১৭ বছর পর আমাকে আবার তার মুখোমুখি হতে হবে—এটা কল্পনাও করিনি কোনো দিন। প্রকৃতি বড্ড খেয়ালি। ওয়েটিং রুমে বসে নাকমুখ ডুবিয়ে আমি বই পড়ছি। তার শরীরের ঘ্রাণ আমার ধ্যান ভাঙাল। একপলক দেখার পর হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে দ্রুত। আমি দেখেও না দেখার ভান করে বইয়ের পাতায় বুঁদ হয়ে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর সে নিজেই কয়েক পা এগিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়াল।
- আমাকে চিনতে পেরেছ?
- না তো (তার দিকে আলতো করে চোখজোড়া তুলে তাকিয়ে বললাম)।
- কী বলছ! আমাকে চিনছ না!
- না, আপনাকে আমি চিনতে পারছি না।
- তুমি ভালো করে চোখ তুলে একবার আমার দিকে তাকাও। দেখো—আমি চারুলতা। তোমার সেই চারু। চিনতে পারছ?
- একবার তো আপনাকে বললামই, আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। অহেতুক বিরক্ত করছেন কেন? আর আপনাকে চেনা কি আমার খুব জরুরি?
- নাহ, সরি। আ’ম এক্সট্রিমলি সরি। জরুরি হবে কেন? না মানে তুমি একসময় আমার জন্য খুব পাগল ছিলে। তুমি রোজ আমার স্কুল গেটে এসে দাঁড়িয়ে থাকতে। বিকেল হলেই শহরতলির আমাদের সেই দো-বাড়ির জানালার দিকে জিরাফের মতো মুখ বাড়িয়ে রাখতে। আমাকে একপলক দেখার জন্য ভীষণ ছটফট করতে। সেই দিনগুলোর কথা সত্যিই তোমার মনে নেই?
- কই? না তো! মনে পড়ছে না তো!
- ওহ। দেখুন তো—আমি কী রকম বোকা! একজনের সঙ্গে আরেকজনকে কেমন গুলিয়ে ফেলেছি! ১৭ বছর পর কি আর সেই মানুষটা একই রকম থাকে? বদলে যাবে; এটাই তো স্বাভাবিক। আপনাকে বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখিত!
কথাগুলো বলতে বলতে সে হাওয়ার বেগে চলে গেল। উল্টো পথে, আমিও হেঁটে যাচ্ছি তার ঠিক বিপরীত দিকে। উত্তর আর দক্ষিণ কখনো এক হয়? বিপরীতমুখী গতির গন্তব্য কখনো একই বিন্দু হয় না। তাহলে আমরা কেমন করে আজ এক হব? ১৭ বছর আগে কমলা রঙের এক বিকেলে বিপরীতমুখী ট্রেনে চেপে আমরা দুজন চলে গেছি বিপরীত দিকে। সেই থেকে আমাদের পথ ভিন্ন। যে যার গন্তব্যে ছুটছি। দূর! কেন যে চোখে জল আসে!