স্বাধীনতার সূর্য ওঠে

অলংকরণ: বাবুল হোসাইন সোহাগ

একাত্তরে ৭ই মার্চে রেসকোর্সে

বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে গর্জে ওঠে বাংলাদেশ—

‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম

এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

বীর বাঙালি শপথ করে

ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে।

বটতলায়, বত্রিশে, পল্টনে, বাড়ির ছাদে,

কারখানাতে, ক্ষেতের আলে

লাঠির আগায় হাতে হাতে—

স্বাধীনতার নিশান ওড়ে।

পঁচিশে মার্চ কালরাতে

ঝাঁকে ঝাঁকে নামে কনভয়

ঘুমন্ত মানুষ কেঁপে ওঠে!

এ যেন খুনের নেশায়

যমদূতের হিংস্র কড়া নাড়া।

নবজাতকের আর্তনাদে

হায়, স্তব্ধ হয়ে যায় পাড়া!

লেলিহান শিখায় শহর বস্তি

ছাত্রাবাস যায় পুড়ে।

আহা, আমার সবুজ দেশে

হলোকাস্ট বা ভিয়েতনাম আজ

গণহত্যার উপমা হয়! তবু নেই ভয়—

কৃষক শ্রমিক জনতার সংগ্রামে

প্রতিরোধ জাগে–প্রতিরোধ দেশময়।

পাখির পাখায় হাওয়ায় হাওয়ায়

গাঁয়ে গঞ্জে মাটিতে পাহাড়ে

পদ্মা মেঘনা যমুনার তীরে

ছাব্বিশে মার্চ প্রথম প্রহরে

উথাল ঢেউয়ে সারা দেশে

শেখ মুজিবের ডাক আসে:

মুক্তিপাগল ভাইরে আমার

মুক্তিপাগল বোনরে আমার

এক হও জোট বাঁধো

কণ্ঠে তোলো জয় বাংলা

হাতে নাও যার যা আছে—

বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো

জয় বাংলা স্বাধীন করো।

সেই বসন্তে ঝরাপাতায়

রোদে জলে দিনে রাতে

অস্ত্র কাঁধে অস্ত্র হাতে

মুক্তিযোদ্ধা ছুটে আসে।

মুজিবনগর আমবাগানে

ইতিহাসের নতুন পথে

স্বাধীনতার সোনার রথে

পলাশীর সেই রক্ত-শপথ

সারা বাংলায়–সারা বিশ্বে

ডাক দিয়ে যায় প্রাণে প্রাণে।

পথে ঘাটে বন বাদাড়ে

নদীর বুকে ঝড় বাদলে

বাংলা মায়ের দামাল ছেলে

বাংলা মায়ের রুদ্র মেয়ে

জীবন দিয়ে সম্ভ্রম দিয়ে

গুলি বন্দুক গ্রেনেড ছুড়ে

যুদ্ধ করে... যুদ্ধ করে...

বীর বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ।

যুদ্ধ শেষে মুক্ত দেশে

রক্তমাখা পুব আকাশে

আলোয় আলোয় স্বপ্ন ফোটে

ঘাসে গাছে ফুলে ফুলে

স্বাধীনতার সূর্য ওঠে

স্বাধীনতার সূর্য ওঠে।

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়