শিউলি ফুলের ভালোবাসা

প্রতীকী ছবি
হাসান মাহমুদ

আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। বাবা সাতক্ষীরা থেকে যশোরে বদলি হলেন। আমরা পুরো ফ্যামিলি যশোরে শিফট হলাম। যশোর বেজপাড়াতে আমাদের নতুন বাসা। নতুন জায়গায় এলে প্রথম প্রথম সবারই খারাপ লাগে। বন্ধুবান্ধব হতে সময় লাগে। আবার পুরোনো বন্ধুদের কথা মনে পড়ে। আমিও এর ব্যতিক্রম ছিলাম না। যশোরে আসার এক মাস পরেও মানিয়ে নিতে পারছিলাম না।

একদিন বিকেলে হাঁটছি, হঠাৎ আমাদের বাসা থেকে একটু দূরে একটা শিউলিগাছ দেখতে পেলাম। কয়েকটা শিউলি ফুল গাছের নিচে পড়েও আছে। আমাদের গ্রামের বাড়িতেও একটা বড় শিউলিগাছ ছিল। তাই শিউলি ফুলের প্রতি আকর্ষণ, ভালোবাসা আগে থেকেই ছিল। শিউলি ফুল দেখে এক অজানা আনন্দে মনটা ভরে গেল। মনে মনে ঠিক করে ফেললাম, প্রতিদিন সকালে শিউলি ফুল কুড়াতে আসব।

পরদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠেই চলে এলাম শিউলিতলায়। শিউলিতলা ফুলে ভরে গেছে। মন পুলকে শিহরিত হতে লাগল। ফুল কুড়ানো শুরু করতেই পাশ থেকে আমার বয়সী একটা মেয়ে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার নাম কী? কোথায় থাকো? কোন ক্লাসে পড়ো?’ এতগুলো প্রশ্ন একটা অচেনা মেয়ের কাছ থেকে শুনে প্রথমে আমি থতমত খাই। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে তার সব প্রশ্নের উত্তর দিই। কথায় কথায় জানতে পারি, সে–ও ক্লাস ফাইভে পড়ে। নাম শিউলি। প্রথমে ভেবেছিলাম, সে মজা করে বলছে যে তার নাম শিউলি। পরে জানতে পারি, সত্যিই তার নাম শিউলি। সে–ও এখানে নতুন এসেছে। বাবার চাকরি সূত্রে।

প্রতিদিন সকালে আমি আর শিউলি চলে যেতাম শিউলি ফুল কুড়াতে। দুই দিনেই দুজনের মধ্যে মিতালি হয়ে যায়। ফুল কুড়ানোর সাথি থেকে সে হয়ে যায় আমার খেলার সাথি। এভাবে বেশ ভালোই কাটছিল। আমিও অন্য খেলার সাথি খুঁজতে যাইনি, শিউলিও নয়।

আমাদের সবচেয়ে ভালো সময় কাটত শরৎকালে। শরৎ এলেই সকালবেলায় শিউলির সঙ্গে শিউলি ফুল কুড়ানো শুরু হয়ে যেত। এ রকমই এক শরতের সকালে শিউলি জানাল, তার বাবা অন্যত্র বদলি হয়ে গেছেন। আগামী শুক্রবার তারা চলে যাবে। আমাদের আর একসঙ্গে শিউলি ফুল কুড়ানো হবে না। এ কথা বলতে বলতে শিউলির চোখে জল চলে এল। আমি তখন কাঁদিনি। কিন্তু বাসায় ফিরে খুব কেঁদেছিলাম। শিউলিকে কখনো ভুলতে পারিনি। এখনো শরৎ এলে মন চলে যায় শিউলিতলায়, শিউলির খোঁজে।