বাবার সঙ্গে প্রথম হাটে যাওয়া

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

খুব ছোটবেলার কথা। এখনো ভাসছে সেই প্রথম দিন হাটে যাওয়ার স্মৃতি।
আমাদের গ্রামের নাম শ্রীপুর। ঝিনাইদহ জেলার কৃষিনির্ভর একটি অপার সৌন্দর্যের গ্রাম। এই গ্রামে আলুর চাষ বেশ ভালো হয়। বুঝ হওয়ার পর থেকে দেখে আসছি আমাদের আলুর চাষ।

তখন বয়স সবে চার বছর। খুব সকালে আব্বা নিয়ম করে মাঠে যান। একদিন আমি বায়না ধরে বলি, আমিও মাঠে যাব। কিন্তু আব্বা আমাকে সঙ্গে নেননি। পরে আমি চুপিসারে মাঠে চলে যাই। আব্বা পেছন ফিরে দেখেন, আমি এসেছি।
মাটিতে বস্তা পেতে দুটি আলু দিয়ে খেলা করতে দেন। আমি তা না করে হাত দিয়ে আলু তোলা শুরু করি। আলু নিয়ে গামলায় রাখি। আব্বা দেখে খুব খুশি হন। দুই বস্তা আলু তোলা হলে সাইকেলে নেওয়া হয়। বাড়িতে এনে ধৌত করে সেগুলো হাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য আব্বা প্রস্তুতি নেন।
মাকে জিজ্ঞেস করলাম, আব্বা কোথায় যাচ্ছে?
বললেন, হাটে। আমি বললাম, আমিও যাব। কিন্তু আমাকে যেতে দিচ্ছেন না।
শুরু করলাম কান্না। আমি হাটে যাব। কী আর করা, অগত্যা আমাকেও সঙ্গে নিয়ে গেলেন আব্বা।

অনেক পথ হাঁটি। আমার ভালো লাগছে। আমি জানি, আসার সময় আমাকে সাইকেলে নিয়ে আসবেন। একসময় ভবানীপুর হাটে পৌঁছে যাই। ডান দিকে দেখি একটি বড় বিল্ডিং, স্কুল। প্রবেশ করতেই দেখি মিষ্টির দোকান। মিষ্টি খাওয়ার কথা বলি। আব্বা বলেন, ফেরার সময় কিনে দেবেন।
আমি মিষ্টি খাওয়ার লোভেই হাটে আসার বায়না ধরেছিলাম। আলু বেচা শেষ হলে মিষ্টি কিনে দেন। জিলাপি, কটকটি আর রসগোল্লা কেনা হয়। তারপর বাড়ির জন্য বিভিন্ন জিনিস কেনেন আব্বা। আমি বললাম, মিষ্টি বাড়ি নিয়ে যাব। বাড়ি নিয়ে গেলে মা খেতে পারবেন। বেশি বেশি হাটে আসতে দেবেন।

সাইকেলের পেছনে বসে বাড়ির পথে রওনা হই। আব্বা বারবার সাবধান করে দিয়ে বলেন যেন শক্ত করে ধরে বসি। আমি সে কথা শুনলাম না। একটু পরে হাত ছেড়ে দিই, আর সাইকেল থেকে পড়ে যাই। কপাল গিয়ে লাগে রাস্তায় পড়ে থাকা ইটে। রক্ত বের হয়। আব্বা ঘাস চিবিয়ে কাটা অংশে লাগিয়ে দেন। বাড়িতে আসার পর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।
মা বলেন, হাটে যাওয়ার শখ মিটছে? তারপরও আমি হাটে যাওয়া বন্ধ করিনি। এখনো সেই দাগ আছে আমার কপালে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়