শরতের নান্দনিক সাজে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের কাশবন

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের কাশবন
ছবি: সংগৃহীত

শরৎ নিয়ে বহু কবিতা ও গান রচিত হয়েছে। শরতের নীল আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা মেঘের ভেলা। এখন শরৎকাল, দেশের অনেক জায়গায় শরতের নান্দনিক সৌন্দর্য দেখা যাচ্ছে। তেমনই হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাশের ছড়া কাশফুলে ছেয়ে গেছে। অনেকেই ছুটছেন সেখানে প্রকৃতির বুকে শ্বাস নিতে। ছড়ার সোনালি বালুগুলোতে লেপটে আছে দর্শনার্থীদের পায়ের চিহ্ন।

শ্রাবণ মাস শেষে বর্ষা ঋতুকে বিদায় জানিয়ে প্রকৃতিতে শরতের আগমন। শরৎকে বলা হয় শুভ্রতার প্রতীক। শিউলি ফুল, স্বচ্ছ আকাশ, মায়াবী জ্যোৎস্নার কারণেই এমন নাম হয়েছে। তবে এর মধ্যে অন্যতম কাশফুল। শরৎকে স্বাগত জানাতে মেতে উঠেছে কাশফুল।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের কাশবন
ছবি: সংগৃহীত

সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির রাজ্য সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের পাশেই সবুজ চা–বাগানের মধ্যখানে ছড়ার পাড়ে মাথা উঁচু করে দোল খাচ্ছে শুভ্র এই কাশফুল। সেখানে প্রাকৃতিক নিয়মেই তৈরি হয়েছে কাশফুলের বাগান। নজরকাড়া কাশফুলের হাতছানি মানুষের মনকে ভীষণভাবে টেনে নিয়ে যায়।

কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকেরা প্রতিনিয়ত ভিড় জমাচ্ছে সেখানে। যান্ত্রিক নাগরিক জীবনের একঘেয়েমি কাটানোর জন্য এই কাশফুলের সান্নিধ্যে আসেন বহু মানুষ। কাশফুলের শুভ্রতা মনকেও শুদ্ধ করে দেয়।

হবিগঞ্জ শহর থেকে পরিবার নিয়ে আসা ইসরাত অপি বলেন, ‘আমরা এখানে এসেছি কিছু ছবি তোলার জন্য। এখানের দৃশ্য সত্যি খুব মনোরম, শুভ্রতার রেশ যেন চারদিকে ছড়িয়ে আছে।’

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের কাশবন
ছবি: সংগৃহীত

বন্ধুদের নিয়ে কাশবন দেখতে আসা এস এম মিজান বলেন, ‘বৃষ্টি আর রৌদ্রছায়ার খেলার মধ্য দিয়ে ধবধবে দুধসাদা ফুলে ভরে ওঠে কাশবন। মৃদু বাতাসে যখন দোল খায় কাশফুল, দেখে মন ভরে ওঠে আনন্দে। শরতের এই রূপ যে কাউকে মুগ্ধ করে তুলবে।’

নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের কোনো উঁচু জায়গায় কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। বাংলা সাহিত্যে কাশবনের বহু বর্ণনা পাওয়া যায়। কাশফুলের জাত ভাইয়ের নাম কুশ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পুরাণে কুশের স্থান খুব উঁচুতে। সাহিত্যে কাশফুলের কথা নানাভাবে এসেছে। রবীন্দ্রনাথ প্রাচীন গ্রন্থ কুশজাতক কাহিনি অবলম্বন করে শাপমোচন নৃত্যনাট্য রচনা করেছেন।

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের কাশবন
ছবি: সংগৃহীত

কাশফুলের ইংরেজি নাম Kans Grass ও উদ্ভিদতাত্ত্বিক বৈজ্ঞানিক নাম Saccharum Sportaneum। এটি ঘাসজাতীয় জলজ উদ্ভিদ। কাশফুলের মঞ্জরি দণ্ড ১৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার লম্ব হয়ে থাকে। বীজে সূক্ষ্ম সাদা লুম থাকে। কাশ উদ্ভিদ প্রজাতির, উচ্চতায় ৩ থেকে ১৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। এর শিকড় গুচ্ছমূল থাকে। পাতা রুক্ষ ও সোজা।

পালকের মতো নরম কাশের সাদা সাদা ফুল। কাশফুল শুভ্রতার অর্থেও ভয় দূর করে শান্তির বার্তা বয়ে আনে। আর এ জন্যই শুভ কাজে ব্যবহার করা হয় কাশফুলের পাতা বা ফুল।