মেয়েদের মন

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

রফিক যখন অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে উঠল, তখন মেয়েটির সাথে ক্যাম্পাসে দেখা। এদিক–ওদিক তাকাচ্ছে, মনে হয় যেন কাউকে খুঁজছে। রফিক মনোবিজ্ঞানের ছাত্র, মানুষের মুখ দেখেই বুঝতে পারে। এগিয়ে যায়, আপনি কি কাউকে খুঁজছেন?

না, ইয়ে, মানে, মনোবিজ্ঞান বিভাগটা কোন দিকে বলতে পারেন?

পারব না মানে? আমি ওই বিভাগের ছাত্র, সেকেন্ড ইয়ার; আসুন, আমার সাথে।

রফিক মেয়েটিকে বিভাগে নিয়ে যায়। ফরম ফিলআপ করে টাকা জমা দিয়ে রশিদ বুঝিয়ে দিয়ে একেবারে রিকশায় তুলে দেয়।

মেয়েটি বলে, ‘ভাইয়া আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনি অনেক উপকার করলেন, মোবাইল নম্বর দিন যদি কখনো দরকার হয়।’

সিওর সিওর বলে রফিক নম্বর দেয়। রিকশা চলতে শুরু করে। রফিক চলন্ত রিকশার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, সৃষ্টিকর্তা বোধ হয় এবার মুখ তুলে চেয়েছেন। ওর বন্ধুদের দু–তিনটা করে গার্লফ্রেন্ড। একটা ছাড়ে তো আরেকটা ধরে। আর ও এখন পর্যন্ত একটা গার্লফ্রেন্ড জোগাড় করতে পারল না।

সেই থেকে শুরু। রিতা ওর ভালো বন্ধু হয়ে যায়। রিতার সাথে প্রতিদিন দেখা হওয়া চাই-ই চাই। নোট দিয়ে, পড়া বুঝিয়ে দিয়ে নানাভাবে রিতার পাশে থাকে। শুধু ভালোবাসার কথাটা মুখ ফুটে বলতে পারে না। ওর বন্ধুরা পরামর্শ দেয়, ‘বলে ফেল, বলে ফেল নচেত কেউ শূন্যস্থান পূরণ করে নেবে।’

রফিক বলে, ‘ও সেই রকম মেয়েই নয়, আমি মনোবিজ্ঞানের ছাত্র, আমি বুঝতে পারি ও আমাকে ভীষণ ভলোবাসে।’

বন্ধুরা বলে, ‘তোকে কখনো বলেছে, যে তোকে ভালোবাসে?

‘বলতে হবে কেন? আমি কি বুঝি না? আর মেয়েরা কি কখনো মুখ ফুটে বলে?’

‘মেয়েরা মুখ ফুটে বলে না, তো তুই বলিস না কেন?’

‘বলব বলব কয়েকটা দিন যাক।’

দেখতে দেখতে দুই বছর পার হয়ে যায়। একদিন রিতা রফিককে বলল, ‘তোমাকে আমার বাসায় যেতে হবে, তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।’

রফিক মনে মনে খুশি হয়। নিশ্চয়ই ওর মা–বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে, আমাদের ভালোবাসার কথা জানাবে।

যথাসময়ে রফিক রিতাদের বাসায় হাজির। গেটে নক করতেই সুদর্শন এক যুবক দরজা খুলে রফিককে জড়িয়ে ধরে।

‘হ্যালো ইয়াং ম্যান, তোমার কথা শুনতে শুনতে তোমার চেহারা মুখস্থ হয়ে গেছে, তুমি আমার স্ত্রী রিতার যথেষ্ট সহযোগিতা করেছ, তোমার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’

নাশতার প্লেট নিয়ে রিতা হাজির হয়, চা–নাশতা খেত খেতে রিতার হাজব্যান্ড বলে, ‘ইন্টার পরীক্ষার পর ওর সাথে আমার বিয়ে হয়। দুই মাস পরে আমি বিদেশ চলে যাই। ও বলল, অনার্সটা শেষ করি, বললাম ভেরি গুড, পরেরটা তো তুমি জানোই।’

বের হওয়ার সময় রফিকের হাতে একটা বিদেশি ব্লেজার ধরিয়ে দেয়। রফিক শুনেছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ কিন্তু আজ রফিকের কাছে এই ব্লেজার তার চেয়েও ভারী মনে হয়।

মনে মনে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফরিয়াদ করে, হে সৃষ্টিকর্তা, যে মনোবিজ্ঞান পড়ে মেয়েদের মন বোঝা যায় না, সেই বিজ্ঞান পড়ে কী হবে? তুমি এমন কোনো বিজ্ঞান দাও, যা দিয়ে মেয়েদের মন বোঝা যায়।