হাঁটতে হাঁটতে নরসিংদী থেকে পুবাইল

পুবাইল স্টেশনে লেখক
ছবি: সংগৃহীত

প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে বের হই। বিশেষ কোনো কারণ ছাড়া বলা যায় প্রায় নিয়মিতই বের হই।

আজ একটু দেরি করে বেলা ১১টায় হাঁটতে বের হয়েছি। বাড়ি থেকে হাঁটা শুরু করেছি। উদ্দেশ্য ঘোড়াশাল স্টেশন গিয়ে আবার হেঁটে নরসিংদী চলে আসব। মনের মধ্যে আপাতত এইটুকুই ছিল।

হাঁটাহাঁটি করা আর প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখা। এই দুটির সংমিশ্রণ করতেই আমার এই চেষ্টা। এখানে আমার আর্থিক কোনো সুবিধা নেই, শুধুই মনের প্রশান্তি।

ঝিনারদি যাওয়ার পর পা তেমন খারাপ লাগল না। কারণ আরও কয়েকবার ঝিনারদি পর্যন্ত নরসিংদী থেকে হেঁটে গিয়েছি। এ ছাড়া আমি নরসিংদী টু রায়পুরা, গোপালদী, বারদী, ভৈরব গিয়েছি।

ঝিনারদি স্টেশন পার হওয়ার পর ভালোলাগা আরও কাজ করতে লাগল। ধানের চাষকৃত জমিতে কৃষকের নতুন চারা লাগানোর দৃশ্য, কাজের ফাঁকে ফাঁকে এক সুরে কৃষকের গান গাওয়া; এসব দেখে ক্লান্তি দূর হয়ে গেল।

যখন ঘোড়াশাল প্রথম স্টেশনটাতে গেলাম, তখন ইচ্ছাটা বাড়তে থাকল। ঘোড়াশালের একজনকে কল দিলাম, কিন্তু তিনি ঘোড়াশাল অবস্থান করছেন না, তাই আপাতত ঘোড়াশাল পর্যন্ত পরিকল্পনা বাদ।

ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ স্টেশন যাওয়ার পরও হাঁটতে থাকলাম। কারণ তখনো কোনো ক্লান্তি আসেনি, মাথার ওপর অবশ্য সুয্যি মামা ভালোই প্রখর হয়েছে। ঘোড়াশাল ব্রিজটা পার হতে ভালো লাগল।

ঘোড়াশাল থেকে আড়িখোলা পর্যন্ত পথটা অনেক দীর্ঘ মনে হয়েছে। রেললাইনের দুই পাশের বড় বড় গাছ। গাছের ছায়ায় হেঁটে যাওয়া, নীরব রাস্তায় গলা ছেড়ে ভুল ভাল গান করা ইত্যাদি চলমান রেখেই হাঁটতে থাকলাম। কিছুটা ভয় করলেও হাঁটা থামাইনি। কারণ আশপাশের বাড়িঘর অনেক দূরে দূরে এবং মানুষের চলাচলও নেই বললেই চলে। ১ বা ২ কিলোমিটার যাওয়ার পর একজন মানুষ দেখা যায়।

আড়িখোলা যাওয়ার পর হালকা নাশতা করলাম। স্টেশনে অবস্থানরত কয়েকজন ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা হলো। তারা কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে এসেছে। ছবি তোলা হয়নি, তবে ১০ মিনিট তাদের সঙ্গে বসে কথা বললাম।

আড়িখোলা পার হওয়ার পর রাস্তাগুলো আরও নীরব মনে হতে লাগল। কয়েক কিলোমিটার পার হওয়ার পরও কোনো মানুষ দেখতে পেলাম না। দুই পাশে গাছ, চাষের জমি, ছোট ছোট নদী, শুকনো খাল-বিল ইত্যাদি চোখে পড়ল।

তবে একটা বিষয় খারাপ লেগেছে। মানুষের চলাচল তেমন না, তবু অনেক প্লাস্টিক, ওয়ান টাইম গ্লাস, প্লেট, কফির কাপ ইত্যাদি চোখে পড়ল। অথচ আশপাশে কোনো বাড়িঘর নেই, রেস্তোরাঁ নেই তবু এত প্লাস্টিক এসব রাস্তায়। যা সত্যিই দুঃখজনক। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ট্রেনে অবস্থান করার সময় যাত্রীরা খাবার খেয়ে জানালা দিয়ে এসব ফেলে দেন, যা আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।

পুবাইল ফেরিঘাট ব্রিজে যাওয়ার পর কয়েকজন ছেলের সঙ্গে পরিচয় হলো। তারা ডিএসএলআর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছিল। প্রথমে অবশ্য আমি নিজেই কিছুটা ভয় পেয়েছিলাম একসঙ্গে এতগুলো ছেলেকে দেখে। মনে হচ্ছে এই বুঝি তারা আমাকে ভয় দেখিয়ে মোবাইল, ম্যানিব্যাগ ছিনতাই করে নিয়ে যাবে। কিন্তু আমার মনের ভয় মিথ্যা প্রমাণ করে তারা সহজে আমার সঙ্গে কথা বলল। আমার কয়েকটি ছবি তুলে দিল, নিজেদের আগ্রহ থেকেই। ভালো ব্যবহারও করল। তাদের সঙ্গে কিছুটা সময় ব্যয় করে পুবাইল স্টেশন গেলাম।

লেখক
ছবি: সংগৃহীত

পুবাইল স্টেশন যাওয়ার পর মনে হলো দিনের আলো কমা শুরু করেছে। হাতঘড়িতে দেখি তখন বিকেল ৪টা বেজে ৪০ মিনিট। তাই পরের স্টেশন টঙ্গী যেতে সাহস পেলাম না। কারণ রাস্তাটা তেমন ভালো না ও নীরব। আবার আমি একা। দুপুর হলেও যেতাম। যাই হোক মনটা খারাপ হয়ে গেল। হাঁটাহাঁটি মিশনটা এখানেই শেষ করতে হলো।

দুজন ছেলেমেয়ে গল্প করছিল। এর মধ্যে ছেলেটাকে ডাক দিয়ে আমার মোবাইলটা ধরতে বললাম। তিনি ধরলেন আর আমি ভিডিও করলাম। তারপর ছেলেটি একজন বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। পরে একটা দোকানে বসে আমরা কয়েকজন মিলে চা খেলাম। অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। স্টেশনের সঙ্গে পুবাইল বাজার ঘুরে দেখলাম।

সড়কে দীর্ঘ সময় লেগে থাকা গাড়ির জ্যাম দেখলাম। সম্ভবত বাণিজ্য মেলার জন্য জ্যাম, আশপাশের লোকজন বলছিল।

নতুন পরিচয় হওয়া দুজন ছেলের সঙ্গে সন্ধ্যায় স্টেশনে আড্ডা দিলাম। ট্রেনের অপেক্ষায় ছিলাম। সন্ধ্যায় তিতাস ট্রেনে উঠে নরসিংদী চলে এলাম।

সারা দিনের সংক্ষিপ্ত হাঁটাহাঁটি মিশন শেষ করে রাতে বাড়ি বাসায় ফিরলাম। আমার মতো পাগলকে সহ্য করা মা সহজেই মেনে নিল।

সাধারণ সম্পাদক, নরসিংদী বন্ধুসভা