ভূতের পাঁচালী

ভূতের পাঁচালিঅলংকরণ: মামুন হোসাইন

দিনের আলো বাড়ার সাথে সাথে লোকজনের আনাগোনা বাড়তে থাকে রমিজ মিয়ার বাড়িতে। তিন বন্ধু—বিটুল, তমাল, শরীফও বড় মসজিদের হুজুরকে সাথে নিয়ে এলাকার বিখ্যাত ঘুষখোর ও কুখ্যাত বিচারক রমিজ মিয়াকে দেখতে গিয়েছে। মাওলানা সাহেব পড়াপানি দিয়েছে। রমিজ মিয়ার বাড়ির চারদিকে ঘুরে ঘুরে তিনি কীসব পড়েটড়ে ফুঁ দিয়েছেন। বিটুলরা অনেকক্ষণ ওই বাড়িতে ছিল। বিটুল রমিজের সামনেই লুঙ্গির কোঁচড় থেকে এক শ টাকার একখানা নোট বের করে হুজুরের হাতে দিল আর বলল, ‘হুজুর, জোহরের নামাজের পর রমিজ দাদার লাইগ্গা মসজিদে মিলাদ ও দোয়া পড়াইয়েন। আমরা জিলাপি আর আগরবাতি লইয়া আমু নে।’

গতকাল সন্ধ্যায়ও রমিজ মিয়া সালিস বৈঠকে দুই নাম্বারি করেছে। রহিমের কাছ থেকে পনেরো শ টাকা খেয়ে তার পক্ষে মিথ্যা রায় দিয়েছে। উপরন্তু নিরপরাধ করম আলীকেই বর্বরভাবে অপমান করল। করম আলী শিশুর মতো বুক চাপড় দিয়ে বিলাপ করছিল! আর দুহাত ওপরে তুলে আল্লাহর কাছে নালিশ করেছিল। অন্যায়ের বিচার চেয়েছিল সে।

গ্রামের সবার মুখে একই কথা, রমিজকে ভূতে ধরছে। একেকজন একেকভাবে গল্পটা রসিয়ে কষিয়ে বলছে। তবে অনেকে খবরটা শুনে মনে মনে খুশিও হয়েছে। বিটুলরা করম আলীর খুপরি ঘরে ঢুকে বলল, ‘দেখছ চাচা, আল্লার মাইর শেষ রাইতে। তুমি নগদে বিচার পাইলা। তমাল, ট্যাহাগুলা আমার কাছে দে। এই ধরো, এহানে পনেরো শ ট্যাহা আছে। রাখো। আবার ইস্কুলের সামনে তুমি ঝালমুড়ি বেচবা। আমগোরে মাঝে মাঝে একটু বেশি খাওয়াইয়ো কিন্তু।’ টাকাটা হাতে নিতেই করম আলীর চোখটা ছলছল করে উঠল। তবে মুহূর্তেই শামুকের মতো কান্নাটা লুকিয়ে করম আলী মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করল, ‘বাজানরা, হুনলাম ভূত নাকি পাঁচটা আছিল? তয় এহন বাকি দুইটা কই?’ শরীফ বুদ্ধিজীবীর মতো উত্তর দিল, ‘চাচা, রুমেল আর শাহিন ভূতের কথা হুনলে ডরায়...! কথাটা শেষ হতেই না হতেই সবার হাসির শব্দে করম আলীর খুপরি ঘরটা কেঁপে উঠল। ভৌতিক ব্যাপারস্যাপার…