গাছ রোপণ আমার নেশা

গাছ রোপণ আমার নেশাছবি: বন্ধুসভা

ছোটবেলা থেকে গাছ রোপণ করতে আমার খুব ভালো লাগে। অনুপ্রেরণা দেন আমার মা–বাবা।
আমার গ্রামের নাম দীঘা, থানা শার্শা, জেলা যশোর। বাবা পণ্ডিত সরকার, মা রেনুকা সরকার। আমি যশোর সরকারি এম এম কলেজ থেকে রসায়নে অনার্স শেষ করে চাকরিপ্রত্যাশী।
আমি গাছের সঙ্গে কথা বলি। তাদের ভাষা বুঝতে পারি। আমার গাছ রোপণের সূচনা চতুর্থ শ্রেণি থেকে। সেই সময় যেসব গাছ রোপণ করেছিলাম, তা এখনো আছে।
আমাদের জমি নেই বললেই চলে, সে জন্য সরকারি রাস্তার ধারে গাছ রোপণের সিদ্ধান্ত নিই। আমি ২০১৮ সালের দিকে অনেক গাছ রোপণ করি।

যশোরের যশ খেজুরের রস। সেই খেজুরগাছ হারিয়ে যাচ্ছে। আমি খেজুরগাছ সংরক্ষণ করতে ২০১৯ সালে বাগআচড়া–কায়বা চালিতাবাড়ীয়া রোডে ১০১৩টা খেজুরগাছের চারা রোপণ করি।
এ জন্য প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমাকে সেরা বন্ধু ২০১৯ ঘোষণা করে ক্রেস্ট দেয়। আমি যশোর বন্ধুসভাতে ২০১৪ সালে যুক্ত হই।
২০১৯ সালে সাধারণ সম্পাদক পদে থাকা অবস্থায় সেরাবন্ধু ২০১৯ নির্বাচিত হই। করোনার মহামারিতে নিজ এলাকায় জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে জীবাণুনাশক স্প্রে করতাম, আর খেজুরের বীজ সংগ্রহ করতাম।

গাছ রোপণ আমার নেশা
ছবি: বন্ধুসভা

১৪ মে ২০২০ থেকে ২৩ মে ২০২০ পর্যন্ত আমি ৫০ হাজার খেজুরের বীজসহ ১ হাজার ৫৪০টি সেগুন ও নিমের বীজ বপন করি কায়বা ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তার ধারে। আমি করোনার বিধিনিষেধ শেষে শহরে ফেরার আগে যেসব রাস্তার ধারে বীজ বপন করেছিলাম, তার কিছু রাস্তায় খেজুরের চারা গণনা করে দেখি ওই রাস্তাগুলোতে প্রায় ৮ হাজার ২৫৩টি চারা বের হয়েছিল।
৩ আগস্ট ২০২০ থেকে ২৮ আগস্ট ২০২০ বিভিন্ন রাস্তার ধারে ১ হাজার ৭০৭টা দেবদারুগাছ রোপণ করি। উদ্বোধন করেন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ মো. মিজানুর রহমান।
অনেক দিন পর পর এলাকায় ফিরি সেজন্য শহরে গাছ রোপণের সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমি অল্প অল্প করে টিউশনির টাকা জমিয়ে গাছের চারা কিনলাম। ২৯ আগষ্ট ২০২১ যশোর আশ্রম রোড থেকে চৌরাস্তা পর্যন্ত ৮৩টি বিভিন্ন ফুল ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছের চারা রোপণ করি ও পরিচর্যা করতে থাকি। এরপর যশোর এম এম কলেজ, যশোর সরকারি গণগ্রন্থাগার, যশোর চাচড়া, ঘোপসহ বিভিন্ন জায়গায় গাছ রোপণ করতে থাকি। আমার বর্তমান রোপণ করা গাছের সংখ্যা ১২ হাজার ৫০টি।

শিশুদের বৃক্ষরোপণে উৎসাহিত করতে সম্প্রতি যশোরের বেজপাড়ার প্রভাতি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধে৵ ৪৭টি এবং যশোর নাজির শংকরপুরে ফাতেমাতুজ্জহরা ক্যাডেট  মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধে৵ ফুল ও ফলের ৩৪টি গাছ বিতরণ করেছি।
সামনে আরও কয়েকটা স্কুলের শিশুদের মধে৵ গাছ বিতরণ করব, যোগাযোগ করেছি।
আমি গাছের চারা তৈরি করা যেমন কাটিং, কলম বসানো, কলম বাঁধা সবই পারি।
এখন আমার ছোটখাটো একটি নার্সারি আছে, কেউ গাছ চাইলে যেখান থেকে তাঁকে উপহার দিই।
আমার ফেসবুকের বন্ধুরা বা পরিচিত যে কেউ আমার কাছে গাছ চাইলে তাদের কাছে সাইকেলে করে গাছ পৌঁছে দিয়ে আসি।

এ জন্য কেউ কেউ আমাকে গাছের ফেরিওয়ালা, বৃক্ষবন্ধুও বলে থাকে। আমি বন বিভাগে চাকরি করতে চাই।
আমি রাতে টিউশনি শেষ করে আমার রোপণ করা গাছগুলোর পরিচর্যা করি। আমি অনুভব করি, গাছগুলো আমাকে দেখে হাসে, তখন আমার ভালো লাগে।
আমি বাংলাদেশকে ফুলে ফলে ভরিয়ে দিতে চাই।
করোনা মহামারিতে পৃথিবী বুঝতে পেরেছে অক্সিজেন আমাদের কতটা প্রয়োজন।
মানুষ সব বুঝেও বিনা কারণে অবাধে গাছ কাটে। গাছে পেরেক ঠুকে পোস্টার মারে। আমি গাছের কান্না শুনতে পাই।
এমন চলতে থাকলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়তে বাড়তে আমরা একদিন সমুদ্রের গর্ভে হারিয়ে যাব।
আগামীর শিশু যেন বুক ভরে বিশুদ্ধ নিশ্বাস নিতে পারে, সেই প্রত্যয়ে আমার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
আমি স্বপ্ন দেখি অন্য রকম বাংলাদেশের।