সেই হাত জোড়া আমার আব্বুর

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

‘আব্বু’ ডাকটা সুন্দর। আমি আর আমার বোন বাবাকে এ নামেই ডাকি। ছোটবেলা থেকেই আমরা দুজন আব্বুকে মোটামুটি রকম ভয় পেতাম, অনেক বেশি ভালোবাসিও। মাঝেমধ্যে তাকে সারপ্রাইজ দিতে আমাদের ভুল হতো না। কখনো আব্বু-আম্মুর ম্যারেজ ডে, জন্মদিনে রাত ১২টার সময় দরজা নক করে ঘুম ভাঙিয়ে সারপ্রাইজ দিতাম। রাগ করার বদলে আব্বু খুশিতে হেসে দিত।
আব্বু আমাদের সব আবদার হাসিমুখে মেটাবার চেষ্টা করে। কখনো কোলের ওপর বসিয়ে আমাকে খাওয়ানো, আবার কখনো কোলে নিয়ে হেঁটে বেড়িয়ে ঘুম পাড়ানো, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া—সবই ছিল নিত্য ঘটনা।

ছোটবেলা থেকে শুনেছি, মেয়েরা বড় হলে নাকি বাবার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়। মাস কয়েক আগে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণে আমার প্রেসার কমে গেল, চারিদিকে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখছিলাম না। ঠিক সেই সময় একজোড়া হাত পরম যত্নে আমাকে বিছানায় শুইয়ে মাথায় পানি দিতে লাগল, দোয়া পড়তে থাকল। সেই হাত জোড়া ছিল আমার আব্বুর। সেদিন বুঝেছিলাম দূরত্ব নয় বরং আরও বেশি গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আব্বু যখন মাঝেমধ্যে বলে, তুমি আমার বড় সন্তান, তখন যে তীক্ষ্ণ ভালো লাগার অনুভূতি পাই, তা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। কেবল অনুভবেই ভালোলাগা বিরাজ করে।

ছোট্ট একটা ঘটনা না বললেই নয়। গত রমজানের শেষ ১০ দিন আব্বু ইতিকাফে ছিলেন। স্বাভবিকভাবেই তার বাড়িতে ফিরে আসার কথা ঈদের আগের দিন সন্ধ্যার পর। হঠাৎ চিন্তা করলাম, সে তো পাঞ্জাবি কেনার সময় পাবে না, ঈদের দিন কী পরবে? সেই চিন্তা থেকে আব্বুর জন্য একটা নতুন পাঞ্জাবি কিনে এনে রেখে দিই। পরে চাঁদরাতে আব্বু বাসায় আসার পর জানতে পারি, সে আগেই একটা পাঞ্জাবি কিনে এনে রেখেছে। ঈদের দিন আব্বু তার নিজের কেনা পোশাকটাই পরেন।

কয়েক দিন আগে হঠাৎ করেই আব্বুকে বললাম, আমার দেওয়া পাঞ্জাবিটা তুমি তো আর পরলে না! জবাবে সে বলে, ‘তোমার বিয়ের দিন পরব।’কোনো মানে হয়!
বিয়ের দিনের জন্য আর অপেক্ষা করতে হয়নি। আব্বু আমার কেনা পাঞ্জাবিটা পরেছে। একদিন সকালে এসে বলেন, ‘এই দেখ’। সে পাঞ্জাবিটা পরে আমাকে দেখাতে এসেছে। আমি কয়েকটা ছবি তুলে রেখে দিয়েছি। ভালো লাগার এমন ছোট্ট অনুভূতিগুলো অমূল্য।

আব্বুর ইচ্ছে ছিল আমি যেন মেডিকেলে পড়াশোনা করি। আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। মায়ের সঙ্গে সবার তৈরি হয় নাড়ির সম্পর্ক, আর বাবার সঙ্গে আত্মার। আমি বিপদে পড়লে, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলে আমার আব্বু সবার আগে এগিয়ে আসেন।

লেখক: চীন বন্ধুসভা এবং শিক্ষার্থী, নিংশিয়া মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চীন