ঘুড়ি

ঘুড়িছবি: দানিশ সিদ্দিকি

আজ রুমেল খুব খুশি। আজ স্কুল বন্ধ। বাবার সঙ্গে বৈশাখী মেলায় যাবে। সে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। বাড়ি থেকে রিকশায় মেলায় যেতে আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগে। অটোরিকশায় আরও কম। তিন বছর আগে একবার খেলতে গিয়েছিল। তখন সে খুব ছোট ছিল। দুই বছর ধরে করোনার জন্য সব বন্ধ ছিল। এখন কোনো লকডাউন নেই। এখন যেখানে খুশি, বেড়ানো যায়। এখন পবিত্র রোজার মাস। মেলায় যাওয়ার জন্য আজ রোজা রাখেনি রুমেল।

এখন বিকেল, তারপরও প্রচণ্ড রোদ। বৈশাখের আজ প্রথম দিন। আকাশে কোথাও কোনো মেঘের চিহ্ন নেই। চারদিক শুষ্ক হয়ে আছে। বৃষ্টির জন্য খেত চাষ করতে পারছে না কৃষক। মাঠ–ঘাট খাঁ খাঁ করছে। এসব দেখতে দেখতে রুমেল বাবার সঙ্গে অটোরিকশা করে মেলার কাছে চলে আসে। দূর থেকে মানুষের কলরব কানে আসে। গাড়ি থেকে নেমে মেলার মধ্যে ঢুকে বাবার হাত ধরে। প্রচণ্ড ভিড়, মানুষের জন্য সামনে যাওয়া কঠিন। তারপরও বাবার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যায়। কত রকমের দোকান বসেছে মেলায়। চুড়ি, ফিতা সাজগোজের বিভিন্ন প্রসাধনী। এসব দোকানে মেয়েদের খুব ভিড়। অন্য জায়গায় দেখতে পায় বিভিন্ন শস্য বিক্রি হচ্ছে। একটু সামনে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে মাটির তৈরি জিনিসপত্র। পাশেই নাগরদোলার ক্যাঁচর ক্যাঁচর আওয়াজ। বাবা নাগরদোলায় ওঠালেন। এই প্রথম রুমেল নাগরদোলায় চড়ে। অন্য রকম অনুভূতি লাগল তার। মেলায় ঘুরে ঘুরে নিজের জন্য আর ছোট বোনের জন্য বিভিন্ন ধরনের খেলনা কিনে দিলেন বাবা। মিষ্টির দোকান থেকে জিলাপি আর মিষ্টি কিনল। ধুলা আর ঘামে জামা ভিজে একাকার।
বিকেল হয়ে আসে। বাবা রোজা রেখেছেন। বাড়ি ফিরতে হবে।

এক জায়গায় বিভিন্ন রঙের ঘুড়ি বিক্রি করছে। রুমেল বলল, বাবা আমাকে একটি নীল রঙের ঘুড়ি কিনে দাও।
বাবা বলেন, তুমি তো ঘুড়ি ওড়াতে জানো না?
রুমেল বলে, তুমি শিখিয়ে দেবে।
বাবা বলেন, তাহলে তোমাকে ঘুড়ি, সুতা আর লাটাই কিনে দিই, চলো।
রুমেল মহাখুশি।
বাবা বলেন, স্কুল বন্ধ আছে কালকে তোমাকে ঘুড়ি ওড়ানো শেখাব।
রুমেল আনন্দে বাবার হাত ধরে বাড়ি ফিরতে থাকে।