বাবার কাছে চিঠি
আব্বা,
আম্মার কাছে শুনেছি আমার বয়স যখন ছয় মাস কি এক বছর, তখন আপনি পরিবারকে সচ্ছল করে তোলার জন্য প্রবাসে পাড়ি জমান। ওই সময়ে মুঠোফোনের প্রচলন তেমন ছিল না। এখনকার বাচ্চাদের মতো চাইলেই কথা বলা যেত না, ভিডিও কলে দেখা তো অনেক দূরের চিন্তাভাবনা।
দুই–আড়াই বছর পর যখন দেশে ফিরে আসেন, আমার বয়স তিন বছর হবে। এই তিন বছরে আমি বাবার স্নেহ-মমতা পাইনি। বুঝতামই না বাবা শব্দের মানে কী। যেদিন বাড়িতে আসেন, ওই রাতে আপনি আমাদের ঘরে রাতে একসঙ্গে ঘুমাতে গেলেন। তখন আমি অনেক কান্না করেছিলাম। কান্না করতে করতে কাকার কাছে অভিযোগ করে বলেছিলাম, এই লোক আমাদের ঘরে কেন! আমাদের ঘর থেকে তাঁকে বিদায় করেন। ওই রাতে আমি কাকার রুমে ঘুমাই।
আবার যখন প্রবাস লাইফে ফিরে যান ল্যান্ডফোনের প্রচলন বাড়তে থাকে। আম্মা নানাবাড়ি গেলে মাঝেমধ্যে আমাদেরকে ল্যান্ডফোনের দোকানে নিয়ে যেতেন। পরে আম্মাকে একটা মুঠোফোন দিলেন। সেই মুঠোফোন দিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারলে অনেক ভালো লাগত।
বাবা মানেই অন্য রকম ভালো লাগা, সুখের অনুভূতি। আপনাকে দেখে প্রতিনিয়ত শিখি সন্তানদের কীভাবে শ্রদ্ধা করতে হয়। আম্মার সঙ্গে মাঝেমধ্যে ঝগড়া করেন, তখন আমি বাসায় থাকলে চিল্লান দিয়া বলি, ‘আব্বা! কী শুরু করছেন এগুলা’, সঙ্গে সঙ্গেই পরিবেশটা নীরব হয়ে যায়। সন্তানের প্রতি আপনার এই শ্রদ্ধাবোধ আমাকে বিনয়ী হতে শেখায়।
প্রতিবার বাসা থেকে আসার সময় জোর করে রেখে দিতে চান। দুই দিন আগে টাকা দেওয়ার পরও যখন জিজ্ঞেস করেন, তোর কাছে বোধ হয় টাকা নেই। আগামীকাল পাঠিয়ে দেব। ভালোবাসি বাবা। সামনাসামনি হয়তো কখনো বলতে পারব না, তাই আজ বলছি।
লেখক: শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়