ছেলেবেলার পূজার সেই দিনগুলো

প্রতীকী ছবি
প্রথম আলো

ছোট নদী উজলার কোলঘেঁষা গ্রাম আমার দীর্ঘা। জন্ম থেকে এখানেই বেড়ে ওঠা। গ্রামের বেশ কয়েকটি মন্দিরে দুর্গাপূজা হতো। পূজা শুরুর অনেক আগে থেকেই পালেরা (প্রতিমাশিল্পী) খড়-মাটি দিয়ে মূর্তি গড়ার কাজ শুরু করতেন। প্রতিমা দেখার আকুল আগ্রহে তখন আর তর সইত না স্কুল কখন ছুটি হয়। দল বেঁধে বন্ধুদের নিয়ে কতবার যে প্রতিমা দেখতে যেতাম, তার হিসেব কে রেখেছে। কখনোবা বাড়িতে এসে খড়-মাটি নিয়ে চেষ্টা করতাম প্রতিমা গড়ার। পালদের সুনিপুণ তুলির আঁচড়ে একসময় মনে হতো মাটির মূর্তি জীবন্ত হয়ে উঠছে। প্রতিমা গড়ার সময় থেকেই শুরু হয়ে যেত পূজার আনন্দ।

মহালয়ার দিন ভোরে সুমিষ্ট কণ্ঠে চণ্ডীপাঠের আওয়াজ কানে আসতেই ঘুম ভেঙে যেত। পূজার সময় প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়স্বজনের আগমনে গ্রাম হতো মুখরিত। ষষ্ঠী থেকে নবমী—প্রতিটি মন্দিরে মাইকে পুরোহিতের চণ্ডীপাঠ, সন্ধ্যায় সন্ধ্যারতি, ঢাকের তালে ধূপারতি প্রতিযোগিতা, ধর্মীয় গান, নৃত্যানুষ্ঠান—আরও কত কি। এই অনুষ্ঠান দেখার জন্য প্রতিটি মন্দিরে বহু মানুষের ভিড় জমত। নতুন জামা-কাপড় পরে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে আমরাও প্রতিটি মন্দিরে কাঁচা রাস্তা দিয়ে হেঁটেই যেতাম প্রতিমা দেখতে। কতটি প্রতিমা দেখেছি, কোন প্রতিমা কেমন হয়েছে, তা নিয়ে হতো আলোচনা।

অষ্টমী-নবমীর দিন মন্দিরে প্রসাদ বিতরণ করা হতো। ঘরে ঘরে নারকেলের নাড়ু, চিড়া-মুড়ি, নকুল-বাতাসা দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো অতিথিদের। দশমীতে কান্নাকাটির মধ্য দিয়ে হতো দেবীর বিসর্জন। সবাই মেতে উঠত বিজয়ার উৎসবে। সম্মিলন ঘটত ধর্মবর্ণ–নির্বিশেষে সব মানুষের।

বিজয়া দশমীর বিকেলবেলা দীর্ঘা বাজার সর্বজনীন দুর্গামন্দিরের সামনে বসত দশহরার মেলা। অসংখ্য মানুষের ভিড় জমত এই মেলায়। ভিড়ের মধ্যে কখনোবা হারিয়েও যেতাম। মেলা উপলক্ষে নৌকাবাইচের আয়োজন হতো। মেলা থেকে মিষ্টি আর মাছ নিয়ে যাওয়া হতো বাড়িতে। সন্ধ্যায় বড়দের প্রণাম করে আশীর্বাদ নিতাম। ছেলেবেলার পূজার সেই দিনগুলো আজও ভোলার নয়। পূজা এলেই সেই স্মৃতি মনে পড়ে যায়।

পিরোজপুর বন্ধুসভা