌন্দর্যের অবগাহন শেষে ফিরে আসতে হলো ফের ব্যস্ত সিলেটে।

এমফিল গবেষক, শাবিপ্রবি, সিলেট