শব্দ-ব্রহ্ম

অলংকরণ: বাবুল হোসাইন সোহাগ

একটি জাহাজ বানিয়েছি—
নানা রঙের, নানা ওজনের, নানা কিসিমের শব্দ জুড়ে জুড়ে।
যে শব্দটি উচ্চণ্ড কর্কশ, তার নাম রেখেছি বদমেজাজি।
নরম উচ্চারণের শব্দটিকে নম্র বলে ডাকি।
অনর্গল উচ্চগ্রামের শব্দটির নাম মুখরা।
ফিসফিস শব্দটি যেমন কানাঘুষোর নামান্তর,
তেমনি দাঁত কিড়মিড় শব্দটির সাথে হিংসার কোথাও যেন মিল খুঁজে পাই!
অট্টহাসির যে শব্দে মন আঘাত পায়, তার নাম রেখেছি দাম্ভিক;
আবার, যে শব্দটির অভিঘাতে হাড় হিম হয়ে যায়, সে আতঙ্ক।
যে শব্দটি আর সমস্ত শব্দকে দাবিয়ে রাখতে চায়, তার নাম ত্রাস!

কান্নার মতো শোনায় অথচ ঠিক যন্ত্রণাগত নয়, সেই শব্দটিকে বলি কুম্ভীরাশ্রু।
যে শব্দটির অনুরণনে ঢাকের আওয়াজ, তার নাম দিয়েছি প্রতিশ্রুতি।
মিহি সুরের দুর্বোধ্য শব্দটির নাম রেখেছি প্রবঞ্চক।
মিছিলের শব্দের নাম—বিপ্লব।
যে শব্দটি কানে আসে অথচ তার উৎস খুঁজে বেড়াই, তার নাম—সোনার হরিণ!
তবে কিনতে পারিনি জলের ওপর বৃষ্টির শব্দ, নদীর শব্দ, ঝরনার শব্দ, বাতাসের শব্দ,
শিশিরের শব্দ, ফুল ফোটার শব্দ;
যেভাবে পাখির গান, সমুদ্রগর্জন ও বিদ্যুৎ-নির্ঘোষ আমার সামর্থ্যের বাইরে ছিল।
আর হ্যাঁ, এত সব শব্দকোলাহলের ভিড়ে, ভালোবাসাকে কোথাও খুঁজে পেলাম না;
হঠাৎ মনে পড়ে, সে তো শব্দহীন!
তো, ভালোবাসা ছাড়াই রংচঙে শব্দগুচ্ছ দিয়ে পাল তোলা একটি জাহাজ বানালুম;
কিন্তু, আদৌ তা চলবে কি না, খোদাই মালুম!