চৈত্রের আকাশ। বাইরে বেশ গরম। এ রকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না মোটেই। চোখে জ্বালা করে। পাবনা স্টেশন থেকে রেলে চেপেছি। আমার মুখোমুখি এক তরুণী। চোখে সানগ্লাস। কালো। সে তাকিয়ে আছে জানালা দিয়ে। তার এত প্রকৃতিপ্রেম যে সামনে থাকা এই দর্শনযোগ্য যুবককে কোনোভাবেই পাত্তা দিতে নারাজ সে। একবারের জন্যও আমার দিকে তাকাতে দেখলাম না তাকে।
রাজশাহী যাব বলে সময় কাটানোর জন্য গোটা দুই গল্পের বই নিয়েছিলাম। তাতেও মন দিতে পারছি না। ভাবছিলাম ওই তরুণীর চোখ দুটির কথা। এ বয়সে বার কয়েক চোখাচোখি হওয়ারই কথা ছিল। মেয়েটিরও একটু লজ্জা পাওয়ার কথা ছিল! কিন্তু কিসের কী? মেয়েটির এদিকে কোনো নজরই নেই। তার চোখ গাছপালা, নদী আর মাঝেমধ্যে কয়েকটা মাঠে চরা গরুর দিকে।
আমার পাশে এক নিপাট ভদ্রলোক ঘুমাচ্ছে। নাক থেকে সুরেলা আওয়াজ ভেসে আসছে। আমার তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। আমার দৃষ্টির সঙ্গে শ্রবণক্ষমতাও তরুণীর দৃষ্টির দিকে ধাবিত হচ্ছে। মেয়েটা কি রোবট নাকি? এই কাঠিন্যের কী রহস্য? প্রকৃতিই মাঝেমধ্যে রহস্য করে, আবার সে রহস্য উন্মোচনও করে। আমার রহস্যেরও ভেদ হলো।
রাজশাহী স্টেশনে ট্রেন পৌঁছানোমাত্রই পাশের সুরেলা শব্দে নাকডাকা মানুষটি জেগে উঠল। তারপর মেয়েটির দিকে একটা সাদা লাঠি এগিয়ে দিয়ে বলল, নে, চল মা। আমরা স্টেশনে এসে গেছি!