মুরগির একটি পা

প্রতীকী ছবি।
প্রতীকী ছবি।

বহুকাল আগে একদিন মোল্লা নাসির উদ্দিন হোজ্জার বন্ধুরা তার বাড়ির দরজার কড়া নেড়ে বলল, নগরীর শাসক বদলেছেন, নতুন শাসক এসেছেন।
- শাসক বদলেছে তো কী হয়েছে? তাতে আমার কী?
- তোমার কী, মানে? এটা কি ধরনের কথা? যত দ্রুত সম্ভব শাসকের জন্য উপহারের ব্যবস্থা করো এবং তাঁর কাছে নিয়ে যাও।
হোজ্জা বলল, ‘আচ্ছা! এতক্ষণে বুঝতে পারলাম, আমাকে কী জন্য উপহারের ব্যবস্থা করতে হবে এবং নতুন শাসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, ভবিষ্যতে যদি তোমরা কোনো ঝামেলায় পড়ো, আমি যাতে মধ্যস্থতা করতে পারি এবং শাসকের কাছে বলতে পারি তোমাদের সহায়তা করতে।
বন্ধুরা বলল, ‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ।’
হোজ্জা জিজ্ঞেস করল, ‘এই মধ্যস্থতায় আমার কি লাভ?’
বন্ধুরা বলে উঠল, ‘আরে বাবা! তুমি অভিজ্ঞ বয়স্ক মানুষ।’ অন্য একজন বন্ধু বলল, ‘চিন্তা কোরো না, আমরা নিজেরাই উপহারের ব্যবস্থা করব। বেশ বড়সড় এবং হৃষ্টপুষ্ট একটা মুরগি রান্না করব যাতে সেই উপহারটি শাসকের বাড়িতে নিতে নিয়ে যেতে পারো।’
হোজ্জা বলল, ‘দুটি মুরগি রান্না করো। একটি মুরগি স্ত্রী, সন্তান এবং আমার জন্য। কারণ, আগামীকাল আমাকে অবশ্যই খুব ভালো প্রস্তুতি নিতে হবে, যাতে শাসক উপহারটি সাদরে গ্রহণ করেন।’
পরের দিন তারা দুটি মুরগি ফ্রাই করে হোজ্জার বাড়িতে এল। একটি ফ্রাই মুরগি হোজ্জা তার স্ত্রীর কাছে দিল। অন্য ফ্রাই মুরগিটি ট্রেতে সুন্দরভাবে সাজিয়ে এবং ভালো ভাবে ঢেকে শাসকের জন্য নিয়ে গেল।
পথিমধ্যে তার বেশ ক্ষুধা পেল। চটজলদি ট্রের ঢাকনা খুলে মুরগির দুটি পা থেকে একটি পা খেয়ে ফেলল, আবার সুন্দর করে ঢেকে রাখল এবং শাসকের কাছে নিয়ে গেল। শাসক ঢাকনাটি খুললেন। ট্রেতে চোখ পড়তেই হোজ্জার মুরগির একটি পা দেখে শাসক হতবাক হয়ে গেলেন ।
জিজ্ঞেস করলেন, মুরগির একটা পা কেন? উত্তরে হোজ্জা বলল, আমাদের শহরের ভালো মুরগিগুলোর একটি পা থাকে। শাসক বুঝতে পারলেন, হোজ্জা খুবই বুদ্ধিমান মানুষ। কিছুক্ষণ পর হোজ্জাকে বললেন, ‘মধ্যাহ্নভোজে আমাদের আতিথেয়তা গ্রহণ করুন।’
এ ঘটনার পর থেকে যখন কেউ নিজের অন্যায় কাজের ওপর অবিচল থাকে, তখন তাকে বলা হয়, ‘তার মুরগির একটি পা।’

সাংগঠনিক সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা

বন্ধুসভায় লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]