পরিবেশবান্ধব সুন্দর একটি আগামীর বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি!

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

প্রাচ্যের সৌন্দর্যের রানি আমার শিকড় চট্টগ্রাম আজ দূষণের জাঁতাকলে পিষ্ট। প্রকৃতির হ্যাভেন সিটি চট্টগ্রাম এখন ধূসর নগর। প্রতিনিয়ত শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, বৃক্ষনিধন, পাহাড় কাটাকাটি থেমে নেই। যত্রতত্র ময়লা ফেলে পরিবেশদূষণ, সব মিলিয়ে চলছে দূষণের বৃষ্টি। শব্দদূষণ যে মানবদেহের নীরব-ঘাতক সেটি অনেকে বোঝে না। গাড়ি চালকদের নেই প্রশিক্ষণ, লক্কড়ঝক্কড় মুড়ির টিন নিয়ে পিচঢালা রাস্তায় তাঁরা চলেন তুফান বেগে। একটু যানজট হলে গাড়ির মালিক চিৎকার দিয়ে গাড়িচালককে বলেন, ‘হর্ন বাজাও জোরে।’ কে শোনে কার কথা। রাস্তায় হর্ন বাজানো থেকে বিরত নেই কেউ। শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই পাল্লা দিয়ে হর্ন বাজান। রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালানো থেমে নেই।

মানুষের ছোট জীবনটা আনন্দ-বিষাদে ভরা। গাড়িতে অনেক যাত্রী নিয়ে চালকের আসনে বসে চালকেরা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামেন। রাতে যখন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরি, মাঝেমধ্যে দেখি চালকেরা রাস্তায় গাড়ির রেস খেলায় মেতে ওঠেন। গাড়ি চালানো অবস্থায় মুঠোফোন কানে দিয়ে কথা চলে। কেউ কেউ আবার মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হন। রাতে তন্দ্রারত কিংবা অনেকে ড্রিংক করে মাতাল হয়ে গাড়ি চালান। আহা জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে মরণ খেলা খেলছেন তাঁরা, আহা মানুষের জীবন!

তলস্তয়ের থ্রি কোয়েশ্চনস শিরোনামের তিনটি প্রশ্ন ছিল, প্রথম প্রশ্ন—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ কে? দ্বিতীয় প্রশ্ন— সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কী? তৃতীয় প্রশ্ন—সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় কখন? প্রথম প্রশ্নের উত্তর—যিনি আপনার সামনে আছেন, দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর—মানুষের উপকার করা। তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর—এখনই। আইনকানুন মেনে সাবধানে গাড়ি চালানোই বুদ্ধিমানের কাজ। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি, সেটা আমরা ভুলে যাই।

শিশুদের হাতে মুঠোফোন নয়, বই তুলে দেব। আমরা বড় হয়ে যৌতুক নেব না, যৌতুক দেব না। যেখানে–সেখানে থুতু ফেলব না, হর্ন বাজাব না। শব্দদূষণ করা থেকে বিরত থাকব। বিপথগামী শিশুদের অন্ধকার জগৎ থেকে আলোর পথে আনব। চলন্ত ট্রেনে কেউ পাথর ছুড়ব না। বড়দের সম্মান করব, ছোটদের স্নেহ করব। শিশুদের আনন্দের সঙ্গে পাঠদান করব, শিশুদের জন্য পরিবেশবান্ধব বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ব, নিষ্পেষিত মানুষের প্রতি ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেব। আমরা কখনো দুর্নীতি করব না, কখনো ঘুষ দেব না, নেব না। দেশের জন্য কাজ করব। আমাদের শহরকে দূষণমুক্ত রাখি, গাছ লাগিয়ে সবুজায়ন গড়ি। আসুন, সচেতন হই, বদলে দিই পরিবেশ। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে স্বপ্ন দেখি দেশের ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি হাত একত্র করে সুন্দর একটি পরিবেশবান্ধব আগামীর বাংলাদেশ গড়ার।

লেখক: চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধু, লেখক ও প্রাবন্ধিক