শুক্রবারের ঢাকা

শুক্রবারে ঢাকার রাস্তা অনেকাংশেই ফাঁকা থাকেছবি: সাইফুল ইসলাম

জাদুর এই শহরে শুক্রবার মানেই আধো উৎসব ভাব! কারও কারও ঘুম ভাঙে একটু দেরিতে, আর কেউ আবার হাঁটাহাঁটির জন্য সকালেই ঘুম থেকে উঠে যায়। ভোরের আলো ফুটে উঠতে না উঠতেই পাপুউউউউউউশ, ঝাড়ু, এসব নিয়ে ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাকে মুখর হয়ে ওঠে চারপাশ। অন্য দিনের চেয়ে এই দিনটা একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আজ চাকরিজীবীদের ছুটির দিন।

ঘরের বারান্দা দিয়ে নিচে তাকালেই যখন দেখতে পাই রাস্তায় কর্তা-গিন্নি মিলে ওই ফেরিওয়ালার কাছ থেকে তাদের ঘরের জন্য প্রয়োজনীয় সব জিনিস কিনছে, ওই দৃশ্য আমার কাছে স্বর্গীয় মনে হয়। আর যারা বাজারে যাবে, তাদের হাতে গিন্নিরা বাজারের ব্যাগ ও ফর্দ ধরিয়ে দেয়!
দুপুরের খাওয়া শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত শুধুই অলসতা আর নিজের মতো করে থাকা। শুক্রবারের সবচেয়ে সুন্দর সময় এটাই!

যারা ঘুরতে বের হবে, সারা দিনের জন্য তারা সকালেই গায়েব। যারা ঘরে থাকে, তাদের শুরু হয় টিভি রিমোটের ওপর অত্যাচার। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসতে থাকে মজার মজার সব ঘ্রাণ, খিচুড়ি, মাছভাজা অথবা বিশেষ কোনো রান্না, যা এই দিনটার জন্যই যেন তুলে রাখা হয়!
সবচেয়ে ঝামেলায় থাকে কোচিংয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা। না ঘরকা, না ঘাটকা, পুরো সকালটাই মাটি! দুপুরের রোদ শেষ হয়ে আসে।

এই একটা দিন পরিবারের সব সদস্য এক হয়। দুপুরের খাওয়ার সময়টা রীতিমতো উৎসবমুখর হয়ে ওঠে প্রত্যেক বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে! বিকেল হয়ে এলে জনসংখ্যার প্রচণ্ড চাপ পড়ে বিভিন্ন বিনোদনকেন্দ্রে। হাতিরঝিল, টিএসসি, রমনা পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন মুখর হয়ে ওঠে। কেউবা আবার সন্ধ্যায় শপিংয়ে বের হয়। রাতে নগরীর অভিজাত এবং সাধারণ খাবারের দোকানগুলোও গমগম করতে থাকে খাদ্যপ্রেমীদের উচ্ছ্বাসে! কারও বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনের বাসায় দাওয়াত থাকে। অনেকে ঢাকার বাইরে দূরে কোথাও ঘুরতে চলে যায়।

এরপর এই ক্লান্ত দেহে ঘরে ফেরা, আবার আগামী সপ্তাহের শুক্রবারের অপেক্ষা। এভাবেই চলে জীবন, চলছে...!

লেখকের ঠিকানা: মালিবাগ, ঢাকা