সুপ্রভা

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

অরবিন্দ বাবুর হেঁটে বেড়ানোর বাতিক আছে। ছয় বছর ধরে হাতের লাঠি সঙ্গী করে হেঁটে বেড়ান। মানুষ দেখেন, মানুষ চেনেন। হাঁপিয়ে গেলে অশ্বত্থগাছের নিচে বসেন। মনের অস্পষ্ট স্মৃতিগুলো বসার সঙ্গে সঙ্গে গাঢ় হয়ে ওঠে। ছয় বছর আগেও এই হাতে অন্য একজনের হাত ছিল। সুপ্রভার কোমল হাত। যে হাত ধরে তিনি হেঁটেছেন বহুদিন।
অরবিন্দ লাজুক মানুষ। মনে কাঁচা মেঘের বসবাস। হাওয়ায় ভেসে ভেসে তাঁর মনের মেঘ উড়ে বেড়ায়। কিন্তু সেই মেঘ জমে কখনো কালো হয়নি। কালো হলো সেদিন, যেদিন সুপ্রভা তাঁর হাত ছেড়ে চলে গেল। সুপ্রভার মরদেহ বাড়ির উঠানে রাখা হলেও অরবিন্দের বিশ্বাস ছিল, হাত বাড়ালেই সুপ্রভা খপ করে ধরে বলবে—‘চলো একটু হেঁটে আসা যাক।’ তিনি এ ব্যাপারে নিশ্চিত।

সুপ্রভার দেহ শ্মশানের দিকে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে, অরবিন্দ বাবু ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। শেষবারের মতো প্রিয় মানুষটির হাত ধরবেন। আস্তে আস্তে সুপ্রভার দেহের কাছে গেলেন অরবিন্দ বাবু। ডান হাতের অনামিকা বাড়িয়ে দিয়ে নরম করে বললেন—‘বেলা ফুরিয়ে যাচ্ছে সুপ্রভা। চলো এবার একটু বেরোই। হেঁটে আসা যাক।’
অরবিন্দ বাবু হাসছেন। আশপাশে কান্নার শব্দ বাড়ছে। বৃষ্টির ফোঁটা অরবিন্দ বাবুর অনামিকায় পড়ল। অশ্বত্থগাছের নিচে তিনি ডান হাতের অনামিকা বাড়িয়ে বসে আছেন।

লেখক: বন্ধু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা