রিদির চিঠি

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

মায়ের কোলে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে রিদি। অনেক রাত হয়েছে, কিন্তু তার চোখে ঘুম নেই। মা অনেক গল্প শোনায় তাকে, তবুও ঘুম আসে না। একটু পরে মা ঘুমিয়ে যায়। রিদির এখন খুব মন খারাপ। ভীষণ কান্না পায়। একসময় হু হু করে কেঁদে ওঠে।

ফোলা ফোলা গাল বেয়ে চোখের গরম পানি গড়িয়ে পড়ে। রিদির আজ খুব বাবার কথা মনে পড়ছে। আজ সকালে রিদি যখন স্কুলে যাচ্ছিল, তখন সে একটা ছোট্ট ছেলেকে পার্কে দেখেছে। ছেলেটা তার বাবার কাঁধে বসে আছে। ছেলেটার বাবা গল্প শোনাচ্ছে। গল্প শুনে ছেলেটা খিলখিল করে হাসছে। সোনালি রোদে ছেলেটার হাসিমাখা মুখ ঝলমল করছে। একটু পরে ছেলেটা বাবার কাঁধ থেকে নামে। বাবার হাত ধরে ফড়িঙের মতো নেচে নেচে বেড়ায়। তখন রিদির বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল।

কত দিন সে বাবার কোলে ওঠে না! কত দিন সে বাবার গায়ের গন্ধ পায় না! সবার বাবা কাছে থাকে, কেবল তার বাবাটাই দূরে থাকে। বাবাটা আসলে বোকা। তা না হলে তাকে ছেড়ে কি দূরে থাকতে পারে? চাকরি করলে বুঝি কাছে থাকা যায় না?

তিন–চার মাস পরপর বাবা আসে। তা–ও আবার দু-তিন দিনের জন্য। এটুকু সময়ে বাবাকে কাছে পেয়ে মন ভরে না রিদির। এসব ভেবে অভিমানে ছোট বুকটা ভরে ওঠে। মনটা মোচড় দিয়ে ওঠে।
বাবাকে অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করে। বাবার পিঠে চড়ে ঘোড়া ঘোড়া খেলতে ইচ্ছা করে। রিদি মুঠোফোনটা হাতে নেয় বাবাকে কল দেওয়ার জন্য। এমন সময় তার মনে হয়, আজ সে মুঠোফোনে কথা বলবে না। আজ বাবার কাছে চিঠি লিখবে।

ঝটপট খাতা–কলম নিয়ে বসে ৯ বছরের রিদি। গোটা গোটা অক্ষরে নীল কালিতে লেখে, ‘আমার বোকা বাবা, তুমি কেমন আছ? তোমার জন্য এখন আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমার জন্য কি তোমার কষ্ট হয়?’
চিঠি লিখতে লিখতে রিদির চোখ দুটো ছলছল করে। বিকেলে মা চোখে কাজল দিয়ে দিয়েছিল। কাজলের কালি চোখের পানিতে গলে গলে টপটপ করে চিঠিতে পড়ে।

রিদি বাবাকে লেখে, ‘বাবা, তুমি এক্ষুনি চলে আসো। আমার জন্য খেলনা, জামা, জুতা কিছুই আনতে হবে না। তুমি এলেই আমি খুশি। শুধু তুমি চলে আসো।’

বাবার মুখটা মনে হতেই রিদির কান্নাভরা মুখে হাসি ফুটে উঠল। হাসি-কান্নার মধ্যে তার মুখটা বড় অদ্ভুত দেখায়।

চিঠি লেখা শেষ করে মায়ের কাছে যায় রিদি। মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। রিদির মনটা এখন অনেক ভালো। আগামীকাল সকালে চিঠিটা সে বাবার কাছে পাঠিয়ে দেবে। রিদি জানে, চিঠিটা পড়েই বাবা তার কাছে ছুটে আসবে।

মনিরা মিতা: সমাজকল্যাণ সম্পাদক, খুলনা বন্ধুসভা

বন্ধুসভায় লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]