পারব না কেন, পারব

প্রতীকী ছবি
সংগৃহীত

আমরা সারাক্ষণই কোনো না-কোনো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হই। সেটিই হওয়ার কথা। কারণ, আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি, যেখানে সব মৌলিক চাহিদাই এখনো সবার জন্য পূরণ করা সম্ভব হয়নি। হয়নি বলেই চ্যালেঞ্জের পরিমাণ যেমন বেশি, তেমনি তার বৈচিত্র্যও অনেক।

ধরা যাক, ছাত্রজীবনের কথা। এসএসসি পাসের পর ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারব তো? এইচএসসির পর এই প্রশ্ন দ্বিতীয়—আচ্ছা, পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয় পাব তো? নাকি সম্পূর্ণ অনিচ্ছায়ই পাড়ি দিতে হবে শিক্ষাজীবন।

আমরা দেখেছি, আমাদের চারপাশে অনেকেই আছেন, যাঁরা যেকোনো চ্যালেঞ্জই অবলীলায় পার হয়ে যান। তাঁদের মুখের হাসি মলিন হয় না। তাঁদের হাসি দেখে আমরা ভাবি যে তাঁরা মনে হয় সব চ্যালেঞ্জেই জেতেন। আসলে একটু ভালো করে খোঁজ নিলে জানা যাবে, তাঁরা কিন্তু সবকিছুতেই সফল হননি বা হচ্ছেন না। তার পরও কেন তাঁদের হাসি অমলিন? কারণ, না পারাটাকে তাঁরা ব্যর্থতা হিসেবে নেন না! ওখানেই তাঁদের সাফল্য। এবং এই কারণেই তাঁরা এগিয়ে যান। আমি এটিকে বলি সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থ হওয়া—সাকসেসফুলি ফেইলিউর। মানে হলো, ব্যর্থতা থেকে শেখা। টমাস আলভা এডিসন বিজলি বাতির উদ্ভাবক। কার্যত তিনি বিজলি বাতি বানানোর সময় হাজারতম বারে সফল হয়েছিলেন। তাঁকে কেউ যখন বলত যে আপনি তাহলে ৯৯৯ বার ব্যর্থ হয়েছেন—তার জবাবে তিনি সব সময় বলতেন—না, ওই ৯৯৯ বারে আমি জেনেছি, যেভাবে আমি বিজলি বাতি বানানোর চেষ্টা করেছি, সেটা ঠিক না। আমাকে অন্যভাবে চেষ্টা করতে হবে এবং হাজারতম বারে আমি সঠিক পন্থাটি খুঁজে পেয়েছি।

তার মানে দাঁড়াল, অবিরাম চেষ্টার নামই সাফল্য। আমাদের অনেক সময় মনে হয় রবার্ট ব্রুস বা টমাস আলভার মতো ধৈর্য আমার নেই। তখন আমরা সম্পূরক প্রশ্নটা প্রায়ই করি না। প্রশ্নটা হলো, আচ্ছা তাঁরা এত অধ্যবসায়ী কিংবা ধৈর্যশীল কেমন করে হলেন? আমি কি সেটা পারব?

এই সম্পূরক প্রশ্নের এক বাক্যে কোনো উত্তর আমি বের করতে পারিনি। তবে আমার মনে হয়েছে, যদি কোনোভাবে জগতের রহস্যের নানা দিক একজনের কাছে উন্মোচন করা যায়, তাহলে তার জন্য কাজটা সহজ হয়ে যেতে পারে। আর এ জন্য দরকার নিজের মনের একটা জগত্ তৈরি করা। জগত্ তৈরির কাজটা হয় বই পড়ে, সিনেমা দেখে, গান শুনে কিংবা নাটক দেখে। আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আনন্দের ব্যাপার হলো, আমরা খুবই আধুনিক সময়ে বাস করছি। বিশ্ব হয়ে পড়েছে একটা বিশ্বগ্রাম। ফলে সারা পৃথিবীর সব ভালো কিছুরই আমরা উত্তরাধিকার হয়েছি।

বিশ্বের নানা স্থানে যা কিছু ঘটে, প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেটা জানতে পারি। একইভাবে বিশ্বের দূরতম স্থানে পড়ে থাকা বন্ধুর কাছেও আমরা নিমেষে পৌঁছে যেতে পারি। ফলে জগত্ তৈরির কাজটাও তাই অনেক সহজ। ইন্টারনেট, বই আর সিনেমা দিয়েই এই জগত্ তৈরি হবে। এর মাধ্যমে বাড়বে আমাদের মানসিক সক্ষমতা। মানসিক সক্ষমতাই হচ্ছে জরুরি, সেটি অন্য অনুষঙ্গগুলো জোগাড়ে সহায়তা করে। কাজেই পড়তে হবে প্রচুর, শুনতে হবে অহরহ আর সময়-সুযোগ হলেই সিনেমা। বয়সের ধর্মকেও মানতে হবে। বুয়েটে পড়ার সময় আমরা দলবেঁধে বলাকা সিনেমা হলেবেদের মেয়ে জোত্স্না সিনেমা দেখেছি। নীলক্ষেতে মবিলে ভাজা পেঁয়াজু খেয়ে দিব্যি থেকেছি।

তবে সফল হওয়ার আগে ব্যর্থ হওয়ার ব্যাপারটাও মাথায় রাখা উচিত। আমরা হয়তো ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন, গুগলের কথা আলাপ করতে পারি। ইন্টারনেট ব্যবহার করে কিন্তু গুগলের নাম শোনেনি, এমন মানুষ সম্ভবত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ইন্টারনেট, সার্চ ইঞ্জিন (যেখান থেকে ইন্টারনেটে প্রাপ্য তথ্যের ঠিকানা বের করা যায়), গুগলের আগেও ছিল, তবে গুগলই প্রথম ব্যাপারটিতে সাংস্কৃতিক মাত্রা যোগ করে। সার্চ ইঞ্জিনের ব্যাপার এখন ইন্টারনেট-সংস্কৃতির মূল অনুষঙ্গ। ‘গুগল করো’, ‘গুগলে গিয়ে দেখে নিয়ো’ ইত্যাদি এখন খুবই সাধারণ কথা। ইংরেজিতে এমনকি ‘গুগলাইজেশন’ নামে একটি নতুন শব্দ গুগলের সর্বগ্রাসী রূপকে প্রকাশ করে। বলা হয়ে থাকে, বর্তমানে ৭০ শতাংশেরও বেশি ওয়েবসাইটে লোকজন গুগল তথা সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে যায়! সাদামাটা দেখতে গুগলের প্রথম পাতাটিতে এর ব্যবসায়িক ব্যাপারটি সহজে দেখা যায় না, যদিও গুগল একটি মাল্টি বিলিয়ন কোম্পানি। আইটি ক্ষেত্রের সূতিকাগার আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির বিকাশের পেছনে সবচেয়ে বড় উপাদান স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভাবনের চর্চা, উদ্যমী প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলীদের ‘আইডিয়ার পেছনে’ উদ্যমী বিনিয়োগকারীদের (ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট) অবস্থান এবং হাজার হাজার ‘সাকসেসফুলি ফেইলিউরের কেস’।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় একজন শিক্ষার্থীর মানসপট তৈরি হয়। তার চিন্তাচেতনা এবং ভবিষ্যত্ কর্মজীবনের একটি স্বপ্নও সে এই সময় বোনে। নতুন কিছু গড়ে তোলার একটি আকাঙ্ক্ষাও হয় তীব্র। সিলিকন ভ্যালি তাদের সেই স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষাকে মূল্য দেয়। স্বপ্ন নির্মাণ ও বাস্তবায়নে দরকার সুযোগ ও অর্থ। সিলিকন ভ্যালিতে রয়েছে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি, যারা অর্থ নিয়ে দাঁড়ায় নতুন স্বপ্নচারীদের পাশে। আছে ব্যক্তি উদ্যমী বিনিয়োগকারীরা, যারা স্বপ্নের পেছনে অর্থ বিনিয়োগে পিছপা হয় না।

একজন শিক্ষার্থী বা শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপ হয়তো কাজ করছে কোনো নতুন ধারণা নিয়ে, সেটির পেছনের বিজ্ঞান আর ব্যবসাটাকে সাজাতে। দুটো জিনিসই দরকার। প্রথমত নতুন ভাবনাটি যে ফেলনা নয়, সেটি প্রমাণ করা। এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে নানা চড়াই-উতরাই পেরোতে হয় তাদের। কখনো কখনো তারা খুঁজে পায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই, যারা কাজ করছে বিভিন্ন কোম্পানিতে। এরপর সেটির ব্যবসায়িক দিকটি ভাবতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার কাজে কেউ দাতব্য প্রতিষ্ঠান খোলে না। কাজেই বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে ব্যবসায়িক মডেলটা ভালোভাবেই তৈরি করতে হয়। তারপর শুরু হয় বিনিয়োগকারী খোঁজার পালা। যেসব চিন্তাভাবনা, মডেল কাগজ আর কম্পিউটারে ছিল, সেগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা। কেউ সফল হয়, কেউ হয় না!

গুগলের গল্পটাই বলা যাক। ১৯৯৬ সালে ল্যারি পেজ আর সের্গেই ব্রিন স্ট্যানফোর্ডে তাঁদের পিএইচডি রিসার্চ হিসেবে ওয়েবে একটি নতুন অনুসন্ধানী এলগারিদম (ইন্টারনেটে তথ্য অনুসন্ধানের নতুন একটি পথ) নিয়ে কাজ শুরু করেন, সেই সময়কার সার্চ ইঞ্জিনগুলোর প্রচলিত পথ থেকে সরে এসে তাঁরা ওয়েব পাতাগুলোকে একটি র্যাংকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসেন। পেজ আর ব্রিন তাঁদের মডেল সার্চ ইঞ্জিনের নাম দেন ব্যাকরাব (Backrub)। তবে পরে তাঁরা গুগল (Google) শব্দটি বেছে নেয়। গুগল হলো ১-এর পর ১০০টি শূন্য দিলে যে সংখ্যাটি হয়, সেটি। সার্চ ইঞ্জিনটি কত বেশি তথ্য খুঁজবে, সেটা বোঝাতে এই শব্দটি নেওয়া হয়। শুরুতে এর ঠিকানা ছিল google.stanford.edu। পরে ১৯৯৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর এটি হয় google.com। ১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এক বন্ধুর গাড়ির গ্যারেজে, ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে গুগলের যাত্রা শুরু। দুই বন্ধুর টাকা ছাড়াও এ সময় তাঁদের পাশে দাঁড়ান সান মাইক্রোসিস্টেমের সহপ্রতিষ্ঠাতা এন্ডি বেথটোশেইম। কোম্পানি হওয়ার আগেই তিনি পেজ আর ব্রিনকে এক লাখ ডলার দেন। পরের বছর জুন মাসে দুটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি গুগলে আড়াই কোটি (২৫ মিলিয়ন) ডলার বিনিয়োগ করে। আর ২০০৪ সালে ৮৫ ডলারে গুগল শেয়ারবাজারে তাদের শেয়ার ছেড়ে দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলার জোগাড় করে! বিনিয়োগকারীরা যে ভুল করেনি তার প্রমাণ হলো, মাত্র তিন বছরের মাথায় এর প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৭০০ ডলারে!

যে সময়ে গুগলের এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা পায়, সে সময় কমপক্ষে কয়েক হাজার অনুরূপ উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। একটি সাধারণ হিসাবে বলা হয়ে থাকে, গড়পড়তা একটি সফল গুগল পাওয়ার জন্য কমপক্ষে আড়াই হাজার উদ্যোগের প্রয়োজন! কাজেই, সফল উদ্যোগ পেতে হলে আমাদের চেষ্টাবান হাজার হাজার উদ্যোক্তা প্রয়োজন হবে। ব্যর্থ উদ্যোক্তাদের প্রতি ভ্রু কুঁচকে তাকালে হবে না, তাদের নতুন উদ্যমে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

আমাদের দেশে উদ্যোক্তার ব্যাপারটা সহজ নয়। একটা কারণ হলো ব্রিটিশ শিক্ষা। মেকলে আমাদের কেরানি বানাতে চেয়েছেন এবং সফল হয়েছেন। ফলে আমাদের সবার ধ্যানজ্ঞান থাকে চাকরি নামের সোনার হরিণ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্টারপ্রিনিয়রশিপ নিয়ে কোর্স করানো হয়। এবং সেখানকার পড়াশোনাও বেশ ব্যতিক্রমী। হার্বার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করার পর সবাই নিজে একটা কিছু করার চেষ্টা করে। কয়েকবার ফেল করার পর তারা চাকরি করতে যায়। এসব কারণে সে দেশে উদ্যোক্তাবান্ধব একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ইসরায়েলেও একই রকম ব্যাপার। ইসরায়েলকে তো বলা হয় স্টার্ট আপ নেশন!

কিন্তু আজ আমরা খুব সহজে বলতে পারি, দেশে চাকরি দেওয়ার লোক না হলে চাকরি কে দেবে? সরকার? করপোরেট হাউসগুলো? সরকার আর আধা সরকারি সংস্থাগুলোর মোট পদের পরিমাণ নাকি পনের লক্ষ্য। একটি গ্রুপ গত ৫০ বছরে চাকরি দিয়েছে ৪৫ হাজার লোকের। আর সবচেয়ে বড় মোবাইল অপারেটরের কর্মী হলো পাঁচ হাজার। অথচ শেষ বিসিএসে দুই হাজার পদের জন্য আবেদন করেছে মাত্র দুই লাখ ২২ হাজার বেকার! আর প্রতিবছর আমাদের শ্রমবাজারে বা চাকরিবাজারে নতুন কর্মী যুক্ত হয় মাত্র ২০ লাখ নতুন কর্মী!!! তাহলে আমাদের উপায় কী। আমাদের উপায় হলো, আত্মকর্মসংস্থানের একটি সংস্কৃতি গড়ে তোলা। কাজটা সহজ হবে না, কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ কী!

এই সংস্কৃতি করার একটি উদ্যোগ হতে পারে, যারা নানা রকম চিন্তা করছে, তাদের একত্র হওয়ার একটা সুযোগ করে দেওয়া। যেমনটি করে সিলিকন ভ্যালিতে, স্টার্টআপ উইকএন্ড নামে একটি কর্মশালার মাধ্যমে। এটি এ বছর আমাদের দেশেও শুরু হয়েছে। রয়েছে আরও নানা আয়োজন।

তরুণদের আড্ডা
ছবি: সংগৃহীত

সংক্ষেপে ব্যাপারটা এ রকম—জনা পঞ্চাশেক (বেশিও হতে পারে) আইডিয়াবাজ, বিজনেসের লোক, প্রোগ্রামার, কারিগরি লোক এবং সঙ্গে মেন্টর, প্রভাবকেরা এক জায়গায় জড়ো হয়। তারপর আইডিয়াবাজরা তাদের আইডিয়া বলে। সংক্ষেপে। সেখান থেকে বাছাই করা কয়েকটা আইডিয়া নিয়ে গ্রুপে ভাগ হয়ে সবাই কাজ করে। কাজটা হলো, সেই আইডিয়াকে রাস্তায় নামাতে হলে কী কী করতে হবে তার একটি পরিকল্পনা দাঁড় করানো, কাগজে-কলমে। যেমন যে সার্ভিস বা পণ্য ভাবা হয়েছে, সেটি আসলে কোনো সমস্যাকে সমাধান করার চেষ্টা করবে, সেটি কি নতুন কোনো আইডিয়া না প্রচলিত কোনো সমস্যার নতুন সমাধান, নাকি প্রচলিত সমাধানই কিন্তু ভিন্ন আঙ্গিকে। এরপর ভাবতে হয় কারা এটার ক্লায়েন্ট। এটা জরুরি। এখানে জনস্বার্থবিষয়ক আলোচনাগুলো প্রাধান্য পায় না শুরুতে (আপনি বাঁচলে বাপের নাম)। তা টার্গেট গ্রুপকে আইডেন্টিফাই করতে পারলে তখন কীভাবে তাদের কাছে পৌঁছানো যাবে, সেটা ঠিক করা যায়। তারপর হলো রসদ, মানে কারিগরি, লোকবল আর টাকার হিসাব। ধারণা করতে হয় রেভিনিউ কেমন হবে। তা এসব ভেবেচিন্তে শেষমেশ একটি প্রেজেন্টেশন দিতে হয়। প্রেজেন্টেশন যে সফটওয়্যারে করতে হয় তা নয়, কাগজেও করা যায়। একদল বিচারক শেষে একটা স্কোর করে। তবে সেটা খুব একটা জরুরি নয়। মেন্টর/কোচ ওনারা থাকেন, যাতে চিন্তাগুলো এলোমেলো না হয়ে যায়। এ রকম একটা আয়োজনের জন্য দরকার বড় একটা রুম, ৫০ জন আগ্রহী। তাহলেই কিন্তু করে ফেলা যায়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আর সমাজের দায়িত্ব এখানে সুবিশাল। আমরা কেবল সফল গল্প খুঁজি। কিন্তু প্রতিটি সফল গল্প হওয়ার জন্য যে হাজার খানেক ‘সাকসেসফুলি ফেইলিউর’ কেস থাকা দরকার, সেটা বিশ্বাস করি না!

একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য এই ধারাটি আমাদের ভাঙতে হবে। আমাদের তরুণদের উদ্যমী, আত্মবিশ্বাসী এবং সফল হওয়ার জন্য তাদের বেশি বেশি সুযোগ দিতে হবে। তাদের অনেকে ব্যর্থ হবে, কিন্তু সুযোগ থাকলে তারা ঘুরে দাঁড়াবে। তাদের জন্য আমাদের এ কাজগুলো করতেই হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে তাদের শিক্ষার্থীরা নতুন চিন্তা করে, নতুন উদ্যম খুঁজে বেড়ায়। দৃষ্টান্ত তৈরির মতো বুয়েটের অধ্যাপক লুত্ফুল কবীর স্যারের প্রি-পেইড মিটারকে গবেষণাগার থেকে বাণিজ্যিক উত্পাদনে নিয়ে আসার যন্ত্রণা পোহাতে হবে। অন্যদিকে সমাজের বিত্তবান বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে নতুন নতুন ধারণাকে পৃষ্ঠপোষকতা দিতে। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও এই দিকে নজর দিতে হবে।

আর সরকার? সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কাজটা করবে, পথের বাধা সরিয়ে নেবে। যৌথ বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা দেবে, অভয় দেবে। দেশীয় উদ্যোগ যাতে বিদেশি জাত পণ্যের সঙ্গে লড়তে পারে তার ব্যবস্থা নেবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ইনকিউবেটর, উদ্যোক্তা পরিচর্চাকেন্দ্র গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

সবশেষে বলি। কাজ, নিজের কাজটা সর্বোত্তমভাবে করতে করতে প্রতিদিনের চ্যালেঞ্জের জন্য নিজেকে তৈরি করতে হবে। রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে ধার করে আমি মনে করিয়ে দেব, ‘তুমি কেরানির চেয়ে বড়ো, ডেপুটি-মুন্সেফের চেয়ে বড়ো, তুমি যাহা শিক্ষা করিতেছ তাহা হাউইয়ের মতো কোনোক্রমে ইস্কুলমাস্টারি পর্যন্ত উড়িয়া তাহার পর পেন্সনভোগী জরাজীর্ণতার মধ্যে ছাই হইয়া মাটিতে আসিয়া পড়িবার জন্য নহে, এই মন্ত্রটি জপ করিতে দেওয়ার শিক্ষাই আমাদের দেশে সকলের চেয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা, এই কথাটা আমাদের নিশিদিন মনে রাখিতে হইবে। এইটে বুঝিতে না পারার মূঢ়তাই আমাদের সকলের চেয়ে বড়ো মূঢ়তা। আমাদের সমাজে এ কথা আমাদিগকে বোঝায় না, আমাদের ইস্কুলেও এ শিক্ষা নাই।’

কাজে, নিজের শক্তির ওপর বিশ্বাস করো। চারপাশের সফল মানুষদের দেখো। তাঁরা তোমার-আমার মতোই দুইবেলা ভাত খাওয়ারই লোক। কাজ তাঁরা পারলে আমি পারব না কেন?

যখনই কোনো চ্যালেঞ্জের সামনে পড়বে, তখনই হেসে যেন বলতে পারো—

পারব না কেন, পারব।