বাবার ছুটি

ছবি: মাসুক হেলাল

বাবাদের কখনো জিজ্ঞেস করা হয় না, ‘কেমন আছ?’ এক ধরনের আড়ষ্টতা অনুভব হয়। বাবাদেরও নিজেদের জন্য সময় হয় না, তাঁরা যে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ত মানুষ।
আমি বাবাকে কখনো ছুটি নিতে দেখিনি। অসুস্থতা, শত ঝড়-বাধা থাকলেও সেগুলো উপেক্ষা করে কাজে চলে যান। ছুটি নেওয়ার কথা বললেই জবাবে বলেন, ‘তোমার পড়াশোনা শেষ হলেই একদম ছেড়ে দেব চাকরিটা। নিজের একটা বাড়ি করবে। তোমার বাসায় বেড়াতে যাব। রাতের বেলা চাঁদ দেখব ছাদে বসে। তোমার কাজের লোকেরা এসে চা দিয়ে যাবে।’

সেবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারেন্টস ডেতে বলা হয়েছিল মা–বাবার জন্য চিঠি লিখতে। নিজের মনে যত্ত না–বলা কথা আছে, সব যেন তাতে লিখে ম্যামকে জমা দিই। খুব কষ্ট হয়েছিল চিঠি লিখতে। পাঁচ দিন সময় লাগে, তা–ও আবার চিঠির বিভিন্ন অংশে ভেজা জলছাপ। বাবার সঙ্গে কথা বলার থেকে তাঁকে লিখে নিজের অনুভূতি জানানো পৃথিবীর সব থেকে কঠিন কাজ মনে হচ্ছিল। সামনে থাকলে বাবা হয়তো মুখ দেখেই সব বুঝে ফেলতেন।
ভেবেছিলাম সেই চিঠি ম্যামের কাছে জমা দেব না। পরে একদম শেষ সময়ে টিচার্স রুমে গিয়ে জমা দিয়ে আসি।

প্যারেন্টস ডের জন্য বাবার কাছে যাই। বলি, ‘সবার মা–বাবা আসবেন, তোমাকেও আসতে হবে। নইলে ম্যাম বলেছেন এক্সামে কম মার্কস দেবে।’
বাবা আসবেন বলে কথা দিয়েছিলেন। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন ফোন করে জানান, ‘মা আজকে কাজের অনেক চাপ, এজন্য আসতে পারছি না রে।’ খুব মন খারাপ হয়েছিল। চিৎকার করে কান্না পাচ্ছিল।
ওই চিঠিটা আমার মায়ের হাতে দেওয়া হয়। বাবা বাসায় এলে সেটি তাঁর হাতে তুলে দেন মা। পরে বাবা চিঠিটা লুকিয়ে লুকিয়ে পড়েন। দেখে আমার আপনা–আপনি অশ্রু ঝরে পড়ে।
আজও খুব সুন্দর একটা চাঁদ উঠেছে, লিখতে হচ্ছে বাবাকে নিয়ে। কিন্তু বাবা ছুটি নিয়ে চলে গেছেন অনেক দূরে। লেখাটা বাবা হয়তো দেখতে পারবেন না।

লেখক: নারী ও শিশুবিষয়ক সম্পাদক, প্রথম আলো বন্ধুসভা, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়