গোয়েন্দা টিম ও তুলির টাকা উদ্ধার

গোয়েন্দা টিম ও তুলির টাকা উদ্ধারঅলংকরণ: তুলি

নবম শ্রেণির মেয়েদের কমনরুম থেকে টাকা হারিয়েছে। পাঁচশত টাকা। টাকাটা তুলির। তুলির ব্যাগেই টাকাটা ছিল। তুলির ছোট মামা স্কুলব্যাগ কেনার জন্য টাকাটা দিয়েছে। টাকা হারানোয় তুলি কান্নাকাটি করছে। অঝোরে কাঁদছে। সময় যত গড়াচ্ছে, কান্নাও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তুলি এখন কীভাবে ব্যাগটি কিনবে, সেই কথা ভেবে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এক এক করে স্কুলের সবার কানে পৌঁছে গেল খবরটি। এমনকি স্কুলের হেডস্যারের কানেও গেল।
নবম শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষক উমেশ বাবুকে টাকা উদ্ধারের তদন্তভার দেওয়া হলো। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রনি, জনি, টনি, রুমি এবং উমেশ বাবু নিজে দলনেতা হয়ে গোয়েন্দা টিম গঠন করলেন। প্রথমে নবম শ্রেণির সব মেয়ের ব্যাগ তল্লাশির দায়িত্ব পড়ল রুমির ওপর। আর রনি, জনি, টনি এ কাজে সহায়তা করল। কিন্তু কারও ব্যাগে টাকা পাওয়া গেল না। তবে প্রাথমিকভাবে সন্দেহভাজন পাঁচজনের নাম লেখা হলো। যারা অঙ্ক ক্লাস না করে কমনরুমেই ছিল। তবে ক্লাসের কেউ সন্দেহের বাইরে নয়। সবাইকে স্কুল ছুটির আগে স্কুল থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলো। তুলি জানাল, তার টাকায় বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে আর টাকার এক কোনায় মাংস খাওয়ার ঝোল লেগে আছে। ঝোল লেগে হলুদ রং হয়ে আছে। জনি বলল, বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যাপার না। এটা সব ৫০০ টাকার নোটে থাকে। তবে মাংস খাওয়ার ঝোলে হলুদ রঙের দাগ একটা ব্যাপার। টাকা তো আমরা উদ্ধার করে ছাড়বই।
সন্দেহভাজন পাঁচজন হলো তনিমা, মিতালি, ছমিরন, আশা ও জবা। এরাই ক্লাস ফাঁকি দিয়েছিল।

এক এক করে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। সবাই অস্বীকার করল। তবে জবার ব্যাগে পাঁচশত টাকা পাওয়া গেল।
এই টাকায়ও বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে এবং টাকায় ঝোল লাগা হলুদ দাগও আছে। জবাকেই সবাই চোর হিসেবে সাব্যস্ত করছে। জবা অস্বীকার করছে, ‘আমি চুরি করিনি। এই টাকা আমার বাবা দিয়েছে স্কুলের পাওনা পরিশোধ করার জন্য।’
তুলি বলল, ‘এই টাকাই আমার। বিশ্বাস করেন, এই টাকাই আমার মামা দিয়েছে। আর খাবার সময় মাংসের ঝোল লেগেছে।’
তদন্ত কমিটির সদস্যরা দলনেতা উমেশ বাবুকে তদন্ত রিপোর্ট দিল। উমেশ বাবু জবার বাবাকে কল করলেন।
জবার বাবা স্কুলে উপস্থিত হলেন। উমেশ বাবু বললেন, ‘চোর মেয়েকে স্কুলে পাঠিয়েছেন কেন? আপনার মেয়ে তুলির পাঁচশত টাকা চুরি করেছে।’ জবার বাবা বললেন, ‘আমার মেয়েকে এমন করে মানুষ করিনি যে চুরি করবে। কোথাও ভুল হচ্ছে কি না, একটু ভেবে দেখুন।’ উমেশ বাবু বললেন, ‘না, কোনো ভুল নেই। তুলির টাকায় মাংসের ঝোল লাগা হলুদ দাগ ছিল, এই টাকায়ও হলুদ দাগ আছে। এভাবে তো আর মিলে যেতে পারে না।’ জবার বাবা বললেন, ‘আমার মেয়ে টাকা চুরি করতে পারে, আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আর ওই যে হলুদ লাগা টাকাটা আমি নবীন স্যারকে দেওয়ার জন্য দিয়েছি। উনি দুই মাসের কোচিং ফি পাবেন, তা পরিশোধ করার জন্য।’ দলনেতা উমেশ বাবু এমন কথা বিশ্বাস করতে পারলেন না।

জবার বাবা নানাভাবে বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করেও বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। ইতিমধ্যে জনি বলল, ‘স্যার এই যে সোহানেরও তৃতীয় পিরিয়ডে ক্লাসে ছিল না। ওর হাতে আবার নতুন ঘড়ি। যার দাম পাঁচ–ছয় শ হবেই। ও অত টাকা পেল কই? ক্লাসেরই বেতন দিতে পারে না, আবার ঘড়ি কিনবে পাঁচ শ টাকা দিয়ে! আমি অবাক হচ্ছি। ওকে জিজ্ঞাসা করলেই বেরিয়ে যাবে কে টাকা নিয়েছে?’ জবার বাবা বললেন, ‘স্যার এই ছেলেই আমার দোকান থেকে কয়েক ঘণ্টা আগে ঘড়িটি কিনেছে। আর ওই টাকাটা দিয়েছে।’
উমেশ বাবু চোখ রগড়ে বললেন, ‘ঘটনা সত্যি সোহান?’ সোহান কোনো কথা বলে না। বারবার জিজ্ঞাসা করলেও কথা বলে না। অবশেষে বেত নিয়ে মার দিতে চাইলে সোহান বলল, ‘স্যার, ওই টাকা আমিই দিয়েছি জবার বাবাকে ঘড়ি কেনার জন্য। কিন্তু টাকা আমি চুরি করিনি।’

উমেশ বাবু বললেন, ‘তুমি কোথায় পেয়েছ?’ উমেশ বাবু বারবার জিজ্ঞেস করলেও সোহান উত্তর দিচ্ছে না। উমেশ বাবু রাগ ধরে রাখতে না পেরে পিঠে কয়েক ঘা দিতেই কাঁদতে কাঁদতে সোহান বলল, ‘স্যার, আমাকে শিল্পী দিয়েছে।’ আবারও ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন উমেশ বাবু, ‘কী বললে?’
সোহান বলল, শিল্পী দিয়েছে।
শিল্পী উমেশ বাবুর কন্যা। নবম শ্রেণিতে পড়ে। কয়েক দিন ধরে সোহানের সাথে মনের আদান–প্রদান চলছে। তা তো আর উমেশ বাবুর জানার কথা নয়।
স্যার শিল্পীই দিয়েছে স্যার। আমি তো জানতাম না, তুলির টাকা চুরি করে দিয়েছে। শিল্পী যে এত বড় চোর, আমার জানা ছিল না। তাহলে আমি এই টাকা নিতাম না।
এবার উমেশ বাবুর চোখেমুখে লজ্জার ছাপ পুরোপুরি অনুমান করা যাচ্ছে।
শিল্পীকে স্কুলের কোথাও দেখা গেল না।
জবার বাবা বললেন, ঘড়ি কেনার সময় শিল্পীও সোহানের সঙ্গে ছিল। উমেশ বাবু জবার বাবার কাছে মাফ চেয়ে নিলেন। আর পকেট থেকে পাঁচ শ টাকার একটা নোট তুলিকে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘মা গো কেঁদো না। ক্লাসে যাও। সবাই মিলে ক্লাসে যাও। শিল্পীকে দেখব কাল,’ বলে হেডস্যারের রুমে ঢুকলেন।