নীলার ডায়েরি

প্রতীকী ছবি
বন্ধুসভা

নীলার ডায়েরি লেখার অভ্যাস ছিল প্রায় ক্লাস সিক্স থেকে। যদিও আমরা সমবয়সী ছিলাম। তবুও নীলার পরিপক্বতা সে সময় আমার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ছিল। নীলা ছিল আমাদের বান্ধবীদের সবার মধ্যমণি। ওর মতো চঞ্চল মেয়ে খুব একটা দেখা যেত না। বয়ঃসন্ধি কালের সব ব্যাপারে ওর জানাশোনা আমাদের সবার চেয়ে ঢের বেশি। যদিও এখন বুঝতে পারি ও আমাদের যা বলত, তার বেশির ভাগ তথ্যই ভুল ছিল। সেই সময় কেবল নীলাই ফেসবুক চালাত। যা আমাদের কাছে প্রবল আগ্রহের জায়গা ছিল। প্রেমবিষয়ক জটিলতাও ভালোই জানত। সেই সব মিলিয়ে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী আমরা নীলাকেই মানতাম।

সে যা হোক, একদিন সেই চঞ্চল নীলা সত্যি সত্যি প্রেমে পড়ল আমাদেরই ক্লাসের এক ছেলের ওপর। ছেলেটির নাম মিরাজ। আমাদের সবাইকে ডেকে বলল তার প্রেমে পড়ার কথা। আমরাও খুব কৌতূহলী হলাম। আমাদের মধ্যে প্রথম প্রেমে পড়ার ঘটনা ঘটল বলে কথা। ওই যে বললাম, নীলার ডায়েরি লেখার অভ্যাস তখন থেকেই বেশি বেড়ে গেল। প্রতিদিন মিরাজ সম্পর্কে বিভিন্ন কিছু লিখে রাখত। এই যেমন আজ ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় ওকে দেখেছি, ছুটির সময় দরজায় ধাক্কা লেগে যাচ্ছিল প্রায়, বিজ্ঞান ক্লাসে একবার চোখাচোখি হয়েছিল ওর সঙ্গে, আজকে ও হাসছিল জোরে জোরে। এসব ছোটখাটো বিষয় ও লিখে রাখত আর আমাদেরকেও দেখাত।

এভাবে অনেক দিন কেটে গেল। আমরাও প্রায় রোজ ওর ডায়রি পড়ায় আর ওর রোজকার গল্প শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। হয়তো আমাদের আগ্রহের কারণেই ও আরও বেশি লেখার অনুপ্রেরণা পেত। তখন মনে হতো প্রেমে পড়লে বুঝি এমনই হয়।

একদিন বাংলা ক্লাস চলছে, স্যার পড়া বোঝাচ্ছেন। আমরা সবাই চুপচাপ শুনছি। শুনছে না শুধু নীলা। কি যেন লিখছিল ডায়েরিতে। স্যার বোধ হয় লক্ষ করছিলেন সেটা। আস্তে এসে ওর হাত থেকে ডায়েরিটা নিয়ে চলে গেলেন। আমরা সবাই চিন্তায় পড়ে গেলাম। সারা দিন স্যার আর ডায়েরিটা দিল না।

পরদিন স্যার ডাকল নীলাকে। বলল, তোমার এই ডায়েরি কি আমি প্রিন্সিপাল স্যারকে দেব নাকি তোমার অভিভাবক ডাকব? সেকি ভয় নীলার! সাথে আমাদেরও!

স্যার আর কখনো দেননি সেই ডায়েরি, আর কাউকে জানায়ওনি। শুধু শর্ত দিয়েছিল, যাতে আর কখনো এমন না হয়।

সত্যি আর কখনো এমন হয়নি। নীলার সেই প্রেম সেই ডায়েরির সাথেই সমাপ্ত হয়েছিল। সাথে সমাপ্ত হয়েছিল সেই সময় আমাদের বান্ধবীদের প্রেমে পড়ার সম্ভাবনাও।

তানজিলা জাহান: নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধুসভা