‘ঘরো খাওন নাই, আতো টেহাও নাই, না বাইরাইলে খামু কী’

ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক কালু মিয়া
ছবি: প্রথম আলো

চাকা ঘুরলেই টাকা আসে। ঘরে চুলা জ্বলে। চাকা বন্ধ হলেই সংসারে দেখা দেয় অভাব-অনটন। তখন জীবন চালানো দায়। দীর্ঘদিন ধরে এই চাকা বন্ধ থাকার কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন ভোলা জেলার পরিবহন শ্রমিকেরা। দিন আনে দিন খান বলে এক দিন রোজগার না করলে পরদিন উপোস অথবা আধপেটা খেয়ে চলে তাঁদের দিন।
চলমান লকডাউনে পরিবহন শ্রমিকেরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় তাঁদের খোঁজ রাখেননি কেউ। না পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা, না পেয়েছে সরকারি-বেসরকারি সাহায্য-সহযোগিতা। খেয়ে না-খেয়ে ও ধারদেনায় ডুবে পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনোমতে চলছে তাঁদের জীবন।
৬ জুলাই দুপুরে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল বাসস্ট্যান্ডসহ ভোলার বিভিন্ন পয়েন্টে কথা হয় পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে। তাঁরা জানালেন তাঁদের কষ্টমাখা জীবনের কথা। সেই সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ সহায়তা চেয়েছেন তাঁরা।
কানাইনগর গ্রামের বাসিন্দা ভাড়ায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক কালু মিয়া (৬৩) বলেন, ‘ঘরো খাওন নাই। আতো (হাতে) টেহাও নাই। না বাইরাইলে খামু কী? আবার বারাইলেও বিফৎ। মোড়ে মোড়ে পুলিশে ধরে।’

মো. ইসমাইল (৩০) ভোলা সদর উপজেলার চরসেমাইয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। শরবত বিক্রি করে তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই সন্তানের পরিবার চালান। লকডাউনের প্রথম দিন ভালো কাটলেও পরে দিনগুলো চলছে ধারদেনা করে। কঠোর লকডাউনের মধ্যে অনেকটা বাধ্য হয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন শরবত বিক্রি করতে। কিন্তু নেই কোনো ক্রেতার দেখা। বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন মাত্র ৩০ টাকা।
জামাল মিয়ার (৪০) গল্পটাও একই রকম। পেটের তাগিদে জীবিকা নির্বাহের জন্য রাজধানী ঢাকা পাড়ি দেন। করোনার প্রথম ধাপে রাজধানীতে কাজ না থাকায় উপায় না পেয়ে আবার গ্রামের বাড়ি ভোলায় ফিরে আসেন। এখন তাঁর কাছে ভ্রাম্যমাণ এই মাছের ছোট্ট দোকানই একমাত্র ভরসা। তাই ছোট ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সদর রোডে এসেছেন মাছ বিক্রি করতে। কিন্তু খরিদ্দার মিলছে না।
শিবপুর শান্তির হাট এলাকার বাসিন্দা মাসুদ মিয়া (৪২) সর্বাত্মক লকডাউনের বিধিনিষেধ জানলেও এটাও জানেন, ঘরে বসে থাকলে পেট চলবে না। প্রশাসন বাধা দিলেও তাঁর দোকান বন্ধ রাখার উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে রাজপথে তিনি।
মো. মনির (৩২) কঠোর লকডাউন জেনেও রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। আগে দৈনিক ১০০০ টাকা রোজগার করতেন, এখন লকডাউনের কারণে ২০০ টাকা রোজগার করতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর। তাই মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।
এঁদের মতো কয়েক হাজার মানুষ আছে দ্বীপজেলা ভোলায়, যাঁদের সংসার চলে প্রতিদিনের উপার্জনে। কঠোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও যাঁরা পেট চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

সাংগঠনিক সম্পাদক, ভোলা প্রথম আলো বন্ধুসভা।