তিতুনের ফোকলা দাঁত

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

তিতুনের কান্না দেখে কে! ডান হাতের তালুতে দাঁতটা নিয়ে সে কী কান্না! সামনের পাটির ঠিক মাঝখান থেকে তার একটা দাঁত পড়ে গেল। কোনো কথাবার্তা নেই। নোটিশ ছাড়াই টপাস করে দাঁতটা পড়ে গেল। এখন কী হবে তিতুনের?

বাড়ির পাশের এক প্রাইমারি স্কুলে পড়ে তিতুন, ক্লাস টুতে। তার বন্ধুরা খুব বিচ্ছু টাইপের। একবার কারও পেছনে লাগলে সহজে ছাড়ে না। অনেকটা ছিনেজোঁকের মতো। কী যে বিচ্ছিরি ব্যাপার, একদম মুখের সামনের দাঁতটাই পড়ে গেল! কেমন অদ্ভুত দেখাচ্ছে। তিতুন আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দাঁতের শূন্যস্থানটা দেখে সে আরও জোরে কাঁদতে থাকে। তিতুন তাঁর দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কাঁদছে। এখন সে কীভাবে স্কুলে যাবে? বন্ধুরা দেখলে তাকে কী বলবে?

তিতুনের কান্না শুনে দৌড়ে আসেন তার বাবা, পাশে বসেন। চকলেট, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া, খেলনা কিনে দেওয়াসহ এটা–সেটা বলেও কান্না থামাতে পারছে না কেউ। হঠাৎ তিতুনের বাবা বুদ্ধি করে বলেন, ‘তিতুন সোনা, তুমি তো খুবই ভাগ্যবতী।’ তিতুন এবার কান্নায় কিছুটা ব্রেক কষে। অবাক হয়ে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বাকি কথাটুকু শুনতে চাচ্ছে। বাবা আবার বলতে শুরু করেন, ‘জান তিতুন, যদি তোমার পড়ে যাওয়া দাঁতটা ইঁদুরকে দিয়ে দাও, তাহলে ইঁদুরও বিনিময়ে তার একটা চকচকে সাদা দাঁত তোমাকে দেবে। তুমি কি ঝকঝকে সাদা দাঁত পেতে চাও?’
তিতুন কান্না থামিয়ে মাথা ঝুঁকে বলে, ‘হুঁ।’
বাবা বলেন, ‘তোমাকে কান্না থামাতেই হবে। নয়তো কান্না শুনে ইঁদুর ভয়ে দৌড়ে পালাবে। তখন তোমার আর দাঁত উঠবে না। বন্ধুরা তখন ভেংচি কাটবে!’ এবার তিতুন পুরোপুরি কান্না থামায়। বাবা একটা টিস্যু এগিয়ে দেন। তিতুন তার দাঁতটা টিস্যুতে মুড়িয়ে রাখে। বাবা তাকে বিছানায় শুইয়ে দেন। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছেন। টিস্যুসহ দাঁতটা তিনি তিতুনের বালিশের নিচে রাখেন।
তিতুনের বাবা বলেন, ‘তুমি ঘুমিয়ে গেলে রাতে চুপিচুপি সেই ইঁদুরটা এসে তোমার দাঁতটা নিয়ে যাবে। দেখ, তোমার তখন সাদা ঝকঝকে একটা দাঁত গজাবে। দাঁতটা হবে ইঁদুরের দাঁতের মতো ধারাল। আর ইঁদুর যদি বালিশের নিচ থেকে দাঁতটা না নেয়, তোমার এই দাঁত আর উঠবে না।’

তিতুন খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠে। বালিশের নিচে দাঁতটা খুঁজতে থাকে। কিন্তু দাঁতটা সে পাচ্ছে না। সেখানে শুধু টিস্যু আছে। তিতুন বুঝতে পারে দাঁতটা ইঁদুরের পছন্দ হয়েছে। সে এখন মহাখুশি। দৌড়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দেখে, পড়ে যাওয়া দাঁতের জায়গায় একটা নতুন দাঁত গজাচ্ছে। সাদা ঝকঝকে। নতুন দাঁতটা দেখেই তিতুন সারা বাড়ি মাথায় তুলেছে। বারবার আয়নার সামনে গিয়ে ফোকলা দাঁতে হাসছে। খুশিতে সে বাকবাকুম করছে। প্রজাপতির মতো উড়ছে। তিতুনের এমন কাণ্ড দেখে বাবা মুখ টিপে টিপে হাসছেন।

লেখকের ঠিকানা: মাধবপুর, হবিগঞ্জ